মহাগ্রন্থ আল কোরআনের অসাধারণ কিছু মোজেযা
কোরআন শরীফে উনিশ সংখ্যাটির মাজেজা
মিসরের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. রশীদ খলীফা কোরআন নিয়ে এক ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি প্রাথমিকভাবে কোরআনের প্রতিটি অক্ষর যেভাবে কোরআনে সন্নিবেশিত আছে সেভাবেই তাকে কম্পিউটারে বিন্যস্ত করেন। কোরআনে 114 টি সূরার অবস্থান এবং 29 টি সূরা শুরুতে ব্যবহৃত ‘হরুফে মোকাত্তায়াত’ যে নিয়মে বিন্যস্ত আছে সে নিয়মের ভিত্তিতে তিনি হিসাব করতে শুরু করেন। এতে করে কোরআনের কিছু অলৌকিক তত্ত্ব তাঁর কম্পিউটার স্ক্রীনে ভেসে ওঠে। এ অলৌকিক তত্ত্বের একটি হচ্ছে এই যে, সমস্ত কোরআন গণিতের এক রহস্যময় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে। কোরআনের সর্বত্র একটি অভিনব ও বিস্ময়কর গাণিতিক সংখ্যার জাল বোনা রয়েছে। সমগ্র কোরআন যেন 19 সংখ্যাটির একটি সুদৃঢ় বন্ধন।
এই সংখ্যাটির মাধ্যমে গ্রন্থটিকে এমন এক গাণিতিক ফর্মূলায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে যেন এতে ব্যবহৃত বর্ণমালা, শব্দ ও আয়াতসমূহের কোথাও কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজন করা কারো পক্ষে সম্ভব না হয়। এই ফর্মূলাটি তৈরি হয়েছে 19 সংখ্যাটির গাণিতিক অবস্থান দিয়ে।
কোরআন শরীফের প্রত্যেকটি সূরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ আয়াতটি রয়েছে (সূরা আত তাওবা ব্যতীত)। সূরা ‘আত-তাওবা’র শুরুতে বিসমিল্লাহ না থাকলেও সূরা ‘নমল’ এ যেহেতু বাক্যটি দু’বার এসেছে তাই এর সংখ্যাও সূরা সংখ্যার মতো 114-ই থেকে গেলো।
এই ক্ষুদ্র আয়াতটি 4 টি শব্দ ও 19 টি অক্ষর দ্বারা গঠিত। শব্দ চারটি হচ্ছে, ‘ইসম’, ‘আল্লাহ’, ‘রহমান’ এবং ‘রহীম’। ইসম অর্থ নাম, আল্লাহ হচ্ছে স্রষ্টার মূল নাম, রহমান অর্থ দাতা, রহীম অর্থ করুণাময়।
সমগ্র কোরআনে ‘ইসম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে 19 বার অর্থাৎ তা 19 দ্বারা বিভাজ্য। ‘আল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে 2698 বার, তাও 19 দ্বারা বিভাজ্য। ‘রহমান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে 57 বার, এটিও 19 দ্বারা ভাগ করা যায় এবং ‘রহীম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে 114 বার যা 19 দ্বারা বিভাজ্য। কোরআনে বর্ণিত আল্লাহতা‘আলার সর্বমোট নামের সংখ্যা (মূল ও গুণবাচক মিলে) 114, যা 19 দ্বারা বিভাজ্য।
এই চারটি শব্দের গুণিতক সংখ্যার যোগফল হচ্ছে 152, একইভাবে বিসমিল্লাহ শব্দের গুণিতক সংখ্যার যোগফলও 152, যা 19 দ্বারা বিভাজ্য। এ ব্যাপারে আরেকটি জিনিসও কোরআন পাঠকের মনে দারুণ কৌতুহল সৃষ্টি করবে।
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বাক্যটির চারটি শব্দ কোরআনে যতবার এসেছে, এর অপরিহার্য্ গুণবাচক শব্দটিও ঠিক ততোবারই এসেছে। যেমন, ‘ইসম’ শব্দটি এসেছে 19 বার, এর অপরিহার্য্ গুণবাচক শব্দ ‘ওয়াহেদ’(একক), এই শব্দটিও এসেছে 19 বার। আল্লাহ শব্দটি 2698 বার এসেছে, এর অপরিহার্য্ গুণবাচক শব্দ হচ্ছে ‘যুল ফাদল’ (দয়ার আধার) কথাটিও এসেছে 2698 বার। ‘রহমান’ কথাটি এসেছে 57 বার, এর স্বাভাবিক পরবর্তী গুণবাচক শব্দ হচ্ছে ‘মাজীদ’(পবিত্র), তাও এসেছে 57 বার। রহীম এসেছে 114 বার, এর সম্মানসূচক পরবর্তী গুণবাচক শব্দ ‘জামেউ’ (একত্রকারী), এটাও এসেছে 114 বার।
আমরা জানি, রহমান হচ্ছে আল্লাহতা‘আলার দুনিয়ার নাম, অর্থাৎ এখানে সবার প্রতি তিনি দয়ালু। আখেরাতে তিনি দয়ালু শুধূ মুমিনদের জন্য, সেখানে যেহেতু সব নেক কাজের বিনিময় দ্বিগুণ, তাই তাঁর আখেরাতের দয়ালু ‘রহীম’ শব্দটি দুনিয়ায় ‘রহমান’ এর দ্বিগুণ অর্থাৎ 114 বার এসেছে।
আরবী ভাষার বর্ণসমূহের নিজস্ব একটা সংখ্যামান আছে। সে হিসেবে ‘বিসমিল্লাহ’ এর আয়াতটিতে ব্যবহৃত 19 হরফের সংখ্যামানের সমষ্টি হচ্ছে 786, ‘বিসমিল্লাহ’ এর আয়াতটিতে একই অক্ষরের পূণরাবৃত্তি বাদ দিলে মোট বর্ণ থাকে 10 টি এবং 19 সংখ্যায় ব্যবহৃত অংক দুটির যোগফল, 1+9=10.
‘বিসমিল্লাহ’ তে পুনরাবৃত্ত অক্ষরগুলোর সংখ্যামান হচ্ছে 406, এখন 786 থেকে 406 বাদ দিলে বাকী থাকে 380, তাও 19 দ্বারা বিভাজ্য।
এই ঊনিশটি বর্ণমালার ছোট বাক্যটি ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ দিয়ে আল্লাহতা‘আলা গোটা কোরআনকে যেন একটি দুশ্চ্ছেদ্য বাঁধনে বেঁধে রেখেছেন।
সূরা আল মোদ্দাসসেরের 30 নং আয়াতে আল্লাহ সম্ভবত এ কথাটিই বুঝাতে চেয়েছেন, সাদামাটা বাংলায় এই আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ‘এবং তার ওপর রয়েছে ঊনিশ’; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ‘কার ওপর’? আগের আয়াতে যেহেতু দোযখের বর্ণনা রয়েছে তাই কেউ কেউ বলছেন, এরা হচ্ছে দোযখের পাহারাদার। কেউ বলেছেন, এটা দিয়ে মানুষের 19 প্রকার ইন্দ্রিয় শক্তির কথা বোঝানো হয়েছে। আসলে আল্লাহর নবী নিজের মুখে এ কথাটার অর্থ না বলে মনে হয় ভবিষ্যত গবেষণার দ্বার খোলা রাখতে চেয়েছেন। কারণ তাঁর মুখ দিয়ে যদি একবার এর তাৎপর্য্ বলে দেয়া হতো তাহলে মানব সভ্যতা দিনে দিনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে যে হারে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে চলছে তার আলোকে এসব আয়াতের ব্যাখ্যার দরজা চির দিনের জন্যই বন্ধ হয়ে যেতো।
আলোচ্য সূরার এই আয়াতটির ক্রমিক নাম্বার হচ্ছে 30, এ পর্য্ন্ত এসে ওহী নাযিলে একটু বিরতি দিয়ে আল্লাহতা‘আলা এর আগে নাযিল করা সূরা ‘আলাক’ এর 14 টি আয়াত নাযিল করলেন। স্মরণ থাকার কথা, সূরা আলাকের প্রথম 5 আয়াত দ্বারা দুনিয়ার বুকে ওহী নাযিল শুরু হয়। এই 5 আয়াতসহ সূরা আলাক এর মোট আয়াত সংখ্যা ঊনিশ। আল্লাহতা‘আলা কোরআনের প্রথম সূরাটিকে এভাবেই 19 দিয়ে বেঁধে দিলেন, আবার সেই প্রথম 5টি আয়াতে রয়েছে 19 টি শব্দ। গুনলে দেখা যাবে, এই পাঁচ আয়াতে রয়েছে 76 টি অক্ষর এবং গোটা সূরায় রয়েছে 285 টি অক্ষর যা 19 দ্বারা ভাগ করা যায়। সূরাটি নাযিল হয়েছে যদিও সবার আগে, কিন্তু কোরআনে তার জন্য যে ক্রমিক নাম্বার দেয়া আছে তা হচ্ছে 96; আবার কোরআনের শেষের দিক থেকে যদি গুণতে শুরু করা হয় তাহলে 114 থেকে 96 পর্য্ন্ত গুণে আসতে আসতে দেখা যাবে, এই সূরাটির অবস্থান হবে ঊনিশ। এখানে পরিবেশিত প্রতিটি পরিসংখ্যানকেই 19 দ্বারা ভাগ করা যায়। তাছাড়া গাণিতিক বিদ্যার ক্ষুদ্রতম সংখ্যা ও বৃহত্তম সংখ্যাটিরও এক অভূতপূর্ব সংযোগ রয়েছে এখানে। এর একটি হচ্ছে 1 ও দ্বিতীয়টি হচ্ছে 9। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে কোরআনের অসংখ্য পরিসংখ্যানকে 19 দিয়ে ভাগ করতে পারলেও এই 19 সংখ্যাটি কিন্তু অন্য কোনো সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায়না। মনে হয় কোরআনের মালিক বিভাজ্য ও বিভাজকের মধ্যে একটা মৌলিক সীমারেখা টানতে চেয়েছেন, যেমন সীমারেখা টেনে রাখা হয়েছে স্রষ্টা ও তাঁর সৃষ্টির মাঝে।
প্রথম ওহী সূরা আলাক এর প্রথম 5টি আয়াতের শব্দসংখ্যা 19 এর মতো কোরআনে বর্ণিত আরো বহু পরিসংখ্যানও 19 দ্বারা ভাগ করা যায়। যেমন যিনি কোরআন নিয়ে এসেছেন তিনি হলেন ‘রসূল’, কোরআনে রসূল শব্দটি 513 বার এসেছে। যার বাণী ‘রসূল’ বহন করে এনেছেন তিনি হচ্ছেন ‘রব’, কোরআনে এ শব্দটি এসেছে 152 বার। কোরআনের কেন্দ্রীয় দাওয়াত হচ্ছে ‘এবাদত’, কোরআনে এ শব্দটি 19 বার এসেছে। এই কেন্দ্রীয় দাওয়াতের অপর পরিভাষা হচ্ছে ‘আবদ’, এটিও এসেছে 152 বার আর যে ব্যক্তি এই ‘আবদ’ এর কাজ করবে তাকে বলা হয় ‘আবীদ’, কোরআনে এটিও এসেছে 152 বার। এ সব কয়টি পরিসংখ্যানই 19 দ্বারা ভাগ করা যায়। অবিশ্বাস্য ব্যাপার হচ্ছে কোরআনে সংখ্যা এর যে উল্লেখ আছে তা এসেছে সর্বমোট 285 বার, আবার এর প্রতিটি সংখ্যা একত্রে যোগ করলে যোগফল দাঁড়ায় 174591; এর সব কয়টিই 19 দ্বারা বিভাজ্য।
কোরআনের বিভিন্ন সূরার শুরুতে বিচিত্র কিছু বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলোকে বলা হয় ‘হরুফে’ মোকাত্তায়াত’ এগুলোর অর্থ আল্লাহতা‘আলা ছাড়া কেউ জানেনা। অবশ্য গবেষণার ফলে এগুলোর একটি গাণিতিক রহস্য জানা গেছে। এই মোকাত্তায়াত হরফগুলো মোট ২৯ টি সূরার শুরুতে ১৪ টি বিভিন্ন বর্ণমালায় সাজানো রয়েছে, তাও আবার ১৪ টি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে এগুলোকে এসব জায়গায় বসানো হয়েছে। এদের সম্মিলিত যোগফল (২৯+১৪+১৪)=৫৭, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
‘আলিফ-লাম-মীম’ মোকাত্তায়াতটি মোট ৬টি সূরার শুরুতে ব্যবহৃত হয়েছে। এই সূরাগুলোর মধ্যে আলিফ, লাম, মীম বর্ণ তিনটি যতোবার ব্যবহৃত হয়েছে, তার সমষ্টি আবার ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখা যাক। সূরা ‘বাকারায়’ ‘আলিফ’ এসেছে ৪৫০২ বার, ‘লাম’ এসেছে ৩২০২ বার, ‘মীম’ এসেছে ২১৯৫ বার। এসবের যোগফল ৯৮৯৯ কে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
সূরা ‘আল ইমরানে’ ‘আলিফ’ এসেছে ২৫২১ বার, ‘লাম’ এসেছে ১৮৯২ বার, ‘মীম’ এসেছে ১২৪৯ বার। এসবের যোগফল দাঁড়ায় ৯৮৯৯ যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘আনকাবুত’ এ ‘আলিফ’ এসেছে ৭৭৪ বার, ‘লাম’ এসেছে ৫৫৪ বার, ‘মীম’ এসেছে ৩৪৪ বার। এসবের যোগফল ১৬৭২ যাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
সূরা ‘রোম’ এ ‘আলিফ’ এসেছে ৫৪৪ বার, ‘লাম’ এসেছে ৩৯৩ বার, ‘মীম’ এসেছে ৩১৭ বার। এসবের যোগফল ১২৫৪ কে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
সূরা ‘লোকমান’ এ ‘আলিফ’ এসেছে ৩৪৭ বার, ‘লাম’ এসেছে ২৯৭ বার, ‘মীম’ এসেছে ১৭৩ বার। এসবের যোগফল হচ্ছে ৮১৭ যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘সাজদায়’ ‘আলিফ’ এসেছে ২৫৭ বার, ‘লাম’ এসেছে ১৫৫ বার, ‘মীম’ এসেছে ১৫৮ বার। এসবের যোগফল ৫৭০ কে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
আবার এই সবগুলো সূরার অক্ষরগুলো গুণলে দেখা যাবে এতে ‘আলিফ’ এসেছে মোট ৮৯৪৫ বার, ‘লাম’ এসেছে মোট ৬৪৯৩ বার, মীম এসেছে মোট ৪৪৩৬ বার। মোট যোগফল দাঁড়ায় ১৯৮৭৪, একেও ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
সূরা ‘মারইয়াম’ এর মোকাত্তায়াত গঠিত হয়েছে ভিন্ন ধরনের পাঁচটি বর্ণমালা দিয়ে। ক্বাফ, হা, ইয়া, আইন, সোয়াদ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এই সূরায় ‘ক্বাফ’ এসেছে ১৩৭ বার, ‘হা’ এসেছে ১৭৫ বার, ‘ইয়া’ এসেছে ৩৪৩ বার, ‘আইন’ এসেছে ১১৭ বার, ‘সোয়াদ’ এসেছে ২৬ বার। অর্থাৎ এ সূরাটিতে এ হরফসমূহ মোট ৭৯৮ বার ব্যবহৃত হয়েছে, একে ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
সূরা ‘আরাফ’ এর মোকাত্তায়াত হচ্ছে ‘আলিফ’, ‘লাম’, ‘মীম’, ‘সোয়াদ’। এই সূরাটিতে ‘আলিফ’ এসেছে ২৫২৯ বার, ‘লাম’ এসেছে ১৫৩০ বার, ‘মীম’ এসেছে ১১৬৪ বার, ‘সোয়াদ’ এসেছে ৯৭ বার। এই মোকাত্তায়াত ৪টির যোগফলকেও ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়।
সূরা ‘ইয়াসীন’ এর মোকাত্তায়াত হচ্ছে ‘ইয়া’ এবং ‘সীন’। সূরাটিতে এ দুটো অক্ষর ব্যবহৃত হয়েছে মোট ২৮৫ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ‘মোমেন’ থেকে সূরা ‘আহক্বাফ’ পর্য্ন্ত এই ৭ টি সূরার শুরুতে রয়েছে একই ‘মোকাত্তায়াত’-হা এবং মীম।ধারাবাহিক এ সাতটি সূরায় হা এবং মীম –এ দু’টি অক্ষর মোট ২১৪৭ বার ব্যবহৃত হয়েছে, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
হরুফে মোকাত্তায়াত এর মধ্যে হা-ত্বোয়া-সীন এবং ত্বোয়া, সীন, মীম বর্ণগুলোও রয়েছে। এগুলো রয়েছে সূরা মারইয়াম, ত্বোয়াহা, শোয়ারা, নামল এবং কাছাছে। এ পাঁচটি সূরায় মোকাত্তায়াতসমূহ মোট ১৭৬৭ বার ব্যবহৃত হয়েছে, যা ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
সূরা ‘ইউনূস’ এবং সূরা ‘হুদ’ শুরু হয়েছে আলিফ লাম রা এই মোকাত্তায়াত দিয়ে। সূরা দুটিতে হরফ তিনটি ব্যবহার হয়েছে মোট ২৮৮৮ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা ইউসূফ, সূরা ইবরাহীম এবং সূরা আল হেজরেও একই মোকাত্তায়াত রয়েছে অর্থাৎ ‘আলিফ’, ‘লাম’, ‘রা’। সূরা তিনটিতে এ হরফগুলোর ব্যবহার হচ্ছে এমনঃ সূরা ইউসূফ, সূরা ইবরাহীম ও সূরা আল হেজরে অক্ষরগুলো এসেছে যথাক্রমে ২৩৭৫ বার, ১১৯৭ বার এবং ৯১২ বার অর্থাৎ এগুলোর প্রতিটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা রাদ এর মোকাত্তায়াত ‘আলিফ, লাম, মীম, রা’। এতে আছে ৪ টি অক্ষর। এই ৪ টি অক্ষর এ সূরাটিতে মোট ১৪৮২ বার এসেছে, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
মোকাত্তায়াত সম্বলিত সর্বশেষ সূরা হচ্ছে সূরা ‘আল কালাম’। এর শুরুতে মাত্র একটি হরফ বিশিষ্ট মোকাত্তায়াত ব্যবহৃত হয়েছে-‘নূন’। এই সূরায় এ অক্ষরটি ১৩৩ বার এসেছে যা নিঃসন্দেহে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
শুধু ‘ক্বাফ’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে সূরা ক্বাফ। এখানে ক্বাফ অক্ষরটি গণনায় ঠিক রাখার জন্য আল্লাহ কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তা লক্ষ্যণীয়।
আল্লাহতা‘আলা কোরআনে ১২ টি জায়গায় লুত সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেছেন এবং প্রতিবারেই তিনি তাঁদের সম্বোধন করেছেন ‘ক্বওমে লুত’ বলে। কিন্তু সূরা ক্বাফ এর ১৩ নাম্বার আয়াতে এসে ‘কওমে লুত’ না বলে বলা হয়েছে ‘ইখওয়ানুল লুত’, যা অর্থের দিক দিয়ে একই। ব্যতিক্রম করার কারণ হচ্ছে এখানে ‘কওমে লুত’ শব্দ ব্যবহার হলে ক্বাফ এর ব্যবহার হতো ৫৮ টি যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হতো না। সে কারণে একই অর্থবিশিষ্ট ‘ইখওয়ানুল লুত’ শব্দ ব্যবহার করে ক্বাফ এর সংখ্যা ৫৭ তে সীমিত রাখা হয়েছে যেন তা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হয়।
‘ছোয়াদ’ অক্ষরটি তিনটি সূরার মোকাত্তায়াতে ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সূরা আরাফ, মারইয়াম এবং ছোয়াদ। এ তিনটি সূরাতে ছোয়াদ এসেছে মোট ১৫২ বার যা ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
এখানে আল্লাহতা‘আলার গাণিতিক ফর্মূলা মিলানোর জন্য যে বিস্ময়কর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা বেশ লক্ষ্যণীয়। আরবীতে ‘বাছতাতান’ শব্দের বানান লেখা হয়-‘বা’, ‘সীন’, ‘ত্বোয়া’ ও ‘তা’ দিয়ে; সূরা বাকারার ২৪৭ নাম্বার আয়াতে এই শব্দটি এ বানানেই এসেছে। কিন্তু সূরা আরাফ এর ৬৯ নং আয়াতে ‘বাছতাতান’ শব্দের বানান এসেছে ‘বা’, ‘ছোয়াদ’, ‘ত্বোয়া’ ও ‘তা’ দিয়ে, এর সাথে ‘ছোয়াদ’ এর উপর ছোট্ট করে একটা ‘সিন’ বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে ‘বাছতাতান’ শব্দের কোনো অর্থের তারতম্য ঘটেনি। এটা না করা হলে এ সূরা তিনটিতে ‘ছোয়াদ’ এর সংখ্যা একটি কম হয়ে যেতো এবং তা ১৯ দিয়ে ভাগ করা যেতনা। আল্লাহ্র কি অসীম কুদরত!
কোরআন শরীফে শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তির রহস্য
কোরআন শরীফের ‘সূরা আল ফজর’ এর ৭ নং আয়াতে ‘ইরাম’ নামে একটি গোত্র বা শহরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘ইরাম’ এর নাম কোনো ইতিহাসে পাওয়া যায়না। তাই কোরআন শরীফের তাফসীরকারকরাও সুনির্দিষ্টভাবে এর অর্থ বলতে সক্ষম হননি।
১৯৭৩ সালে সিরিয়ার ‘এরলুস’ নামক একটি পুরনো শহরে খনন কার্যের সময় কিছু পুরনো লিখন পাওয়া যায়। এ সমস্ত লিখন পরীক্ষা করে সেখানে চার হাজার বছরের একটি পুরনো সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এ লিখনগুলোর মধ্যে দেখা গেছে ‘ইরাম’ শহরের উল্লেখ আছে। এক সময় এরলূস শহরের লোকজন ‘ইরাম’ শহরের লোকজনের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করতো। এ সত্যটা আবিষ্কৃত হলো মাত্র সেদিন ১৯৭৩ সালে। প্রশ্ন হলো, দেড় হাজার বছর আগে নাযিল করা কোরআন শরীফে এই শহরের নাম এলো কি করে? আসলে কোরআন শরীফ হচ্ছে আল্লাহর বাণী, আর আল্লাহপাক এখানে ‘ইরাম’ শহরের উদাহরণ দিয়েছেন।
কোরআন শরীফে হযরত মুহাম্মদ (স) এর একজন দুশমন এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তার নামে সূরা আছে। সে হচ্ছে আবু লাহাব। ওহী নাযিল হওয়ার পর যদি আবু লাহাব ইসলাম কবুল করতো তাহলে কোরআন শরীফের আয়াতটি মিথ্যা প্রমাণিত হতো। কিন্তু আবু লাহাব ইসলাম কবুল করেনি এবং কোরআন শরীফের আয়াত চিরকাল সত্যিই রয়ে গেছে।
কোরআন শরীফে ‘সূরা রোম’ এ পারস্য সাম্রাজ্য ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে এবং যে সময় এই ওহী নাযিল হয় তখন মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা অকল্পনীয় ছিলো যে, রোমকদের যারা পরাজিত করলো তারা অচিরেই তাদের হাতে ধ্বংস হতে পারে। এ আয়াত নাযিল হবার ৭ বছর সময়ের মধ্যে, অর্থাৎ ৬২৭ খ্রীস্টাব্দে এসে সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
এ আয়াতে ‘ফী আদনাল আরদ’ বলে আল্লাহতা‘আলা গোটা ভূ-মন্ডলের যে স্থানটিকে সর্বনিম্ন অঞ্চল বলেছেন তা ছিলো সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও জর্ডানের পতিত ‘ডেড সী’ এলাকা। এ ভূখন্ডেই ৬২৭ খ্রীস্টাব্দে রোমানরা ইরানীদের পরাজিত করে। মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কৃত ভূ-জরিপ অনুযায়ী এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই এলাকাটা সারা দুনিয়ার মধ্যে আসলেই নিম্নতম ভূমি। ‘সী লেবেল’ থেকে ৩৯৫ মিটার নীচে। এ জায়গাটা যে গোটা ভূ-খন্ডের সবচেয়ে নীচু জায়গা এটা ১৪ শ বছর আগের মানুষ কি করে জানবে? বিশেষ করে এমন একজন মানুষ যিনি ভূ-তত্ত্ব, প্রাণী-তত্ত্ব ইত্যাদি কোনো তত্ত্বেরই ছাত্র ছিলেননা।
কোরআন শরীফের এক জায়গায় সমুদ্রের তরঙ্গ সম্বন্ধে বলা হয়েছে, ঢেউ যখন অগ্রসর হয় তখন দুটি ঢেউ এর মধ্যবর্তী স্থান অন্ধকার থাকে। আমরা জানি, হযরত মুহাম্মদ(স) ছিলেন মরুভূমির সন্তান, তিনি সমুদ্র কখনো দেখেননি। সুতরাং সমুদ্র তরঙ্গের মধ্যবর্তী স্থান যে অন্ধকার তা তিনি জানবেন কি করে? এতেও প্রমাণিত হয় যে, হযরত মুহাম্মদ(স) নিজে কোরআন রচনা করেননি। আসলেই প্রচন্ড ঝড়ের স্ময় দ্রুতগতির তরঙ্গসমূহ যখন বিক্ষুব্ধ হয় তখন তরঙ্গগুলোর মধ্যবর্তী অংশ সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হয়।
কোরআনের আরেকটি বিস্ময়কর বিস্ময় হচ্ছে, লোহা ধাতুটির বিবরণ। কোরআনের সূরা আল হাদীদে আল্লাহতা‘আলা বলেছেন, ‘আমি লোহা নাযিল করেছি, যাতে রয়েছে প্রচুর শক্তি ও মানুষদের জন্য প্রচুর কল্যা ’। লোহা নাযিলের বিষয়টি তাফসীরকারকগণ নানাভাবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন; কিন্তু যেখানে আল্লাহতা‘আলার স্পষ্ট নাযিল শব্দটি রয়েছে সেখানে এত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দিকে না গিয়ে আমরা এর আক্ষরিক অর্থের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভাবনীও ঠিক একথাটিই বলেছে। পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন, লোহা উৎপাদনের জন্য যে ১৫ লক্ষ সেলসিয়াল ডিগ্রী তাপমাত্রা প্রয়োজন তার কোন উপকরণ আমাদের এই পৃথিবীতে নেই। এটা একমাত্র সূর্যের তাপমাত্রা দ্বারাই সম্ভব। হাজার হাজার বছর আগে সূর্য্ দেশে প্রচন্ড বিস্ফোরণের ফলে লোহা নামের এ ধাতু মহাশূণ্যে ছিটকে পড়ে। পৃথিবীর মাধ্যাকার্ষণ শক্তির টানে তা পৃথিবীতে নাযিল হয়। লোহা সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত তথ্য ঠিক এ কথাটিই প্রমাণ করেছে। দেড় হাজার বছর আগের আরব বেদুইনরা বিজ্ঞানের এই জটিল সূত্র জানবে কি করে?
এই সূরার আরেকটি অংকগত মোজেযাও রয়েছে। ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী ‘সূরা আল হাদীদ’ কোরআনের ৫৭ তম সূরা। আরবীতে ‘সূরা আল হাদীদ’ এর সংখ্যাগত মান হচ্ছে ৫৭। শুধু ‘আল হাদীদ’ শব্দের অংকগত মান হচ্ছে ২৬, আর লোহার আনবিক সংখ্যা মানও হচ্ছে ২৬।
কোরআনে অনেক জায়গায়ই একের সঙ্গে অন্যের তুলনা উপস্থিত করা হয়েছে। এ তুলনা উপস্থিত করার ব্যাপারে একটি অবিশ্বাস্য মিল অবলম্বন করা হয়েছে এবং তা হচ্ছে, সে দু‘টি নাম অথবা বস্তুকে সমান সংখ্যাতেই আল্লাহতা‘আলা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন, কোরআন শরীফে সূরা ‘আল ইমরান’ এর ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আল্লাহতা‘আলার কাছে ঈসার তুলনা হচ্ছে আদমের মতো।’
এটা যে সত্য তা আমরা বুঝতে পারি। কারণ, মানবজন্মের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় উনাদের কারোরই জন্ম হয়নি। আদম (আ) এর মাতাও ছিলনা, পিতাও ছিলনা এবং ঈসা (আ) এরও পিতা ছিলোনা। এখন এই তুলনাটি যে কত সত্য তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন আমরা কোরআন শরীফে এ দু’টি নামের মোট সংখ্যা অনুসন্ধান করি। দেখা যাচ্ছে কোরআন শরীফে আদম(আ) ও ঈসা(আ) উভয়ের নামই পঁচিশবার এসেছে। কোরআনের বাণীগুলো যে মানুষের নয় তা বোঝা যায় এ দু’টি নামের সংখ্যার সমতা দেখে। আল্লাহতা‘আলা যেহেতু বলেছেন, এ দুটো একই রকম, তাই সেগুলোর সংখ্যা গণনাও ঠিক একই রকমের রাখা হয়েছে।
এই তুলনার ক্ষেত্রে আরেকটি অলৌকিক বিষয় হলো, যেখানে তুলনাটি অসম সেখানে সংখ্যা দুটিকেও অসম বলা হয়েছে। যেমন, কোরআনে বলা হয়েছে-সুদ ও বাণিজ্য এক নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ শব্দ দুটির একটি কোরআনে এসেছে ছয়বার এবং অপরটি সাতবার।
বলা হয়েছে ‘জান্নাতের অধিবাসী ও জাহান্নামের অধিবাসী সমান নয়’। জান্নাতের সংখ্যা হচ্ছে আট, আর জাহান্নামের সংখ্যা হচ্ছে সাত।
সূরা ‘আরাফ’ এ এক আয়াতে আছে , ‘যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের মতো’। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয় যখন আমরা দেখি, ‘যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতকে অস্বীকার করে’-এই বাক্যটি কোরআনে পাঁচবার এসেছে। যেহেতু তাদের উদাহরণ দেয়া হয়েছে কুকুরের সাথে, তাই সমগ্র কোরআনে ‘আল কালব’ তথা কুকুর শব্দটাও এসেছে পাঁচবার।
‘সাবয়া সামাওয়াত’ কথাটার অর্থ হলো সাত আসমান। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোরআনে এই ‘সাত আসমান’ কথাটা ঠিক সাতবারই এসেছে। ‘খালকুস সামাওয়াত’ আসমানসমূহের সৃষ্টির কথাটাও ৭ বার এসেছে, সম্ভবত আসমান সাতটি তাই। ‘সাবয়ামু আইয়াম’ মানে সাতদিন। একথাটাও কোরআনে সাতবার এসেছে। অংকগত মোজেযা এখানেই শেষ নয়।
‘দুনিয়া ও আখেরাত’ এ দুটো কথা ও কোরআনে সমসংখ্যক বার এসেছে-১১৫ বার করে।
‘ঈমান ও কুফর’ শব্দ দুটোও সমপরিমাণে বলা হয়েছে, অর্থাৎ পঁচিশবার করে।
‘গরম’ ও ‘ঠান্ডা’ যেহেতু দুটো বিপরীতমুখী ঋতু, তাই এ শব্দ দুটো সমান সংখ্যক অর্থাৎ কোরআনে ৫ বার করে এসেছে।
আরবী ভাষায় ‘কুল’ মানে বলো, তার জবাবে বলা হয় ‘কালু’ মানে তারা বললো। সমগ্র কোরআনে এ দু’টো শব্দও সমানসংখ্যক বার এসেছে-৩৩২ বার করে।
‘মালাকুন’ কিংবা ‘মালায়েকা’ মানে ফেরেশতা বা ফেরেশতারা। কোরআনে এ শব্দটি এসেছে ৮৮ বার। একইভাবে ফেরেশতার চিরশত্রু ‘শয়তান’ কিংবা ‘শায়াতীন’-শব্দটিও এসেছে ৮৮ বার।
‘আল খবিস’ মানে অপবিত্র, ‘আত তাইয়েব’ মানে পবিত্র। সমগ্র কোরআনে এ দুটি শব্দ একই পরিমাণে এসেছে-সাতবার করে।
প্রশ্ন জাগতে পারে, দুনিয়ায় ভালোর চাইতে মন্দইতো বেশি, তাহলে এখানে এ দুটো শব্দকে সমান রাখা হলো কিভাবে? এ কথার জবাবের জন্য কোরআনের সূরা আনফালের 37 নং আয়াতটির প্রতি লক্ষ্য করা যাক। এখানে আল্লাহতা‘আলা বলেছেনঃ ‘অপবিত্রকে পবিত্র হতে আলাদা করার জন্য তিনি অপবিত্রকে একটার ওপর আরেকটা রেখে পুঞ্জীভূত করেন এবং সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে ফেলে দেন।’ এতে বোঝা যায়, যদিও পাপ পূণ্য সমান সংখ্যায় এসেছে, কিন্তু ‘পুঞ্জীভূত’ করা দিয়ে যে তার পরিমাণ বেশি তা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘ইয়াওমুন’ মানে দিন যা পবিত্র কোরআনে এসেছ 365 বার। বছরে যে 365 দিন, এটা কে না জানে। ইয়াওমুন শব্দের বহুবচন আইয়াম মানে দিনসমূহ, এ শব্দটি এসেছ 30 বার। আরবী ভাষায় চাঁদ হচ্ছে মাসের সূত্র সূচক, গড়ে বছরের প্রতি মাসে 30 দিন, এটাই হচ্ছে চান্দ্রবছরের নিয়ম। হতবাক হতে হয় যখন দেখি, চাঁদের আরবী প্রতিশব্দ ‘কামার’ শব্দটি কোরআনে মোট 30 বারই এসেছে।
‘শাহরুন’ মানে মাস, কোরআনে এ শব্দটি এসেছ মোট 12 বার। ‘সানাতুন’ মানে বছর যেটি কোরআনে এসেছে 19 বার। কারণ হিসেবে আমরা সম্প্রতি আবিষ্কৃত গ্রীক বিজ্ঞানী মেতনের ‘মেতনীয় বৃত্তের’ কথা উল্লেখ করতে পারি। তিনিই প্রথম এই তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন যে, প্রতি 19 বছর পর সূর্য্ ও পৃথিবী একই বৃত্তে অবস্থান করে।
কোরআনে ‘ফুজ্জার’(পাপী)শব্দটি যতবার এসেছে, ‘আবরার’ (পূণ্যবান) শব্দটি তার দ্বিগুণ এসেছে। অর্থাৎ ফুজ্জার 3 বার আর আবরার 6 বার। এর কারণ হচ্ছে শাস্তির তুলনায় পুরস্কারের পরিমাণ আল্লাহতা‘আলা সব সময় দ্বিগুণ করে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। কোরআনের সূরা সাবা’র 37 নম্বর আয়াতে আল্লাহতা‘আলা বলেছেন, ‘এ ধরনের লোকদের জন্যই (কেয়ামতে) দ্বিগুণ পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে। এটা হচ্ছে বিনিময় সে কাজের যা তারা দুনিয়ায় করে এসেছে’। এ কারণেই দেখা যায়, গোটা কোরআনে ‘পাপী’ ও ‘পূণ্যবান’ শব্দের মতো ‘আযাব’ শব্দটি যতোবার এসেছে, ‘সওয়াব’ শব্দটি তার দ্বিগুণ এসেছে। অর্থাৎ আযাব 117 বার, সওয়াব 234 বার।
কোরআনের একাধিক জায়গায় আল্লাহ বলেছেনঃ আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করলে তিনি তার বিনিময় বাড়িয়ে দিবেন। সম্ভবত এ কারণেই কোরআনে ‘গরীবী’ শব্দটি এসেছে 13 বার এবং বিপরীতে ‘প্রাচূর্য্’ শব্দটি এসেছে 26 বার।
কোরআনের করীমের বিভিন্ন জায়গায় গাণিতিক সংখ্যার এ আশ্চর্য্জনক মিল দেখে যে কোন পাঠকই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ভাবতে থাকে, এটা নিঃসন্দেহে কোন মানুষের কথা নয়।
কোনো একটি কাজ করলে তার যে অবশ্যম্ভাবী ফল দাঁড়াবে তার উভয়টিকে আশ্চর্য্জনকভাবে সমান সংখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে। ‘গাছের চারা উৎপাদন’ করলে ‘গাছ’ হয়; তাই এই দুটি শব্দ এসেছে 26 বার করে। কোনো মানুষ ‘হেদায়াত’ পেলে তার প্রতি ‘রহমত’ বর্ষিত হয়; তাই এ দুটো শব্দ কোরআনে এসেছে 79 বার করে। ‘হায়াতের’ অপরিহার্য্ পরিণাম হচ্ছে ‘মওত’- এ শব্দ দুটোও এসেছে 16 বার করে। আল্লাহতা‘আলা বলেছেন-‘যাকাত’ দিলে ‘বরকত’ আসে। কোরআনে এ দুটো শব্দই এসেছে 32 বার করে। ‘আবদ’ মানে গোলামী আর ‘আবীদ’ মানে গোলাম। গোলামের কাজ গোলামী করা, কোরআনে এই উভয় শব্দই 152 বার করে এসেছে। ‘মানুষ সৃষ্টি’ কথাটি এসেছে 16 বার, আর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘এবাদত’; সুতরাং তাও এসেছে 16 বার। ‘নেশা’ করলে ‘মাতাল’ হয়; তাই এ দুটো শব্দও এসেছে সমানসংখ্যক 6 বার।
কোরআনে ‘ইনসান’ শব্দটি এসেছে 65 বার। এবার ইনসান বানানোর উপকরণগুলোকে কোরআনের বিভিন্ন জায়গা হতে মিলিয়ে যোগ করে দেখা যাক। প্রথম উপাদান ‘তোরাব’ (মাটি) এসেছে 17 বার; দ্বিতীয় উপাধান ‘নুতফা’(জীবনকণা) এসেছে 12 বার; তৃতীয় উপাদান ‘আলাক’(রক্তপিন্ড) 6 বার; চতূর্থ উপাদান ‘মোদগা’ (মাংসপিন্ড) এসেছে 3 বার; পঞ্চম উপাদান ‘এযাম’ বা হাড় এসেছে 15 বার এবং সর্বশেষ উপাদান ‘লাহম’ এসেছে 12 বার। কোরআনে সূরা হজ্জ এ উল্লেখিত এ উপাদানগুলো যোগ করলে যোগফল ঠিক 65 হয়। আর এসব উপাদান দিয়ে যে ‘ইনসান’ বানানো হয়েছে তাও ঠিক 65 বারই উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহতা‘আলা কোরআনের ‘সূরা আল ক্বামার’ এর প্রথম আয়াতটিতে চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার সাথে কেয়ামতের আগমন অত্যাসন্ন কথাটি বলেছেন, আরবী বর্ণমালার আক্ষরিক মান হিসাব করলে তার যোগফল হয় 1390, আর এই 1390 হিজরী (1969 খ্রীস্টাব্দে) সালেই মানুষ সর্বপ্রথম চাঁদে অবতরণ করে। এটা কি স্রেফ ঘটনাচক্র নাকি কোরআনের অসাধারণ মোজেযা? কিন্তু আল্লাহতা‘আলার এই মহান সৃষ্টিতে তো ঘটনাচক্র বলতে কিছুই নেই। এ কারণেই হয়তো মানুষের প্রথম চাঁদে অবতরণের সালের সাথে কোরআনের আলোচ্য আয়াতটির সংখ্যামানের এ বিস্ময়কর মিল আমরা দেখতে পাচ্ছি। সুবহানাল্লাহ!
[মিশরের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. মরীস বুকাইলীর গবেষণার উপর ভিত্তি করে আল কোরআন একাডেমী, লন্ডন এর সৌজন্যে।]
“ডাক তোমার প্রভূর পথে প্রজ্ঞা এবং সদুপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সর্বত্তোম পন্থায়” (সূরা নাহলঃ১২৫)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন