তাওহীদ ও তার প্রমাণাদি: আকীদার ব্যাপারে ৫০টি
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-১:
সেই তিনটি মূলনীতি কি যা জানা মানুষের উপর ফরয?
উত্তর:
তা হল: কোনো বান্দা কর্তৃক তার রবকে,
দ্বীনকে
এবং নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম)কে জানা।
প্রশ্ন-২:
আপনার রব বা প্রভু কে?
উত্তর:
আমার রব আল্লাহ যিনি আমাকে এবং নিখিল বিশ্বকে তার নেয়ামত দ্বারা লালন পালন
করছেন,
তিনিই
একমাত্র আমার মা‘বুদ
যিনি ব্যতীত অন্য কোনো মা‘বুদ
নেই।
এর
প্রমাণ হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿
ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ﴾
[الفاتحة: ٢]
“সকল
প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্ব-জগতের রব্ব।”
আল্লাহ
ব্যতীত যা কিছু রয়েছে তা হচ্ছে ‘আলাম বা সৃষ্টিকুল, আর সেই সৃষ্টিকুলের অন্তর্ভুক্ত
একজন হচ্ছি আমি।
প্রশ্ন-৩:
রব অর্থ কি?
উত্তর:
মালিক,
মা‘বুদ,
নিয়ন্ত্রক
এবং তিনিই একমাত্র যাবতীয় ইবাদতের হক্বদার।
প্রশ্ন-৪:
আপনার রবকে কিসের মাধ্যমে জেনেছেন?
উত্তর:
আমি তাকে জেনেছি তার নিদর্শন ও তার সৃষ্টির মাধ্যমে। তার নিদর্শনের মধ্যে দিবা
রাত্রি,
চন্দ্র-সূর্য
এবং তার সৃষ্টির মধ্যে সপ্তাকাশ,
সপ্ত
জমীনসহ এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে।
এর
প্রমাণ হল, আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿
وَمِنۡ ءَايَٰتِهِ ٱلَّيۡلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُۚ لَا تَسۡجُدُواْ
لِلشَّمۡسِ وَلَا لِلۡقَمَرِ وَٱسۡجُدُواْۤ لِلَّهِۤ ٱلَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن
كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ٣٧ ﴾
[فصلت: ٣٧]
অর্থাৎ:
এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রজনী ও দিবস,
সূর্য
ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না,
চন্দ্রকেও
নয়;
সিজদা
কর আল্লাহকে যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন যদি তোমরা তারই ইবাদত কর। [সূরা হা-মীম সিজদা
৩৭]
তিনি
আরও বলেন :
﴿
إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ
أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ
يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ
بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ
ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤ ﴾
[الاعراف: ٥٤]
নিশ্চয়ই
তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন আল্লাহ যিনি আসমান ও জমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি
করেছেন,
অতঃপর
তিনি স্বীয় আরশের উপর উঠেছেন। তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন;
যাতে
ওরা একে অন্যকে অনুসরণ করে চলে ত্বড়িত গতিতে। সূর্য,
চন্দ্র
ও নক্ষত্ররাজী সবই তার হুকুমের অনুগত। জেনে রাখ! সৃষ্টির একমাত্র কর্তা
তিনিই,
আর
হুকুমের একমাত্র মালিক তিনিই,
সারা
জাহানের রব্ব আল্লাহ হলেন বরকতময়। [সূরা আ‘রাফ ৫৪]
প্রশ্ন-৫:
আপনার দ্বীন কি?
উত্তর:
আমার দ্বীন ইসলাম,
আর
তা হল: আত্মসমর্পণ করা এবং এক আল্লাহর জন্য বিনীত হওয়া।
এর
দলীল হল:
﴿
إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ ﴾
[ال عمران: ١٩]
আল্লাহর
নিকট একমাত্র দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।
আল্লাহ
তা'আলা
আরও বলেন :
﴿
وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي
ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾
[ال عمران: ٨٥]
অর্থাৎ:
আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম অন্বেষন করে তা কখনই তার নিকট থেকে
গৃহীত হবে না এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [সূরা আল ইমারান
৮৫]
তিনি
আরও বলেন:
﴿
ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي
وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ﴾
[المائدة: ٣]
অর্থাৎ:
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম,
তোমাদের
প্রতি আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত
করলাম। [সূরা মায়েদাহ ৩]
প্রশ্ন-৬:
এ দ্বীন ইসলামকে কিসের উপর ভিত্তি করা হয়েছে?
উত্তর:
দ্বীনে ইসলামকে পাঁচটি খুঁটির উপর ভিত্তি করা হয়েছে:
প্রথমত:
এই সাক্ষ্য দেওয়া যে,
আল্লাহ
ব্যতীত কোনো উপাসনার যোগ্য কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
অসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং সালাত কায়েম করা, রমযানের সাওম পালন করা,
যাকাত আদায় করা ও সামর্থ্য থাকলে বায়তুল্লাহর হজ্জ করা।
প্রশ্ন-৭:
ঈমান কাকে বলা হয়?
উত্তর:
ঈমান হল: আপনি আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করবেন,
তার
ফেরেশ্তামণ্ডলী,
তার
কিতাবসমূহ,
রাসূলগণের
প্রতি ঈমান আনবেন,
শেষ
দিবসের উপর ঈমান আনবেন এবং তাকদীরের ভাল মন্দের প্রতি ঈমান আনবেন।
এর
প্রমাণ হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿
ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ
ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ
أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ ﴾
[البقرة: ٢٨٥]
অর্থাৎ:
রাসূল তার রব্বের পক্ষ হতে তার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার উপর ঈমান রাখেন এবং
মুমিনগণও,
তারা
সকলেই আল্লাহকে,
তার
ফেরেশ্তাগণকে,
তার
কিতাবসমূহকে এবং তার রাসূলগণকে সত্য বলে ঈমান পোষণ করেন। আমরা ঈমানের ক্ষেত্রে তার
রাসূলগণের মধ্যে কাউকে পার্থক্য করি না। [সূরা বাকারা ২৮৫]
প্রশ্ন-৮:
ইহসান কাকে বলা হয়?
উত্তর:
ইহ্সান হচ্ছে: আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাকে দেখছেন,
আপনি
যদি তাকে নাও দেখেন তাহলে (মনে করবেন যে) নিশ্চয়ই তিনি আপনাকে দেখছেন।
এর
প্রমাণ হল আল্লাহর বাণী:
﴿
إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَواْ وَّٱلَّذِينَ هُم مُّحۡسِنُونَ ١٢٨
﴾
[النحل: ١٢٨]
অর্থাৎ:
নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে আছেন এবং যারা ভাল তাদের সাথে। [সূরা নাহল
১২৮]
প্রশ্ন-৯:
আপনার নবী কে?
উত্তর:
আমার নবী হচ্ছেন, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল মুত্তালিব ইবন
হাশেম,
হাশেম
হলেন আরবের কেনানা গোত্রের কুরাইশ বংশের,
আর
আরবগণ হল ইসমা‘ঈল (আলাইহিস সালাম) এর বংশধর,
ইসমাইল
হলেন ইব্রাহীম (আ:) এর সন্তান আর তিনি হলেন নূহ (আলাইহিস সালাম) এর
সন্তান।
প্রশ্ন-১০:
কিসের মাধ্যমে তাকে নবুওয়াত এবং রিসালাত দেওয়া হয়েছে?
উত্তর:
اقرأ ইকরা
(বা পড়) –এটা নাযিল করার মাধ্যমে তাঁকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছে এবং المدثر আল
মুদ্দাস্সির (বা চাদরাবৃত্তকারী) এটা নাযিল করার মাধ্যমে তাঁকে রিসালাত দেওয়া
হয়েছে।
প্রশ্ন-১১:
তাঁর মু‘জেযাগুলো কি কি?
উত্তর:
এ কুরআন;
যা
সকল সৃষ্টি অপারগ হয়েছে এর সূরার মত একটি সূরা নিয়ে আসতে,
তারা
তাঁর এবং তাঁর অনুসারীদের কঠোর বিরোধী হওয়ার পরও তা নিয়ে আসতে সক্ষম হয়নি অথচ তারা
স্পষ্টভাষী এবং ভাষার প্রতি অধিক পারদর্শী ছিল।
এর
প্রমাণ হল আল্লাহ তা‘আলার
বাণী:
﴿
وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ
مِّن مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ
صَٰدِقِينَ ٢٣ ﴾
[البقرة: ٢٣]
অর্থাৎ:
আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি;
যদি
তোমরা তাতে সন্দিহান হও তাহলে তৎসদৃস একটি সূরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের
সাহায্যকারীদেরকে ডেকে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। [সূরা বাকারা:
২৩]
অন্যত্র
তিনি বলেন:
﴿
قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ
هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ
ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾
[الاسراء: ٨٨]
অর্থাৎ, বলুন: যদি এ কুরআনের মত একটি কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জ্বিন একত্রিত হয়
তবুও তারা এর অনুরূপ কুরআন আনয়ন করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরকে সহযোগিতা করে।
[সূরা ইসরা ৮৮]
প্রশ্ন-১২:
তিনি যে আল্লাহর রাসূল এর প্রমাণ কি?
উত্তর:
প্রমাণ হল আল্লাহ তা‘আলার
বাণী:
﴿
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٞ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهِ ٱلرُّسُلُۚ أَفَإِيْن
مَّاتَ أَوۡ قُتِلَ ٱنقَلَبۡتُمۡ عَلَىٰٓ أَعۡقَٰبِكُمۡۚ وَمَن يَنقَلِبۡ عَلَىٰ
عَقِبَيۡهِ فَلَن يَضُرَّ ٱللَّهَ شَيۡٔٗاۗ وَسَيَجۡزِي ٱللَّهُ ٱلشَّٰكِرِينَ ١٤٤
﴾
[ال عمران: ١٤٤]
অর্থাৎ:
আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) রাসূল ব্যতীত কিছুই নন। নিশ্চয়ই তার
পূর্বে রাসূলগণ বিগত হয়েছে। অনন্তর যদি তার মৃত্যু হয় অথবা তিনি নিহত হন তবে কি
তোমরা সরে যাবে?
জেনে
রাখ! যে কেউ পশ্চাদপদে ফিরে যায় তাতে সে আল্লাহর কোনো অনিষ্ট করবে না এবং আল্লাহ
কৃতজ্ঞগণকে পুরস্কার প্রদান করবেন। [সূরা আল ইমরান ১৪৪]
তিনি
অন্যত্র বলেন:
﴿
مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ
رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ
ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ
ٱلسُّجُودِۚ﴾
[الفتح: ٢٩]
অর্থাৎ:
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল,
তাঁর
সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি
সহানুভূতিশীল,
আপনি
তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবেন। [সূরা ফাতহ: ২৯]
প্রশ্ন-১৩:
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) এর নবুওয়াতের প্রমাণ কি?
উত্তর:
তাঁর নবুওয়াতের প্রমাণ হল আল্লাহর বাণী:
﴿
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٖ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ
وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّۧنَۗ ﴾
[الاحزاب: ٤٠]
অর্থাৎ:
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) তোমাদের মধ্যে কারো পিতা নন বরং আল্লাহর
রাসূল এবং শেষ নবী। [সূরা আহযাব ৪০]
এ
সব আয়াত প্রমাণ করে যে,
তিনি
একজন নবী এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ নবী।
প্রশ্ন-১৪:
আল্লাহ তা‘আলা
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) কে কি দিয়ে প্রেরণ
করেছেন?
উত্তর:
একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং তার সাথে কাউকে অংশিদার না করার নির্দেশ দিয়ে তাঁকে
প্রেরণ করেছেন এবং কোনো সৃষ্টি যেমন ফেরেশতা,
নবীগণ,
সৎলোক,
পাথর
এবং বৃক্ষরাজির পূজা বা উপাসনা করতে নিষেধ করেছেন।
তিনি
বলেন:
﴿
وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ
لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ ٢٥ ﴾
[الانبياء: ٢٥]
অর্থাৎ:
আমি তোমাদের পূর্বে এমন কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি তার প্রতি এ নির্দেশ ব্যতীত
যে,
আমি
ছাড়া অন্য কোনো হক ইলাহ নেই;
সূতরাং
তোমরা আমারই ইবাদত কর। [সূরা আম্বিয়া ২৫]
তিনি
আরও বলেন:
﴿
وَسَۡٔلۡ مَنۡ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رُّسُلِنَآ أَجَعَلۡنَا مِن دُونِ
ٱلرَّحۡمَٰنِ ءَالِهَةٗ يُعۡبَدُونَ ٤٥ ﴾
[الزخرف: ٤٥]
অর্থাৎ:
আপনার পূর্বে আমি যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে আপনি জিজ্ঞেস
করুন,
আমি
কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোনো মা‘বুদ
স্থির করেছিলাম যাদের ইবাদত করা যায়?
[সূরা
যুখরুফ ৪৫]
তিনি
আরও বলেন:
﴿
وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾
[الذاريات: ٥٦]
আমি
জ্বিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য। [সূরা যারিয়াত
৫৬]
এ
থেকে জানা যায় যে,
আল্লাহ
কেবলমাত্র এককভাবে তাঁর ইবাদত করার জন্যই সকল সৃষ্টিকে তৈরী করেছেন। কাজেই তিনি তার
বান্দাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন এরই নির্দেশ দেওয়ার জন্য।
প্রশ্ন-১৫:
তাওহীদে রুবুবিয়্যা এবং তাওহীদে উলুহিয়্যার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর:
তাওহীদে রুবুবিয়্যা হল: আল্লাহর কাজ। যেমন: সৃষ্টি করা,
রিযিক
দান করা,
জীবন
মৃত্যু দান করা,
বৃষ্টি
বর্ষণ করা,
তরুলতা
ও বৃক্ষরাজি উৎপন্ন করা,
এবং
যাবতীয় কাজ কর্ম পরিচালনা করা।
আর
তাওহীদে উলুহিয়্যা হল: বান্দার কাজ। যেমন: দো‘আ,
ভয়-ভীতি,
আশা
আকাঙ্খা,
ভরসা,
প্রত্যাবর্তন,
উৎসাহ
প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন,
মান্নত
করা,
সাহায্য
প্রার্থনা করা ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদত।
প্রশ্ন-১৬:
ইবাদত, যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য করা ঠিক নয় সেই ইবাদতের প্রকারগুলো কি
কি?
উত্তর:
ইবাদতের প্রকারগুলো হল: দো‘আ,
সহযোগিতা
নেয়া,
সাহায্য
চাওয়া,
নৈকট্য
লাভের জন্য কোরবানী করা,
মান্নত
করা,
ভয়,
আশা
আকাঙ্খা,
ভরসা,
প্রত্যাবর্তন,
ভালবাসা,
উৎসাহ
প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন করা,
দাসত্ব
করা,
রুকু,
সিজদা,
অনুনয়
বিনয় করা এবং সেই সম্মান যা আল্লাহর বৈশিষ্টের অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন-১৭:
আল্লাহর নির্দেশের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানজনক নির্দেশ কোনটি?
আর
তার নিষেধের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর নিষেধ কোনটি?
উত্তর:
আল্লাহর নির্দেশের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানজনক নির্দেশ হল: ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে
এক ও অদ্বিতীয় বলে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তার নিষেধের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর নিষেধ হল: তার
সাথে শির্ক করা। আর তা হলো: আল্লাহর সাথে অন্যকে ডাকা বা ইবাদতের যে কোনো প্রকার
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে করা। কাজেই যে ব্যক্তি ইবাদতের প্রকারগুলোর মধ্যে
যে কোনো ইবাদত গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারোর) জন্য করবে অথবা এর দ্বারা
অন্যকে উদ্দেশ্য করবে সে যেন গাইরুল্লাহকে রব্ব এবং আল্লাহ বানিয়ে নিল।
প্রশ্ন-১৮:
সেই তিনটি মাসআলা কি যা জানা এবং এর দ্বারা আমল করা ওয়াজিব?
উত্তর:
প্রথমটি হল: আল্লাহ আমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন এবং রিযিক দিয়েছেন,
অনর্থক
ছেড়ে দেননি বরং আমাদের নিকট রাসূল পাঠিয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর আনুগত্য করবে
সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যে ব্যক্তি তাঁর নাফরমানী করবে সে জাহান্নামে
যাবে।
দ্বিতীয়টি
হল: আল্লাহ তা‘আলার
ইবাদতের মধ্যে অন্য কাউকে শরীক করা তিনি পছন্দ করেন না যদিও নিকটবর্তী ফেরেশ্তা বা
প্রেরিত রাসূল হয়।
তৃতীয়টি
হল: যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করবে এবং আল্লাহকে এক বলে জানবে সে ব্যক্তির উচিৎ
নয় আল্লাহ ও রাসূলের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা যদিও সে তার একান্ত নিকটবর্তী কেউ
হয়।
প্রশ্ন-১৯:
আল্লাহ (শব্দের) অর্থ কি?
উত্তর:
সকল সৃষ্টির ইবাদত ও উপাসনা পাওয়ার হক্বদার বা হক ইলাহ।
প্রশ্ন-২০:
আল্লাহ আপনাকে কেন সৃষ্টি করেছেন?
উত্তর:
তাঁর ইবাদত করার জন্য।
প্রশ্ন-২১:
তাঁর ইবাদত কি?
উত্তর:
তার তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা, অর্থাৎ ইবাদত কেবল তাঁর জন্যই করা এবং তাঁর আনুগত্য
করা।
প্রশ্ন-২২:
এর প্রমাণ কি?
উত্তর:
আল্লাহর বাণী:
﴿
وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾
[الذاريات: ٥٦]
অর্থাৎ:
আমি জ্বিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য। [সূরা যারিয়াত
৫৬]
প্রশ্ন-২৩:
আল্লাহ আমাদের উপর সর্বপ্রথম কি ফরয করেছেন?
উত্তর:
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাগুত (তথা আল্লাহ বিরোধী শক্তি)কে বর্জন করা বা
তাগুতের সাথে কুফরী করা (তাগুতকে মানতে অস্বীকার করা)।
এর
দলীল, আল্লাহ তা‘আলার
বাণী:
﴿
لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشۡدُ مِنَ ٱلۡغَيِّۚ فَمَن
يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ
ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٥٦ ﴾
[البقرة: ٢٥٦]
অর্থাৎ:
দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্য বাধকতা নেই। অবশ্যই হেদায়াত গোমরাহী থেকে
পৃথক হয়ে গিয়েছে,
অতএব,
যে
ব্যক্তি তাগুতের সাথে কুফরি করল এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করল সে দৃঢ়তর রজ্জুকে
আঁকড়িয়ে ধরল যা কখনো ছিন্ন হবার নয়। এবং আল্লাহ শ্রবনকারী মহাজ্ঞানী। [সূরা বাকারা
২৫৬]
প্রশ্ন-২৪:
উরওয়াতুল উসকা বা শক্ত রজ্জু কি?
উত্তর:
তা হল: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। লা ইলাহা অর্থ: কোনো মা‘বুদ
নেই (রহিতকরণ) ইল্লাল্লাহ অর্থ: শুধু আল্লাহ (সাব্যস্তকরণ)
প্রশ্ন-২৫:
এখানে না এবং হ্যাঁ বা রহিতকরণ ও সাব্যস্তকরণ দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
উত্তর:
আল্লাহ ব্যতীত অন্য যা কিছুর ইবাদত বা উপাসনা করা হয় তা রহিত করা এবং বিনা শরীক এক
আল্লাহর জন্য যাবতীয় ইবাদত সাব্যস্ত করা।
প্রশ্ন-২৬:
এ কথার প্রমাণ কি?
উত্তর:
প্রমাণ হল আল্লাহর বাণী:
﴿
وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِيمُ لِأَبِيهِ وَقَوۡمِهِۦٓ إِنَّنِي بَرَآءٞ مِّمَّا
تَعۡبُدُونَ ٢٦ ﴾
[الزخرف: ٢٦]
অর্থাৎ:
স্মরণ করুন,
যখন
ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) তার পিতা এবং তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন: তোমরা যাদের পুজা
কর তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। [সূরা যুখরুফ: ২৬] এটি রহিতকরণের প্রমাণ। আর
সাব্যস্তকরণের প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী,
﴿
إِلَّا ٱلَّذِي فَطَرَنِي فَإِنَّهُۥ سَيَهۡدِينِ ٢٧ ﴾
[الزخرف: ٢٧]
“তবে
যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি ব্যতীত, তিনি আমাকে সঠিক পথ দেখাবেন।”[সূরা যুখরুফ
২৭]
প্রশ্ন-২৭:
তাগুত কয়টি?
উত্তর:
তাগুত অনেক রয়েছে,
তন্মধ্যে
প্রধানত: পাঁচটি। আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত ইবলিস,
যার
পূজা বা উপাসনা করা হয় অথচ সে তাতে রাজি থাকে,
যে
ব্যক্তি নিজের উপাসনার দিকে মানুষকে আহ্বান করে,
যে
ব্যক্তি গায়েব জানার দাবী করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতীর্ণ শরীয়ত বাদ দিয়ে অন্য
কিছু দ্বারা শাসন করে।
প্রশ্ন-২৮:
কালেমার সাক্ষ্য দেওয়ার পর সর্বোত্তম আমল কোনটি?
উত্তর:
পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া,
এ
নামাযের কিছু শর্ত,
রুকন
এবং ওয়াজিব রয়েছে।
শর্তগুলো
হল: মুসলিম হওয়া,
জ্ঞান
থাকা,
ভাল-মন্দের
পার্থক্যের বিবেক থাকা,
পবিত্র
থাকা,
নাপাকী
দূর করা,
সতর
ঢাকা,
ক্বিবলামুখী
হওয়া,
সময়
হওয়া এবং নিয়ত করা।
নামাযের
রুকন হল চৌদ্দটি: সামর্থ থাকলে কিয়াম বা দাঁড়িয়ে নামায পড়া,
তাকবীরে
তাহরিমা,
সূরা
ফাতেহা পাঠ,
রুকু,
রুকু
থেকে উঠা,
সাতটি
অঙ্গে সিজদা,
রুকু
থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো,
দুই
সিজদার মাঝে বসা,
প্রতিটি
রুকনে দেরী করা,
ধারাবাহিকতা
বজায় রাখা,
শেষ
তাশাহ্হুদ,
শেষ
বৈঠক,
নবীর
উপর দুরুদ পাঠ এবং সালাম ফিরানো।
নামাযের
ওয়াজিব আটটি: তাকবীরে তাহরীমা বাদে সকল তাকবীর,
রুকুতে
সুবহানা রব্বিয়াল আযীম বলা,
ইমাম
ও একাকী নামাযীর জন্য সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলা,
ইমাম,
মুকতাদী
এবং একাকী নামাযীর জন্য রব্বানা লাকাল হামদ বলা,
সিজদায়
সুবহানা রববিয়াল আ‘লা বলা,
দুই
সিজদার মাঝে রববিগ ফিরলী বলা,
প্রথম
তাশাহ্হুদ,
এর
জন্য বসা।
এগুলো
ব্যতীত যা কিছু আছে কথা এবং কাজ সবই সুন্নাত।
প্রশ্ন-২৯:
আল্লাহ কি সৃষ্টিকে মৃত্যুর পর আবার জীবিত করবেন?
এবং
তাদের ভাল-মন্দ আমলের হিসাব গ্রহণ করবেন?
তার
আনুগত্যকারীকে কি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন?
আর
যে ব্যক্তি তার সাথে কুফরী করবে এবং তার সাথে অন্যকে অংশিদার করবে সে কি জাহান্নামে
যাবে?
উত্তর:
হ্যাঁ,
এর
দলীল হল আল্লাহ তা‘আলার
বাণী:
﴿
زَعَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي
لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡۚ وَذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ
يَسِيرٞ ٧ ﴾
[التغابن: ٧]
অর্থাৎ:
কাফিররা ধারণা করে যে,
তারা
কখনো পুনরুত্থিত হবে না। বলুন: নিশ্চয়ই হবে,
আমার
রবের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে সে সম্পর্কে অবশ্যই
তোমাদেরকে অবহিত করা হবে। এবং এটি আল্লাহর পক্ষে অত্যন্ত সহজ। [সূরা তাগাবূন
৭]
তিনি
আরও বলেন:
﴿
۞مِنۡهَا خَلَقۡنَٰكُمۡ وَفِيهَا نُعِيدُكُمۡ وَمِنۡهَا نُخۡرِجُكُمۡ تَارَةً
أُخۡرَىٰ ٥٥ ﴾
[طه: ٥٥]
অর্থাৎ:
আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছি,
এর
মধ্যেই ফিরিয়ে দেব এবং তা থেকেই পুনর্বার বের করব। [সূরা ত্বহা ৫৫]
কুরআন
কারীমে এর অগনিত দলীল রয়েছে।
প্রশ্ন-৩০:
যে বক্তি গাইরুল্লাহর নামে পশু জবাই করবে এ আয়াত অনুযায়ী তার হুকুম কি?
উত্তর:
সে মুরতাদ কাফের,
তার
জবাই করা পশু খাওয়া জায়েয নেই। কেননা তার মধ্যে দুটি প্রতিবন্ধকতা পাওয়া
যাচ্ছে।
প্রথমটি
হল: এটি মুরতাদের দ্বারা যবাই করা,
আর
কোনো মুরতাদের যবাই করা পশু উলামাদের ঐকমত্যে খাওয়া জায়েয নেই।
দ্বিতীয়টি
হল: এটি গাইরুল্লাহর নামে যবাই করার অন্তর্ভুক্ত,
আর
গাইরুল্লাহর নামে জবাই করা পশু আল্লাহ হারাম করেছেন।
এর
দলীল আল্লাহর বাণী:
﴿قُل
لَّآ أَجِدُ فِي مَآ أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٖ يَطۡعَمُهُۥٓ
إِلَّآ أَن يَكُونَ مَيۡتَةً أَوۡ دَمٗا مَّسۡفُوحًا أَوۡ لَحۡمَ خِنزِيرٖ
فَإِنَّهُۥ رِجۡسٌ أَوۡ فِسۡقًا أُهِلَّ لِغَيۡرِ ٱللَّهِ بِهِۦۚ﴾
[الانعام: ١٤٥]
অর্থাৎ:
আপনি বলে দিন: ওহীর মাধ্যমে আমার নিকট যে বিধান পাঠানো হয়েছে;
তাতে
কোনো ভক্ষণকারীর জন্য কোনো হারাম বস্তু পাইনি যা সে ভক্ষণ করে,
তবে
মৃত জন্তু বা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের গোশ্ত,
কেননা
এটা অবশ্যই নাপাক বা শরীয়ত বিগর্হিত বস্ত্ত;
যা
আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে তা হারাম করা হয়েছে। [সূরা আনআম ১৪৫]
প্রশ্ন-৩১:
শির্কের প্রকারগুলো কি কি?
উত্তর:
শির্কের প্রকারগুলো হল: মৃত ব্যক্তির নিকট প্রয়োজনাদী চাওয়া,
তাদের
নিকট গিয়ে প্রার্থনা করা। আর এটি বিশ্বের মধ্যে অধিক প্রসারিত ও
প্রচলিত,
কেননা
মৃত ব্যক্তির আমল বা কাজ কর্ম বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে,
সে
তার নিজের জন্যই কোনো উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখে না তাহলে সে তার নিকট
প্রার্থনাকারীকে কি সহযোগিতা করবে?
অথচ
তার নিকট আল্লাহর শাফাআত চাচ্ছে। এটি হচ্ছে শাফায়াতকারী এবং যার নিকট শাফায়াত চাওয়া
হয় তার ব্যাপারে নিতান্তই মুর্খতা,
কারণ
আল্লাহ তা‘আলার
অনুমতি ব্যতীত তার নিকট কেউ শাফায়াত চাইতে পারবে না। আর অন্যের নিকট তা চাওয়ার
মধ্যে তার অনুমতির কারণ করে রাখেন নি;
বরং
কারণ হল: তাওহীদকে পরিপূর্ণ ভাবে বাস্তবায়ন করা। আর সেই মুশরিক এমন মারাত্মক কারণে
পতিত হয়েছে যা আল্লাহর অনুমতির প্রতিবন্ধক।
আর
শির্ক দু ধরণের। এক প্রকার শির্ক রয়েছে যা দ্বীন থেকে মানুষদেরকে বের করে দেয়। তা
হচ্ছে বড় শির্ক। অন্য প্রকার শির্ক হচ্ছে এমন যা দ্বীন থেকে মানুষদেরকে বের করে দেয়
না। আর তা হচ্ছে ছোট শির্ক যেমন, সামান্য লোক দেখানোর দ্বারা সংঘটিত শির্ক।
প্রশ্ন-৩২:
নেফাকের প্রকারগুলো কি কি?
এবং
এর অর্থ কি?
উত্তর:
নেফাক দুই প্রকার: নেফাকে এ‘তেকাদী বা বিশ্বাসগত নেফাক এবং নেফাকে আমলি বা আমলগত
নেফাক।
বিশ্বাসগত
নেফাক কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ হয়েছে,
তাদের
জন্য আল্লাহ তা‘আলা
জাহান্নামের একেবারে নিম্নস্থল ওয়াজিব করে রেখেছেন।
নেফাকে
আমলি: রাসূলের বাণীতে এসেছে: চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার মধ্যে তা পাওয়া যাবে সে
খাঁটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর কোনো একটি পাওয়া যাবে,
তার
মধ্যে মুনাফেকের একটি নিদর্শন পাওয়া যাবে যতক্ষণ না সে তা ত্যাগ করবে।
(বৈশিষ্টগুলো
হল:) সে যখন কথা বলবে তখন মিথ্যা বলবে,
কোনো অঙ্গিকার করলে তা ভঙ্গ করবে,
ঝগড়া
করলে গালি দেবে এবং তার নিকট কোনো কিছু আমানত রাখলে এর খিয়ানত করবে।
রাসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) আরো বলেছেন: মুনাফেকের নিদর্শন তিনটি: সে যখন কথা
বলবে তখন মিথ্যা বলবে,
কোনো অঙ্গিকার করলে তা ভঙ্গ করবে এবং তার নিকট কোনো কিছু আমানত রাখলে এর খিয়ানত
করবে।
গুণীজন
বলেন: এ নেফাকী কখনো ইসলামের মূলনীতির সাথে একত্রিত হতে পারে কিন্তু যখন তা
প্রাধান্যতা লাভ করে তখনই সেই মুনাফেক ইসলাম থেকে সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যায় যদিও সে
নামায পড়ে,
রোজা
রাখে এবং নিজেকে মুসলিম হিসাবে দাবী করে। কেননা তার মধ্যে এ সকল বৈশিষ্ট থাকায়
ঈমানই তাকে মুসলিম হওয়া থেকে বারণ করে। কাজেই কোনো বান্দার মধ্যে যখন এ
বৈশিষ্ট্যগুলো পূর্ণতা লাভ করবে এবং এ থেকে বিরত থাকার জন্য বারণ করার মত কোনো কারণ
না থাকে তাহলে সে খাঁটি মুনাফেকে পরিণত হবে।
প্রশ্ন-৩৩:
দ্বীন ইসলামের দ্বিতীয় ধাপ কোনটি?
উত্তর:
ঈমান।
প্রশ্ন-৩৪:
ঈমানের শাখা কয়টি?
উত্তর:
ঈমানের সত্তরেরও অধিক শাখা রয়েছে,
সবচেয়ে
উপরের শাখা হল ‘‘লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ”
বলা
এবং সবচেয়ে নিম্নতর শাখা হল ‘‘রাস্তা
থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করা”
এবং
লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি শাখা বা অঙ্গ।
প্রশ্ন-৩৫:
ঈমানের রুকন কয়টি?
উত্তর:
ঈমানের রুকন ছয়টি। তা হল: আপনি আল্লাহর উপর আনবেন,
তাঁর
ফেরেশ্তামন্ডলী,
তাঁর
কিতাবসমূহ,
রাসূলগণের
প্রতি ঈমান আনবেন,
শেষ
দিবস ও ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি ঈমান আনবেন।
প্রশ্ন-৩৬:
দ্বীন ইসলামের তৃতীয় ধাপ কোনটি?
উত্তর:
ইহসান। এর রুকন হচ্ছে একটি,
তা
হল: আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন;
যেন
আপনি তাকে দেখছেন,
আপনি
যদি তাকে নাও দেখেন তাহলে (মনে করবেন যে,)
নিশ্চয়ই
তিনি আপনাকে দেখছেন।
প্রশ্ন-৩৭:
পূনরুত্থানের পর কি মানুষ তাদের কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে এবং তাদেরকে কি তাদের
কর্মের বদলা দেওয়া হবে?
উত্তর:
হ্যাঁ,
তারা
প্রশ্নের সম্মুখীন হবে এবং তাদের কর্মের বদলা দেওয়া হবে। দলীল হল আল্লাহর
বাণী:
﴿
لِيَجۡزِيَ ٱلَّذِينَ أَسَٰٓـُٔواْ بِمَا عَمِلُواْ وَيَجۡزِيَ ٱلَّذِينَ
أَحۡسَنُواْ بِٱلۡحُسۡنَى ٣١ ﴾
[النجم: ٣١]
অর্থাৎ:
যারা মন্দ কাজ করে তাদেরকে যেন মন্দ ফল দেন এবং যারা ভাল কাজ করে তাদেরকে যেন উত্তম
বদলা দেন। [সূরা নাজম ৩১]
প্রশ্ন-৩৮:
যে ব্যক্তি পূনরুত্থানকে অবিশ্বাস করবে তার হুকুম কি?
উত্তর:
সে কাফের হয়ে যাবে,
দলীল
হল আল্লাহর বাণী:
﴿
زَعَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي
لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡۚ وَذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ
يَسِيرٞ ٧ ﴾
[التغابن: ٧]
অর্থাৎ:
কাফিররা ধারণা করে যে,
তারা
কখনো পুনরুত্থিত হবে না। বলুন: নিশ্চয়ই হবে,
আমার
প্রতিপালকের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে সে সম্পর্কে
অবশ্যই তোমাদেরকে অবহিত করা হবে। এবং এটি আল্লাহর পক্ষে অত্যন্ত সহজ। [সূরা তাগাবূন
৭]
প্রশ্ন-৩৯:
এমন কোনো উম্মত বাকী আছে কি?
যার
নিকট আল্লাহ রাসূল প্রেরণ করেননি?
যারা
তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত করতে এবং তাগুতকে বর্জন করতে নির্দেশ
দিবেন?
উত্তর:
এমন কোনো উম্মত বাকী নেই;
যার
নিকট আল্লাহ রাসূল প্রেরণ করেননি। দলীল হল আল্লাহর বাণী:
﴿
وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ
وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ﴾
[النحل: ٣٦]
অর্থাৎ:
আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছি এ মর্মে যে,
তোমরা
আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। [সূরা নাহল ৩৬]
প্রশ্ন-৪০:
তাওহীদের প্রকারগুলো কি কি?
উত্তর:
১:
তাওহীদে রুবুবিয়্যা: এটি কাফেরগণও স্বীকৃতি দিয়েছিল,
যেমন
আল্লাহর বাণী:
﴿
قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ
وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ
مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا
تَتَّقُونَ ٣١ ﴾
[يونس: ٣١]
অর্থাৎ:
আপনি বলুন: তিনি কে?
যিনি
তোমাদেরকে আসমান ও জমীন থেকে রিযিক পৌঁছিয়ে থাকেন?
অথবা
তিনি কে?
যিনি
কর্ণ ও চক্ষুসমূহের উপর পূর্ণ অধিকার রাখেন?
আর
তিনি কে?
যিনি
জীবন্তকে প্রাণহীন হতে বের করেন আর প্রাণহীনকে জীবন্ত হতে বের করেন?
এবং
তিনি কে?
যিনি
সকল কাজ পরিচালনা করেন?
তখন
অবশ্যই তারা বলবে যে,
আল্লাহ।
অতএব,
আপনি
বলুন: তবে কেন তোমরা (শির্ক হতে) নিবৃত্ত থাকছো না?
[সূরা
ইউনুস ৩১]
২:
তাওহীদে উলুহিয়্যা: সকল সৃষ্টিকে বাদ দিয়ে এক আল্লাহর জন্য ইখলাসের সাথে ইবাদত
করা। কেননা আরবদের ভাষায় ইলাহ হল: যার জন্য ইবাদতের উদ্দেশ্য করা হয়। তারা বলতো:
আল্লাহ হচ্ছেন সকল মা‘বূদের মা‘বুদ
বা ইলাহের ইলাহ্,
কিন্তু
তারা তার সাথে অন্যান্য ইলাহকে ডাকতো। যেমন: সৎলোকগণ,
ফেরেশ্তামন্ডলী
ইত্যাদি। তারা বলতো: আল্লাহ তাতে রাজি আছেন এবং তারা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য
শাফাআত করবে।
৩:
তাওহীদে সিফাত: তাওহীদে রুবুবিয়্যা এবং উলুহিয়্যা ততক্ষণ পর্যন্ত সাব্যস্ত হবে
না যতক্ষণ না তাওহীদে সিফাত তথা আল্লাহর গুণাগুণকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে,
কিন্তু
কাফেরগণ ঐ সকল লোকদের চেয়ে জ্ঞানী যারা আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকার করে। (কাফেররা
আল্লাহর সকল গুণাগুণ অস্বীকার করতো না)
প্রশ্ন-৪১:
আল্লাহ যদি আমাকে কোনো নির্দেশ দেন তাহলে আমার কি করা উচিৎ?
উত্তর:
তার জন্য সাতটি স্তর অতিক্রম করা জরুরী। এক. তা জানা,
দুই.
সেটাকে ভালবাসা,
তিন.
তা পালন করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা,
চার.
তার উপর আমল করা,
পাঁচ.
সঠিকভাবে তা সম্পাদন করা,
ছয়.
সে আমল বিধ্বংসী কর্ম হতে সতর্ক থাকা এবং সাত. এর উপর দৃঢ় থাকা।
প্রশ্ন-৪২:
যখন মানুষ জানবে যে,
আল্লাহ
তাকে তাওহীদ পালনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং শির্কে পতিত হওয়া হতে নিষেধ
করেছেন;
তখন
কি এ ধাপগুলো তার উপর প্রযোজ্য হবে?
উত্তর:
হ্যাঁ,
প্রথমত: অধিকাংশ লোক জানে যে, তাওহীদ সত্য এবং শির্ক বাতিল তারপরও বিনা প্রশ্নে সে এ থেকে বিমুখ থাকে! অনুরূপভাবে সে জানে যে, আল্লাহ সূদকে হারাম করেছেন তারপরও বিনা প্রশ্নে সূদের লেনদেন করে যাচ্ছে! সে জানে যে, এতীমের মাল খাওয়া হারাম শুধু শরীয়ত অনুমোদিত পন্থায় খাওয়া জায়েয, তারপরও এতীমের মালের দায়িত্ব নিচ্ছে, কাউকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাও করছে না!
প্রথমত: অধিকাংশ লোক জানে যে, তাওহীদ সত্য এবং শির্ক বাতিল তারপরও বিনা প্রশ্নে সে এ থেকে বিমুখ থাকে! অনুরূপভাবে সে জানে যে, আল্লাহ সূদকে হারাম করেছেন তারপরও বিনা প্রশ্নে সূদের লেনদেন করে যাচ্ছে! সে জানে যে, এতীমের মাল খাওয়া হারাম শুধু শরীয়ত অনুমোদিত পন্থায় খাওয়া জায়েয, তারপরও এতীমের মালের দায়িত্ব নিচ্ছে, কাউকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাও করছে না!
দ্বিতীয়ত:
আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা ভালবাসা এবং তার অপছন্দকারীকে কাফের জানা,
দেখা
যাচ্ছে বহু মানুষ রাসূলকে পছন্দ করে না বরং তাঁকে এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন তাও
অপছন্দ করে যদিও সে জানে যে,
আল্লাহ
তা অবতীর্ণ করেছেন।
তৃতীয়ত:
কাজের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া,
অধিকাংশ
মানুষ তা জানে এবং পছন্দ করে কিন্তু দুনিয়ার স্বার্থের ভয়ে তা পালনের প্রতিজ্ঞা করে
না।
চতুর্থত:
আমল করা,
বহু
মানুষ আছে যারা কোনো আমলের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলে বা আমল করলে দেখা যায় তাকে আলেমগণ বা
মানুষ সম্মান করে ফলে সে ঐ আমল ছেড়ে দেয়।
পঞ্চমত:
অধিকাংশ মানুষ খাঁটি নিয়তে আমল করতে পারে না,
আর
যদিও ইখলাস বা খাঁটি নিয়তে করে কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে হয় না।
ষষ্টত:
সৎলোকগণ তাদের আমল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয় করে,
কারণ
আল্লাহ বলেছেন:
﴿
أَن تَحۡبَطَ أَعۡمَٰلُكُمۡ وَأَنتُمۡ لَا تَشۡعُرُونَ ٢ ﴾
[الحجرات: ٢]
তোমাদের
আমল ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু তোমরা তা জানতে পারবে না। আর এটি আমাদের জমানায় সবচেয়ে
কম। (বর্তমান কালের সৎলোকেরা আমল নষ্ট হওয়ার ভয় করে না।)
সপ্তমত:
হক্বের উপর দৃঢ় থাকা এবং শেষ পরিণতি খারাপ হওয়া থেকে ভয় করা। আর এটি থেকেই সৎলোকগণ
সবচেয়ে বেশী ভয় করে থাকেন।
প্রশ্ন-৪৩:
কুফর অর্থ কি এবং তা কত প্রকার?
উত্তর:
কুফর দু’প্রকার
ক-
এমন কুফর যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়,
ইহা
পাঁচ প্রকার:
১:
মিথ্যারোপের কুফরি,
আল্লাহ
বলেন:
﴿
وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِٱلۡحَقِّ
لَمَّا جَآءَهُۥٓۚ أَلَيۡسَ فِي جَهَنَّمَ مَثۡوٗى لِّلۡكَٰفِرِينَ ٦٨
﴾
[العنكبوت: ٦٨]
অর্থাৎ:
যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিকট হতে আগত সত্যকে
অস্বীকার করে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে?
জাহান্নামই
কি কাফেরদের আবাস নয়?
[সূরা
আনকাবূত ৬৮]
২:
সত্য বলে জানার পরও অহংকার করার কুফরি,
আল্লাহ
বলেন:
﴿
وَإِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ ٱسۡجُدُواْ لِأٓدَمَ فَسَجَدُوٓاْ إِلَّآ
إِبۡلِيسَ أَبَىٰ وَٱسۡتَكۡبَرَ وَكَانَ مِنَ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٣٤ ﴾
[البقرة: ٣٤]
অর্থাৎ:
এবং যখন আমি ফেরেশ্তাগণকে বলেছিলাম যে,
তোমরা
আদমকে সিজদা কর তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করেছিল;
সে
অগ্রাহ্য করল ও অহঙ্কার করল এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল। [সূরা বাকারা
৩৪]
৩:
সন্দেহের কুফরি,
আর
এটি হচ্ছে খারাপ ধারণা করা। আল্লাহ বলেন:
﴿
وَدَخَلَ جَنَّتَهُۥ وَهُوَ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ قَالَ مَآ أَظُنُّ أَن تَبِيدَ
هَٰذِهِۦٓ أَبَدٗا ٣٥ وَمَآ أَظُنُّ ٱلسَّاعَةَ قَآئِمَةٗ وَلَئِن رُّدِدتُّ
إِلَىٰ رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيۡرٗا مِّنۡهَا مُنقَلَبٗا ٣٦ قَالَ لَهُۥ صَاحِبُهُۥ
وَهُوَ يُحَاوِرُهُۥٓ أَكَفَرۡتَ بِٱلَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٖ ثُمَّ مِن
نُّطۡفَةٖ ثُمَّ سَوَّىٰكَ رَجُلٗا ٣٧ ﴾
[الكهف: ٣٥، ٣٧]
অর্থাৎ:
এ ভাবে নিজের প্রতি যুলুম করে সে তার উদ্যানে প্রবেশ করল। সে বলল: আমি মনে করি না
যে এটা কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে। এবং এটাও মনে করি না যে,
কিয়ামত
হবে,
আর
আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হই তবে অবশ্যই আমি ইহা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট
স্থান পাব। তদুত্তরে তার বন্ধু তাকে বলল: তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ?
যিনি
তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা ও পরে শুক্র হতে এবং তারপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মানুষ্য
আকৃতিতে?
[সূরা
কাহফ ৩৫-৩৭]
৪:
প্রত্যাখ্যান করার কুফরি,
এর
দলীল হিসেবে আল্লাহ বলেন:
﴿
وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ عَمَّآ أُنذِرُواْ مُعۡرِضُونَ ٣ ﴾
[الاحقاف: ٣]
অর্থাৎ:
আর যারা কাফের তাদেরকে যা থেকে সতর্ক করা হয়েছে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। [সূরা
আহকাফ ৩]
৫:
নেফাকী কুফরি,
এর
দলীল হিসেবে আল্লাহ বলেন:
﴿
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ ثُمَّ كَفَرُواْ فَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ
فَهُمۡ لَا يَفۡقَهُونَ ٣ ﴾
[المنافقون: ٣]
অর্থাৎ:
এটা এ জন্যে যে,
তারা
ঈমান আনার পর কুফরি করেছে ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে,
পরিণামে
তারা বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। [সূরা মুনাফিকূন ৩]
খ-
ছোট কুফরি,
এর
দ্বারা ইসলাম থেকে বের হবে না। আর এটি হচ্ছে নেয়ামতের অস্বীকার বা কুফরি।
এর
দলীল হিসেবে আল্লাহ বলেন:
﴿
وَضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلٗا قَرۡيَةٗ كَانَتۡ ءَامِنَةٗ مُّطۡمَئِنَّةٗ يَأۡتِيهَا
رِزۡقُهَا رَغَدٗا مِّن كُلِّ مَكَانٖ فَكَفَرَتۡ بِأَنۡعُمِ ٱللَّهِ فَأَذَٰقَهَا
ٱللَّهُ لِبَاسَ ٱلۡجُوعِ وَٱلۡخَوۡفِ بِمَا كَانُواْ يَصۡنَعُونَ ١١٢ ﴾
[النحل: ١١٢]
অর্থাৎ:
আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এক জনপদের;
যা
ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিত,
যেখানে
সর্বদিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ আসতো;
অতঃপর
তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল ফলে তারা যা করত তজ্জন্যে তাদেরকে আল্লাহ ক্ষুধা
ও ভীতির আচ্ছাদনের স্বাদ গ্রহন করালেন। [সূরা নাহল ১১২]
তিনি
আরও বলেন:
﴿إِنَّ
ٱلۡإِنسَٰنَ لَظَلُومٞ كَفَّارٞ ٣٤ ﴾
[ابراهيم: ٣٤]
অর্থাৎ:
নিশ্চয়ই মানুষ অতি মাত্রায় যালিম অকৃতজ্ঞ। [সূরা ইব্রাহীম ৩৪]
প্রশ্ন-৪৪:
শির্ক কি এবং তা কত প্রকার?
উত্তর:
শির্ক হচ্ছে তাওহীদের বিপরীত দিক,
শির্ক
তিন প্রকার: বড় শির্ক,
ছোট
শির্ক এবং গোপনীয় শির্ক।
ক: বড় শির্ক চার প্রকার:
১-দো‘আর
ক্ষেত্রে শির্ক,
আল্লাহ
তা‘আলা
বলেন:
﴿
فَإِذَا رَكِبُواْ فِي ٱلۡفُلۡكِ دَعَوُاْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ
فَلَمَّا نَجَّىٰهُمۡ إِلَى ٱلۡبَرِّ إِذَا هُمۡ يُشۡرِكُونَ ٦٥ ﴾
[العنكبوت: ٦٥]
অর্থাৎ:
তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন তারা বিশুদ্ধ চিত্তে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে
ডাকে;
অতঃপর
তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন তখন তারা শির্কে লিপ্ত হয়। [সূরা
আনকাবূত ৬৫]
২-
নিয়ত,
ইচ্ছা
এবং কথার ক্ষেত্রে শির্ক:
আল্লাহ
তা‘আলা
বলেন:
﴿
مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيۡهِمۡ
أَعۡمَٰلَهُمۡ فِيهَا وَهُمۡ فِيهَا لَا يُبۡخَسُونَ ١٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ
لَيۡسَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا
وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٦ ﴾
[هود: ١٥، ١٦]
অর্থাৎ:
যে ব্যক্তি শুধু পার্থিব জীবন ও এর জাঁকজমক কামনা করে আমি তাদেরকে তাদের
কৃতকর্মগুলির ফল দৃনিয়াতেই পরিপূর্ণভাবে প্রদান করে দেই এবং দুনিয়াতে তাদের জন্য
কোনো কিছুই কম করা হয় না। তারা এমন লোক যে,
আখেরাতে
তাদের জন্য জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই,
আর
তারা যা কিছূ করেছিল তা সবই আখেরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং যা কিছু করছে তাও বিফল
হবে। [সূরা হূদ ১৫-১৬]
৩-
আনুগত্যের ক্ষেত্রে শির্ক:
আল্লাহ
তা‘আলা
বলেন:
﴿
ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ
وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا
وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣١
﴾
[التوبة: ٣١]
অর্থাৎ:
তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের আলেম ও ধর্মযাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মরিয়মের
ছেলে ঈসাকেও অথচ তাদের প্রতি শুধু এ আদেশ করা হয়েছে যে,
তারা
শুধুমাত্র এক মা’বূদের
ইবাদত করবে,
যিনি
ব্যতীত যোগ্য কোনো উপাসক নেই,
বস্তুত:
তিনি তাদের অংশী স্থির করা হতে পবিত্র। [সূরা তাওবা ৩১]
৪-
ভালবাসার ক্ষেত্রে শির্ক:
আল্লাহ
তা‘আলা
বলেন:
﴿
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ
ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ وَلَوۡ يَرَى ٱلَّذِينَ
ظَلَمُوٓاْ إِذۡ يَرَوۡنَ ٱلۡعَذَابَ أَنَّ ٱلۡقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعٗا وَأَنَّ
ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعَذَابِ ١٦٥ ﴾
[البقرة: ١٦٥]
অর্থাৎ:
এবং মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে সদৃস স্থির করে
নেয়,
তারা
আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবেসে থাকে এবং যারা ঈমানদার আল্লাহর প্রতি
তাদের ভালবাসা অধিক দৃঢ়তর,
আর
যারা অত্যাচার করেছে তারা যদি শাস্তি অবলোকন করতো তাহলে বুঝতো যে,
সমুদয়
শক্তি আল্লাহর জন্যে এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [সূরা বাকারা
১৬৫]
খ: ছোট শির্ক আর এটি হচ্ছে সামান্য লোকদেখানো।
আল্লাহ
তা‘আলা
বলেন:
﴿
فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا
يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠ ﴾
[الكهف: ١١٠]
অর্থাৎ:
সূতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে আর তার প্রতিপালকের
ইবাদতে যেন কাউকে শরীক না করে। [সূরা কাহাফ ১১০]
গ: গোপন শির্ক, এর দলীলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) বলেন:
(এ
উম্মতের মাঝে শির্ক এমন গোপনীয় ভাবে প্রবেশ করে যে ভাবে অন্ধকার রাত্রিতে কালো
পাথরে পিপিলিকা হাটলে টের পওয়া যায় না।)
প্রশ্ন-৪৫:
কদর ও কাযা বা ভাগ্য ও ফায়সালার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর:
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->কদর
শব্দটি কাদারা থেকে উৎপত্তি,
অতঃপর
তাকদীর শব্দে ব্যবহার হয়েছে যার অর্থ বিস্তারিত ও পরিস্কার বর্ণনা এবং ইহা
পরবর্তীতে সকল সৃষ্টির অস্তিত্ব আসার পূর্বেই আল্লাহর নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে
ব্যবহার হয়েছে।
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->আর
কাযা হল: ভাগ্য নির্ধারণে প্রথম যা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এর দ্বারা সংগঠিত হওয়ার
হুকুমের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে। কখনো ইহা কদর বা ভাগ্য অর্থে ব্যবহার হয় যা ব্যাপক
ও পার্থক্য অর্থে হয়ে থাকে।
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->এমনিভাবে
কদর শব্দটি কাযা অর্থে ব্যবহার হয় যা ভাগ্য সংগঠিত হওয়ার হুকুম হিসাবে ধরা হয় এবং
কাযা দ্বীনি ও শরয়ী হুকুমের উপর প্রযোজ্য হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:
ثُمَّ
لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ
تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾
[النساء: ٦٥]
অর্থাৎ:
অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজেদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা
হৃষ্টচিত্তে গ্রহন করে নেবে। [সূরা নিসা ৬৫]
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->তদ্রূপ
কাযা অবসর এবং পূর্ণতা অর্থে আসে,
যেমন:
﴿
فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ ﴾
[الجمعة: ١٠]
অতঃপর
যখন নামায পূর্ণ হবে,
[সূরা আল-জুম‘আহ: ১০]
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->এমনিভাবে
কথার আসল অর্থেও আসে।
আল্লাহ
বলেন:
﴿
فَٱقۡضِ مَآ أَنتَ قَاضٍۖ ﴾
[طه: ٧٢]
অর্থাৎ:
আপনি যে ফয়সালা করতে চান তা করে ফেলুন।
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->এটি
ঘোষনা ও কোনো সংবাদ দেয়ার অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:
﴿
وَقَضَيۡنَآ إِلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ﴾
[الاسراء: ٤]
আমি
বানী ইসরাঈলের নিকট সংবাদ পাঠালাম।
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->তদ্রূপ
মৃত্যুর উপর প্রযোজ্য হয়। যেমন: কেউ বলল: قضى فلان অমুক মৃত্যুবরণ করেছে। অনুরূপ আল্লাহ বলেন:
﴿
وَنَادَوۡاْ يَٰمَٰلِكُ لِيَقۡضِ عَلَيۡنَا رَبُّكَۖ ﴾
[الزخرف: ٧٧]
তারা
আহ্বান করবে: হে মালেক আপনি প্রভুর নিকট বলুন তিনি যেন আমাদের মৃত্যুদান
করেন।
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->শাস্তি
হওয়ার উপর প্রযোজ্য হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:
﴿
قُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ﴾
অর্থাৎ:
শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->এমনিভাবে
কোনো জিনিসকে পরিপূর্ণ ভাবে পাওয়া অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:
وَلَا
تَعۡجَلۡ بِٱلۡقُرۡءَانِ مِن قَبۡلِ أَن يُقۡضَىٰٓ إِلَيۡكَ وَحۡيُهُۥۖ
﴾
[طه: ١١٤]
অর্থৎ:
এবং আল্লাহর ওহী আপনার প্রতি সম্পূর্ণ হবার পূর্বে আপনি তাড়াতাড়ি করবেন না। [সূরা
ত্বা-হা ১১৪]
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->অনুরূপ
বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:
﴿
وَقُضِيَ بَيۡنَهُم بِٱلۡحَقِّ﴾
[الزمر: ٦٩]
তাদের
মাঝে সঠিক ফয়সালা করা হয়েছে।
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->তদ্রূপ
সৃষ্টি অর্থেও ব্যবহার হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:
﴿
فَقَضَىٰهُنَّ سَبۡعَ سَمَٰوَاتٖ ﴾
[فصلت: ١٢]
অতঃপর
তিনি আকাশমন্ডলকে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন।
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->তাছাড়া
চুড়ান্ত ফয়সালার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়। যেমন আল্লাহ বলেন:
﴿
وَكَانَ أَمۡرٗا مَّقۡضِيّٗا ٢١ ﴾
[مريم: ٢١]
“এবং
ইহা নির্ধারণ করা ছিল।”
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->অনুরূপ
নির্দেশ অর্থেও আসে। যেমন আল্লাহ বলেন:
﴿
۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ ﴾
[الاسراء: ٢٣]
এবং
আপনার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে,
তোমরা
একমাত্র তারই ইবাদত কর।
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->অনুরূপ
উদ্দেশ্য পূরণ অর্থে ব্যবহার হয় যেমন:
فقضيت وطري “আমি আমার উদ্দেশ্য পূরণ করলাম।”
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->তদ্রূপ
দুই ব্যক্তির ঝগড়া মিমাংসা অর্থে ব্যবহৃত হয়।
<!--[if
!supportLists]-->-
<!--[endif]-->কখনো
আদায় অর্থে ব্যবহার হয়,
যেমন
আল্লাহ বলেন:
﴿
فَإِذَا قَضَيۡتُم مَّنَٰسِكَكُمۡ ﴾
[البقرة: ٢٠٠]
“যখন
তোমরা তোমাদের হজ্জের কাজ আদায় করবে।”
আল
কাযা القضاء শব্দটি
মূলত: মাসদার,
এর
নির্দেশ ওয়াজিব হওয়ার চাহিদা রাখে এবং এর উপর প্রমাণ করে। আর আল ইকতেযা
الاقتضاء হল
শব্দানুযায়ী বিভিন্ন অর্থ সম্পর্কে ধারণা থাকা। তাদের কথা لا أقضي منه العجب তাকে
দেখে আমি আশ্চর্য্য হব না।
আসমা‘য়ী
বলেছেন: يبقى ولا ينقضي বাকী
থাকবে কিন্তু শেষ হবে না।
প্রশ্ন-৪৬:
ভাগ্যের ভাল- মন্দ উভয়টি সাধারণভাবে কি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়?
উত্তর:
হ্যাঁ উভয়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে,
তিনি
বলেন: বাকী আল গারকাদে (কবরস্থান) আমরা একটি জানাযায় শরীক হলাম,
অতঃপর
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) এসে বসলেন,
আমরাও
তাঁর পাশে বসলাম। তাঁর নিকট একটি লাঠি ছিল এটি দ্বারা তিনি মাটিতে দাগ
কাটতেছিলেন,
অতঃপর
তিনি বললেন: (তোমাদের মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তি নেই,
এমন
কোনো নাফস নেই কিন্তু তার ঠিকানা জান্নাত বা জাহান্নামে লিখা হয়েছে,
দূর্ভাগ্য
বা সৌভাগ্যশালী লিখা হয়েছে) অতঃপর তিনি পাঠ করলেন:
﴿
فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ فَسَنُيَسِّرُهُۥ
لِلۡيُسۡرَىٰ ٧ وَأَمَّا مَنۢ بَخِلَ وَٱسۡتَغۡنَىٰ ٨ وَكَذَّبَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٩
فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡعُسۡرَىٰ ١٠ ﴾
[الليل: ٥، ١٠]
অর্থাৎ:
সূতরাং যে ব্যক্তি দান করবে এবং সংযত হবে এবং সৎ বিষয়কে সত্য জানবে;
অচিরেই
আমি তার জন্যে সুগম করে দেব সহজ পথ,
পক্ষান্তরে
যে ব্যক্তি কার্পণ্য করবে ও নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করবে;
অচিরেই
আমি তার জন্যে সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ। [সূরা লাইল : ৫-১০]
হাদীসে
এসেছে, তোমরা আমল করে যাও কেননা প্রত্যেকেই পরিচালিত,
অতঃপর
মন্দলোকগণ মন্দ কাজের জন্য পরিচালিত এবং সৎলোকগণ সৎ কাজের জন্য পরিচালিত। তারপর
তিনি পাঠ করলেন:
﴿
فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ ﴾
[الليل: ٥، ٦]
সূতরাং
যে ব্যক্তি দান করবে এবং সংযত হবে এবং সৎ বিষয়কে সত্য জানবে
প্রশ্ন-৪৭:
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ কি?
উত্তর:
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো হক ইলাহ নেই।
দলীল:
এবং তোমার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে,
তাকে
ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না। লা ইলাহা অর্থ: কোনো মা‘বুদ
নেই,
ইল্লা
ইয়্যাহ অর্থ: শুধু আল্লাহ বতীত।
প্রশ্ন-৪৮:
সেই তাওহীদ কোনটি যা নামায ও রোজার পূর্বে আল্লাহ তার বান্দার উপর ফরয
করেছেন?
উত্তর:
সেটি হল তাওহীদে ইবাদাত বা তাওহীদে উলুহিয়্যা। কাজেই আপনি শুধু এক আল্লাহকেই ডাকুন
যার কোনো শরীক নেই,
না
কোনো নবী আর না কোনো মানুষ।
আল্লাহ
বলেন:
﴿
وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨
﴾
[الجن: ١٨]
(এবং
সকল মাসজিদ আল্লাহর জন্য;
কাজেই
তোমরা তার সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।) সূরা জ্বিন ১৮
প্রশ্ন-৪৯:
ধৈর্যশীল ফকীর এবং কৃতজ্ঞশীল ধনীর মধ্যে কে বেশী উত্তম?
এবং
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার কোনো সীমা আছে কি?
উত্তর:
ধনী-গরীবের মাসআলা হল: ধৈর্যশীল এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী উভয়ই মূমিনদের মধ্যে ভাল
ব্যক্তি,
তাদের
মধ্যে সবচেয়ে ভাল হল সেই ব্যক্তি যে অধিক আল্লাহ ভীরু বা পরহেজগার।
আল্লাহ
বলেন: তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হল সে,
যে
পরহেজগার বা আল্লাহ ভীরু। সূরা হুজুরাত ১৩
আর
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সীমা : আলেমগণের নিকট প্রসিদ্ধ হল: ধৈর্য বলা হয় কোনো
ধরনের দুঃখ প্রকাশ না করা। আর শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা হল: আপনাকে আল্লাহ যে নেয়ামত
দিয়েছেন এর দ্বারা তার আনুগত্য করা।
প্রশ্ন-৫০:
আমাকে কিছু উপদেশ দিন?
উত্তর:
আপনাকে যে উপদেশ দিব এবং যার প্রতি উৎসাহ দিব তা হল: তাওহীদকে বুঝা,
তাওহীদ
সম্পর্কীয় বই পুস্তক পাঠ করা,
কারণ
এতে আপনার জন্য তাওহীদের হাকীকত প্রকাশ পাবে,
যার
জন্য আল্লাহ তার রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। এবং শির্কের হাকীকত প্রকাশ পাবে যা
আল্লাহ ও তার রাসূল হারাম করেছেন এবং তিনি বলে দিয়েছেন যে,
শির্ক
তিনি ক্ষমা করবেন না। শির্ককারীর উপর জান্নাত হারাম করেছেন। যে ব্যক্তি শির্ক করবে
তার আমল ধ্বংস হয়ে যাবে।
আর
তাওহীদের হাকিকত জানাই আসল ব্যাপার,
যার
জন্য আল্লাহ তার রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। আর এর দ্বারাই একজন ব্যক্তি পরিপূর্ণ ভাবে
মুসলিম হতে পারে এবং শির্ক ও শির্ককারীদের থেকে দূরে থাকতে পারে।
আমার
জন্য উপকারী কিছু কথা লিখে দিন।
আপনাকে
সর্ব প্রথম যে উপদেশ দিব সেটি হচ্ছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম)
আল্লাহ তা‘আলার
পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তার দিকে খেয়াল করা,
কেননা
মানুষের যা প্রয়োজন তিনি তাহাই আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন। যে সকল আমল আল্লাহর
নিকটবর্তী করবে এবং জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে তিনি তা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
আর যে সকল আমল আল্লাহ থেকে দূরে রাখবে এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী করবে তিনি তা
থেকে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। কাজেই আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত তার বান্দার উপর প্রমাণ
কায়েম করে রেখেছেন। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) প্রেরিত হওয়ার পর
আল্লাহর নিকট কারো কোনো ওজর বা অভিযোগ পেশ করা বাকী নেই।
আল্লাহ
তাঁর এবং অন্যান্য নবীদের ব্যাপারে বলেছেন:
﴿
۞إِنَّآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ كَمَآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ نُوحٖ وَٱلنَّبِيِّۧنَ
مِنۢ بَعۡدِهِۦۚ وَأَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ
وَيَعۡقُوبَ وَٱلۡأَسۡبَاطِ وَعِيسَىٰ وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهَٰرُونَ
وَسُلَيۡمَٰنَۚ وَءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ زَبُورٗا ١٦٣ وَرُسُلٗا قَدۡ قَصَصۡنَٰهُمۡ
عَلَيۡكَ مِن قَبۡلُ وَرُسُلٗا لَّمۡ نَقۡصُصۡهُمۡ عَلَيۡكَۚ وَكَلَّمَ ٱللَّهُ
مُوسَىٰ تَكۡلِيمٗا ١٦٤ ﴾
[النساء: ١٦٣، ١٦٤]
অর্থাৎ:
নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি যেমন প্রত্যাদেশ করেছিলাম নূহ এবং তার
পরে অন্যান্য নবীদের প্রতি এবং প্রত্যাদেশ করেছিলাম ইব্রাহীম,
ইসমাঈল,
ইসহাক,
ইয়াকূব
ও তৎবংশীয়গণের প্রতি এবং ঈসা,
আইয়ূব,
ইউনূস,
হারুন
ও সুলাইমানের প্রতি এবং আমি দাউদকে যাবূর প্রদান করেছিলাম।
আর
নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট পূর্বের বহু রাসূলের প্রসঙ্গ বর্ণনা করেছি এবং বহু রাসূল
রয়েছে যাদের কথা আমি আপনাকে বলিনি,
এবং
আল্লাহ মূসা (আ) এর সাথে প্রত্যক্ষ কথা বলেছেন। [সূরা নিসা ১৬৩-১৬৪]
তিনি
আল্লাহর নিকট থেকে সবচেয়ে মহা যে জিনিস নিয়ে এসেছেন এবং লোকদেরকে সর্ব প্রথম যে
জিনিসের নির্দেশ দিয়েছেন তা হল: এক আল্লাহর জন্য তাওহীদে ইবাদতকে স্বীকৃতি দেওয়া
যার কোনো শরীক নেই
এবং
একমাত্র তার জন্যই একনিষ্ঠ দ্বীন কায়েম করা। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন:
﴿
يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ ١ قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ ﴾
[المدثر: ١، ٣]
অর্থাৎ:
হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন,
সতর্কবাণী
প্রচার করুন এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা করুন। সূরা মুদ্দাচ্ছির ১-৩
অ-রববাকা
ফাকাবিবর অর্থ: তাওহীদ এবং বিশুদ্ধ ইবাদতের দ্বারা আপনার প্রভুর মহত্ম বর্ণনা করুন
যার কোনো শরীক নেই। আর এটি নামায,
রোজা,
যাকাত,
হজ্জ
এবং ইসলামের অন্যান্য বিধানাবলীর নির্দেশের পূর্বে এর নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে।
কুম
ফা-আনযির অর্থ: এক আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে শির্ক করা থেকে ভীতি প্রদর্শন করুন। এ
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যিনা,
চুরি,
সূদ,
মানুষকে
যুলুম করা এবং অন্যান্য বড় বড় পাপ থেকে ভীতি প্রদর্শনের পূর্বে।
আর
এ মূলনীতিটি দ্বীন ইসলামের মূলনীতির মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ
মূলনীতি,
এর
জন্যই আল্লাহ সকল সৃষ্টিকে তৈরী করেছেন।
যেমন
তিনি বলেন:
﴿
وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾
[الذاريات: ٥٦]
আমি
জ্বিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য। [সূরা যারিয়াত
৫৬]
এবং
এর জন্যই আল্লাহ রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। যেমন তিনি
বলেন:
﴿
وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ
وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ﴾
[النحل: ٣٦]
অর্থাৎ:
আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছি এ মর্মে যে,
তোমরা
আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। [সূরা নাহল ৩৬]
আর
এর জন্যই মানুষ মুসলিম এবং কাফের হিসাবে ভাগ হয়ে গিয়েছে,
সুতরাং
যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট এমন অবস্থায় আসবে যে সে তাঁর সাথে কাউকে শরীক
করেনি তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে,
আর
যে ব্যক্তি তার সাথে শরীক করবে সে দোযখে প্রবেশ করবে যদিও সে লোকদের চেয়ে বেশী
ইবাদত করে থাকে। এ কথার অর্থই হল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)। কেননা ইলাহ হলেন
তিনি,
যাকে
ডাকা হয়,
যার
নিকট কল্যাণ কামনা করা হয় এবং অকল্যাণ দূর করা হয়,
যাকে
ভয় করা হয় এবং যার উপর ভরসা করা হয় তিনিই প্রকৃত ইলাহ।
সমাপ্ত
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ইদরীস আলী
মাদানী
সম্পাদনা: ওবায়দুল্লাহ ইবন সোনামিয়া - ড. আবু বকর মুহাম্মাদ
যাকারিয়া
সূত্র: আল মাকতাব আত তাআউনী লিদ দাওয়াহ ওয়া
তাওইয়াতুল জালিয়াত, সালীল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন