Bismillah

Bismillah

শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৪

ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে শসা


শসা গোর্ড (লাউ-কুমড়া) পরিবার কিউকারবিটাসের অন্তর্গত অতি পরিচিত এক প্রকারের ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম কুকুমিস স্যাটিভাস। লতানো উদ্ভিদে জন্মানো ফলটি লম্বাটে আকৃতির এবং প্রায় ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এর বাইরের রঙ সবুজ। তবে পাকলে হলুদ হয়। ভেতরে সাদাটে সবুজ রঙের হয়, এবং মধ্যভাগে বিচি থাকে। এটি কাঁচা খাওয়া হয় বা সালাদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এর উৎপত্তি ভারতবর্ষে হলেও বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই এটি জন্মে। শসা সাধারণত গরমের সময় বেশি পাওয়া যায়। বেশ কয়েক জাতের শসা রয়েছে। এই ফলে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে এবং পানির পরিমাণ বেশি থাকে। খোসাসহ একটি কাঁচা শসার প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালরির পরিমাণ ২০ ক্যালরি।
শসার উপকারিতা : আমাদের আশপাশে থাকা সবজিগুলোর নিয়মিত ব্যবহারই আমাদের শারীরিক অনেক সমস্যার সমাধান করে। শসা আমাদের দেহের পানির অভাব পূরণ করে থাকে। কারণ, শসার খাদ্য উপাদানের মধ্যে ৯০ ভাগই হচ্ছে পানি। আমরা যদি দৈনিক চাহিদার সমপরিমাণ পানি পান করতে না পারি তাহলে শসা খেয়ে পানির সেই অভাব পূরণ করা সম্ভব। এই গরমে শরীরকে ঠা-া রাখতে শসা বেশ উপকারি। প্রচুর পরিমাণে পানি ছাড়াও শসায় রয়েছে অত্যন্ত কম পরিমাণে ক্যালরি। তাই আমরা যারা শরীরের ওজন কমানোর ব্যাপারে সচেতন তাদের জন্য শসা একটি প্রধান উপাদান।
শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে : ফাইবার ও ফ্লুইডেসমৃদ্ধ শসা শরীরে ফাইবার ও ওয়াটার ইনটেক বাড়াতে সাহায্য করে। গরমের দিনে শসার রসের সাথে সেলেরিরি জুস মিশিয়ে খেতে পারেন। এটা শরীরের তাপমাত্রা নরমাল রাখতে সাহায্য করবে। বাইরে রোদে ঘুরাফেরা করার কারণে সূর্যের তাপে শরীরের চামড়ায় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা থেকে শসা আমাদের অনেকটাই স্বস্তি দিতে পারে। এজন্য শসা চাক চাক করে কেটে শরীরের রোদে পোড়া অংশে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : শসায় বিদ্যমান ভিটামিন-সি, সিলিকা, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া শসায় রয়েছে স্টেরল নামের একধরনের উপাদান, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। স্টেরল মুটিয়ে যাওয়া রোধ করতেও সাহায়ক। শসা উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপ-দুটোকেই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে : শসা বা শসার রস ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, শসায় থাকা স্টেরল নামক উপাদান রক্তের কলেস্টরলের আধিক্য কমাতে ভূমিকা রাখে।
ক্যান্সার ও কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে মুক্ত রাখে : শসার ভেতরের জলীয় অংশ শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দিতে সক্ষম। নিয়মিত শসা খেলে কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে মুক্ত থাকা যায়। শসা কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ওভারিওর ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ও ইউটারিন ক্যান্সার।
অ্যাসিডিটি হ্রাস করে : শসাতে আছে অ্যারেপসিন নামের এনজাইম। তাই হজম ও কনস্টিপেশনের সমস্যার সমাধানে ডায়েটে শসা রাখা যেতে পারে। আলসার গ্যাস্ট্রোটাইটিস, অ্যাসিডিটির ক্ষেত্রেও তাজা শসার রস উপকারী। শরীরের পিএইচ সমতা বজায় রাখে শসা।
বৃক্ক সুস্থ থাকে : বৃক্ক (কিডনি), ইউরিনারি ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যায় ডায়েটে শসা রাখতে পারেন।
টিস্যুর উন্নয়নে সাহায্য করে : ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্যও শসা খুব ভালো কাজ করে। ত্বক পরিষ্কার রাখতে শসার সøাইস, জুস প্রভৃতি বেশ কাজে দেয়। শসায় উপস্থিত সিলিকা মালস, কার্টিলেজ, লিগামেন্টের কানেকটিভ টিস্যু গড়ে ওঠে শক্তিশালী ও মজবুত করে। খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ শসা নখ, দাঁত ও মাড়ির জন্য ভালো।
চুল ও নখকে উজ্জ্বল করে : শশায় আছে সালফার ও সিলিকা নামের দুটি উপাদান, যা আমাদের মাথার চুল ও নখকে উজ্জ¦ল ও শক্ত করে তোলে। এগুলো চুলের বৃদ্ধিকেও তরান্বিত করে। গাজর ও শসার রস একশাথে মিশিয়ে পান করলে শরীরের ইউরিক এসিডের ব্যথা দূর হয়।
রূপচর্চায় শসা : সহজলভ্য এবং সুলভ এই সবজিটির ব্যবহার শুধু সালাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি শসা আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্যও সমানভাবে উপকারী। তাই এটি স্থান করে নিয়েছে রূপসচেতন নারীদের ডায়েট চার্টে।
(১) তেলাক্ত ত্বকের জন্য শসা খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের ওপেন পোর কন্ট্রোল করতে বেশ উপকারী। মুখ ধোঁয়ার পর শুধু শসার রস টোনার হিসেবে মুখে লাগাতে পারেন অথবা একে আরো কার্যকরী করতে শসার রসের সাথে আপেল, সাইডার ভিনেগার, টমেটোর রস এবং এলভেরা জেল মিশিয়ে নিতে পারেন। (২) শসাতে থাকা ব্লিচিং প্রপার্টিজ ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করে ত্বক উজ্জ্বল এবং স্কিন টোন সমান করে। বাইরে থেকে এসে মুখ ধুয়ে শসার রস লাগান। এটি সান বার্ন দূর করবে।
(৩) একটি শসা ব্লেন্ডারে ভালো মতো ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করে ২ চামচ লেবুর রস এবং ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে মুখে এবং ঘাড়ে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বকের রুক্ষভাব দূর করে চেহারা উজ্জ্বল করে। (৪) শসার ৯৫% উপাদানই হচ্ছে পানি। এর ফলে শসা খাওয়ার মাধ্যমে ত্বক হাইড্রেটেড এবং ময়েশ্চারাইজড থাকে। শসার বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই এবং পটাশিয়াম যা ফাইন লাইন্স, রিংকেলসহ বার্ধক্যের বিভিন্ন ছাপ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল এবং যৌবনদ্বীপ্ত রাখে। (৫) ডার্ক সার্কেল (কালশিটে) কমাতে শসা বেশ কার্যকর। শসাতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট এবং সিলিকা চোখের ডার্ক সার্কেল কমিয়ে চোখের চারপাশের স্কিন ভালো রাখে। শসা সøাইস করে কেটে অথবা তুলার মধ্যে শসার রস লাগিয়ে সেই তুলা কিংবা শসার সøাইসটি চোখের উপর ২০ মিনিট রাখুন। নিয়মিত ব্যবহারে ডার্ক সার্কেল কমবে। এছাড়াও শসাতে থাকা এসকরবিক এসিড এবং ক্যাফেইক এসিড চোখের ফোলাভাব দূর করতেও বেশ কার্যকরী। (৬) তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ, লেবুর রস এবং শসা পেস্ট একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকিয়ে গেলে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি স্কিনের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে। (৭) শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে ১ চা চামচ ওটমিল এবং পরিমাণ মত শসা পেস্ট একসাথে মিশিয়ে আধাঘণ্টা রেখে দিন। মুখে এবং ঘাড়ে মিশ্রণটি ভালো মত মেখে ২০ মিনিট রাখুন। চাইলে এর সাথে মধুও যোগ করতে পারেন। মধু ত্বক ময়েশ্চারাইজড রাখবে। (৮) বয়সের ছাপ লুকাতে ২ টেবিল চামচ টক দই, আধা চামচ মধু এবং লেবুর রসের সাথে ২ চামচ গ্রেট করা শসা এবং ২টি ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ভালো মতো মেশান। এবার এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ফাইন লাইন্স, রিংকেল দূর করে ত্বক টানটান এবং সুন্দর করে। (৯) শসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সিলিকা যা নখ শক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত শসা খাওয়ার মাধ্যমে নখ ভাঙা কমে গিয়ে নখ শক্ত হয়। (১০)  ব্রনের সমস্যা দূর করতে ২ চা চামচ শশার রসের সাথে গোলাপ জল এবং মুলতানি মাটি মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এটি মুখে ভালো মতো লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রন কমে যাবে। (১১) চুলের বৃদ্ধিতে শসার ভূমিকা অতুলনীয়। সালফার, সোডিয়াম, সিলিকন, ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম এই সবগুলো উপাদানই শসাতে রয়েছে যেগুলো চুলের বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কিছু নিউট্রিয়েনটস। এছাড়াও এটি চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। শসা, টমেটো ইত্যাদি ব্লেন্ডারে মিক্স করে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। (১২) একটি শসার খোসা ছাড়িয়ে শুধু খোসা ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন। এবার একটি ডিমের মধ্যে ৩ চা চামচ অলিভ অয়েল প্রথমে ভালো মতো মিশিয়ে এরপর এর সাথে শসার খোসার পেস্ট মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। এরপর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি চুলের গোড়া মজবুত করে চুল স্বাস্থ্য উজ্জ¦ল করে তোলে। ইনকিলাব ডেস্ক :  - ঢাকা, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২১, ২৫ জমাদিউস সানী ১৪৩৫ হিজরী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রিন্ট পি ডি এফ

Print Friendly Version of this pagePrint Get a PDF version of this webpagePDF
“ডাক তোমার প্রভূর পথে প্রজ্ঞা এবং সদুপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সর্বত্তোম পন্থায়” (সূরা নাহলঃ১২৫)