প্রশ্নোত্তর
দারুল ইফতা
হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
-ইউসুফ
হোটেল হিলটন, মক্কা, সঊদী আরব।
উত্তর : ওমরাহর ইহরাম বাঁধার জন্য মক্কাবাসী হারাম
এলাকার বাইরে যাবেন ও সেখান থেকে ওমরাহর ইহরাম বেঁধে আসবেন। এজন্য সবচেয়ে
নিকটবর্তী হ’ল ৬ কিঃমিঃ উত্তরে ‘তান‘ঈম’ এলাকা। বিদায় হজ্জের সময় ওমরাহর ইহরাম
বাঁধার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে তার ভাই আব্দুর রহমানের সাথে
এখানে পাঠিয়েছিলেন (বুখারী হা/১৫/১৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৫৬,
২৬৬৭)। এটাই হ’ল জমহূর বিদ্বানগণের মত। এমনকি মুহেববুদ্দীন ত্বাবারী বলেন,
ওমরাহর জন্য মক্কাকে মীক্বাত গণ্য করেছেন, এমন কোন বিদ্বান সম্পর্কে আমি জানিনা’ (সুবুলুস
সালাম)।
মীক্বাত সম্পর্কে ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত বিস্তারিত
হাদীছটির শেষ দিকে বলা হয়েছে حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ ‘এমনকি মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকে’ (বুখারী
হা/১৫২৪; মুসলিম হা/১১৮১)। এক্ষণে উক্ত দুই হাদীছের মধ্যে বিদ্বানগণ যেভাবে
সমন্বয় করেছেন তা এই যে, ইবনু আববাস (রাঃ)-এর হাদীছটি ‘আম, যা কেবল হজ্জ ও হজ্জে
ক্বিরানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীছটি ‘খাছ’। যা কেবল
ওমরাহর জন্য প্রযোজ্য হবে। অতএব সর্বজনগৃহীত নীতি অনুযায়ী এখানে ‘খাছ’ অগ্রগণ্য
হবে এবং ওমরাহর ক্ষেত্রে আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীছের উপর আমল হবে। আর সেটাই সর্বদা হয়ে
আসছে। অর্থাৎ মক্কাবাসীগণ পৃথকভাবে ওমরাহর জন্য হারাম এলাকার বাইরে যাবেন ও সেখান
থেকে ইহরাম বেঁধে আসবেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১১/১৪৩-৪৭)।
উছায়মীন বলেন, যদি কেউ বলেন যে, আয়েশা (রাঃ) মক্কার
বাসিন্দা ছিলেন না। সেজন্য তাঁকে মক্কার বাইরে গিয়ে ওমরাহর ইহরাম বেঁধে আসতে বলা
হয়েছিল। আমরা বলব, বহিরাগতদের জন্য মক্কা থেকে ওমরাহর ইহরাম বাঁধায় কোন বাধা নেই।
কেননা তাদের জন্য মক্কা থেকে (৮ তারিখে) হজ্জের ইহরাম বাঁধায় কোন বাধা নেই। এক্ষণে
যদি মক্কা ওমরাহর ইহরামের জন্য মীক্বাত হ’ত, তাহ’লে সেটা মক্কাবাসী ও বহিরাগত
সকলের জন্যই হ’ত। বিষয়টি খুবই পরিষ্কার। দ্বিতীয়তঃ ওমরাহ হ’ল যিয়ারত। যা অবশ্যই
বাইরে থেকে আসার মাধ্যমে সম্পন্ন হ’তে পারে। যদি কেউ বলেন, এর ফলে মক্কা থেকে
ইহরাম বাঁধার নেকীতে ঘাটতি পড়ে যাবে। আমরা বলব, ঘাটতি হবে না। কেননা যে ব্যক্তি
মক্কা থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধেন, তিনি বায়তুল্লাহর ত্বাওয়াফ করতে পারেন না,
হারামের বাইরে গিয়ে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শেষে ফিরে না আসা পর্যন্ত।
অতএব যারা বলেন মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকে ওমরাহর জন্য
ইহরাম বাঁধবেন, তাঁদের কথা দলীল, অভিধান ও মর্ম সব দিক দিয়েই দুর্বল’ (ওছায়মীন,
শারহুল মুমতে‘ ‘আলা যাদিল মুসতানক্বে‘ ৭/৫২)।
আমরা মনে করি আয়েশা (রাঃ)-এর ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর গৃহীত আমলই এখানে অগ্রগণ্য। কেননা তিনি সর্বদা সহজটাকেই অগ্রাধিকার
দিতেন। এতদসত্ত্বেও সে যুগে অনেক কষ্ট করেই গভীর রাতে দুর্গম পথে আয়েশা (রাঃ)-কে
বাইরে গিয়ে ওমরাহর ইহরাম বেঁধে আসতে হয়েছিল। মক্কা থেকে জায়েয হলে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) নিজ স্ত্রীকে এভাবে কষ্ট দিতেন না। ছাহেবে সুবুলের ধারণা অনুযায়ী আয়েশাকে
খুশী করার জন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁকে এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন, যুক্তিটি
দুর্বল। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত। (আলোচনা দ্রষ্টব্য : ফাৎহুল বারী হা/১৫২৪;
সুবুলুস সালাম হা/৬৭৫-এর ব্যাখ্যা)।
-লিখন আবেদীন*
মিশিগান, আমেরিকা।
উত্তর : পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমার গোপনস্থান
ঢেকে রাখ। তবে তোমার স্ত্রী ও তোমার দাসী এর অন্তর্ভুক্ত নয় (ইবনু মাজাহ
হা/২৭৯৪; মিশকাত হা/৩১১৭)। উল্লেখ্য আয়েশা (রাঃ) থেকে ‘আমি রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর গোপন স্থান কখনো দেখিনি’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/৬৬২,
সনদ যঈফ)। এছাড়া সহবাসের সময় গোপনস্থান দেখলে ব্যক্তি অন্ধ হয়ে যায়’ মর্মের
বর্ণনাটি মওযূ বা জাল (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/১৯৫)।
* [লাবীব বা লোকমান এরূপ কোন ইসলামী নাম রাখুন (স.স.)]
-শওকত, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : সন্তান যতদিন উপার্জনক্ষম না হয়, ততদিন
পিতার অর্থ গ্রহণ করবে। কারণ সাধ্যের বাইরে আল্লাহ মানুষের উপর কোন কাজ চাপিয়ে দেন
না (বাক্বারাহ ২/১৮৬)। তবে কর্মক্ষম হলে তাকে নিজে হালাল রূযীর চেষ্টা করতে
হবে। আল্লাহ বলেন, হে মানুষ পৃথিবীর মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র, তা থেকে ভক্ষণ কর
এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (বাক্বারাহ
১৬৮)।
-গুলশান আরা
কালাই, জয়পুরহাট।
উত্তর : হ্যাঁ জায়েয। ঈদায়নের ছালাতের খুৎবার পর
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মহিলাদের কাতারে চলে যেতেন ও তাদেরকে উপদেশ দিতেন ও ছাদাক্বা
করার নির্দেশ দিতেন। তারা তাদের কানের দুল ও গলার হার খুলে বেলালের হাতে তুলে
দিতেন (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪২৯)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি আমার
ঘরের দরজা হ’তে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে দাঁড়িয়ে তাঁর কাঁধ ও কানের মধ্য দিয়ে
মসজিদের ভিতরে খেলোয়াড়দের দেখতাম (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২৪৪)।
উল্লেখ্য একদা মায়মূনা এবং উম্মে সালামা
(রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) থেকে
পর্দা করতে বলেছিলেন মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফ তিরমিযী হা/৫২৬; মিশকাত
হা/৩১১৬)।
-রাজু আহমাদ, সিলেট।
উত্তর : সাত দিনের কোন সত্যতা নেই। বরং কোন শিশুকে
পাঁচবার দুধ পান করালে শিশু দুধ সন্তান হিসাবে গণ্য হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, প্রথমে
দশ বার দুধ পান করার কথা কুরআনে বলা হয়। তার পর পাঁচ বারের কথা অবতীর্ণ হলে
দশবারের বিধান রহিত হয়ে যায়। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইন্তেকাল করেন। কিন্তু
কুরআনের উক্ত অংশ পঠিত হতে থাকে (মুসলিম হা/১৪৫২, মিশকাত হা/৩১৬৭)।
* [রাশেদ, রফীক, রেযাউল্লাহ বা অনুরূপ কোন ইসলামী নাম
রাখুন (স.স.)]
-জাসেম, দোহার, ঢাকা।
উত্তর : সন্তান উক্ত পিতার দিকে সম্পর্কিত হবে না
এবং সে পিতার সম্পদের ওয়ারিছ হবে না; বরং তার মায়ের দিকে সম্পর্কিত হবে এবং সে
কেবল মায়ের সম্পদের ওয়ারিছ হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লি‘আনের ফায়ছালায় সন্তানকে তার
মায়ের জন্য নির্ধারণ করেছিলেন (বুখারী হা/৬৭৪৮)।
-মা‘ছূম, ঘোড়ামারা, রাজশাহী।
উত্তর : বিক্রেতা সরাসরি গোনাহগার হবে না বটে,
কিন্তু এতে পাপের সহযোগিতা হবে। অতএব এরূপ ব্যবসা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কারণ এগুলি
অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাপের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা নেকী
এবং তাকওয়ার কাজে পরস্পরে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরে সহযোগিতা
করো না (মায়েদাহ ২)। তবে শুধুমাত্র শরী‘আত সম্মত ক্ষেত্রে বিক্রি করতে
সক্ষম হলে তা জায়েয হবে।
-আবুল কালাম, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট।
উত্তর : উক্ত আছারটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে,
যার সবগুলিই দুর্বল (দুর্রে মানছূর, ইবনু কাছীর, সূরা নিসা ৬৫ আয়াতের আলোচনা
দ্রঃ)।
-ফাহাদ, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : গাছ-পালা বা তার ছবি ঘরে রাখা যাবে। গাছ-পালা
মানুষ বা পশু-পাখির অনুরূপ প্রাণ ও বোধশক্তি সম্পন্ন নয়। জনৈক ব্যক্তি ইবনু আববাস
(রাঃ)-কে বললেন, আমি ছবি-মূর্তি অংকন করি। এটা আমার জীবিকা নির্বাহের পথ। তখন ইবনু
আববাস (রাঃ) বললেন, তুমি গাছ-পালার ছবি অঙ্কন করতে পার এবং যে বস্ত্তর প্রাণ নেই,
তার ছবি অঙ্কন করতে পার (বুখারী হা/২২২৫; মিশকাত হা/৪৫০৭)।
-ফরীদা, কুমিল্লা।
উত্তর : স্ত্রীর নিজস্ব আয় থেকে যেকোন নেকীর কাজে
তার ব্যয় করার স্বাধীনতা রয়েছে। উম্মুল মুমিনীন সওদা ও যয়নব (রাঃ) নিজ হাতে কাজ
করতেন ও ছাদাক্বা করতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮৭৫, ‘যাকাত’ অধ্যায়)।
ছাহাবী ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী স্বীয় উপার্জন থেকে তার স্বামীকে ছাদাক্বা
দিয়েছেন রাসূল (ছাঃ)-এর হুকুমে (বুখারী হা/১৪৬২)। আত্মীয়-স্বজনকে সহযোগিতা
করা অত্যন্ত নেকীর কাজ (বুখারী হা/১৪৬৬, মুসলিম হা/১০০০)। এতে ছাদাক্বার
নেকী ও আত্মীয়তা রক্ষার দ্বিগুণ নেকী লাভ হয় (তিরমিযী প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৯৩৯)।
তবে স্বামীর অসন্তুষ্টিতে ও তার অনুমতি ব্যতীত মাল ব্যয় করতে স্ত্রীকে নিষেধ করা
হয়েছে (আবুদাঊদ হা/৩৫৪৬, নাসাঈ হা/৩২৩১, ত্বাবারাণী; ছহীহাহ হা/৭৭৫)। অতএব
ঈমানদার স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে সম্মতি ও সহানুভূতির মাধ্যমে ব্যয় নির্বাহ করবে এবং
কেউ কারু প্রতি যুলুম করবে না।
-আলী, ফরীদাবাদ, ঢাকা।
উত্তর : এতে কোন বাধা নেই। ইবনে ওমর (রাঃ) একদা
রাসূল (ছাঃ)-কে নৌকাতে ছালাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেন,
ডুবে যাওয়ার ভয় না থাকলে তুমি নৌকায় দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় কর (হাকেম হা/১০১৯,
দারাকুৎনী, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৭৭)। আব্দুল্লাহ ইবনে আবী উৎবা (রাঃ) বলেন, আমি
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ, আবু সাঈদ খুদরী এবং আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে এক নৌকায়
ছিলাম। তাঁরা জামা‘আতবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করলেন ও তাঁদের একজন ইমামতি
করলেন। তারা নদীর কিনারে ছালাত আদায় করতে সক্ষম ছিলেন (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৮
‘নৌকা, রেলগাড়ী ও বিমানে ছালাত অধ্যায়’ অনুচ্ছেদ)।
উল্লেখ্য যে, পরিবহনে নফল ছালাতে কিবলা শর্ত নয়। তবে ফরয
ছালাতে কিবলা নির্ধারণের ব্যাপারে বিদ্বানগণ মত প্রকাশ করেছেন। যদি সেখানে কোন ওযর
না থাকে। কেননা রাসূল (ছাঃ) সফরকালে ফরয ছালাত বাহন থেকে নেমে কিবলামুখী হয়ে আদায়
করতেন (বুখারী হা/১০৯৭-৯৯)। আল্লাহ বলেন, তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও সেদিকেই
রয়েছে আল্লাহর চেহারা (বাক্বারাহ ২/১১৫) এবং রাসূল (ছাঃ) সর্বদা দু’টি
বিষয়ের মধ্যে সহজটি বেছে নিতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১৭)। অতএব
পরিবহন নিজের ইচ্ছা মতে চালানো সম্ভব হ’লে গাড়ি থেকে নেমে কিবলামুখী হয়ে ছালাত
আদায় করবে। সম্ভব না হলে পরিবহনে বসে সময়মত জমা ও ক্বছরসহ ছালাত আদায় করবে।
ওয়াক্তের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছলে পুনরায় উক্ত ছালাত আদায় করতেও কোন বাধা নেই। তখন
সেটি তার জন্য নফল হবে।
-আসাদুল ইসলাম
কাঁঠাল বাগান, ঢাকা।
উত্তর : ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মাদ আল-গাযালী তূসী
(৪৫০-৫০৫ হিঃ) প্রণীত গ্রন্থসমূহে বিশেষ করে তাঁর ‘এহইয়াউ ‘উলূমিদ্দীন’ ‘কিমিয়ায়ে
সা‘আদাত’ প্রভৃতি গ্রন্থে অনেক শিক্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ সমূহ রয়েছে। কিন্তু সেগুলি এবং তাঁর
অধিকাংশ গ্রন্থ ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদা এবং অসংখ্য জাল ও যঈফ হাদীছে পরিপূর্ণ।
সেকারণ কাযী আয়ায, মুহাম্মাদ ফিহরী আন্দালুসী, ত্বারতূসী, মুহাম্মাদ ইবনু আলী
মাযেরী, শামসুদ্দীন যাহাবী (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১৯/৩২৭-৪০), ইবনুল জাওযী
(তালবীসু ইবলীস ১৪৯ পৃঃ), ইবনু কাছীর (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১২/১৭৪),
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৭১, ১০/৫৫) প্রমুখ বিদ্বানগণ
তাঁর প্রণীত কিতাব সমূহ পড়ার ব্যাপারে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, তীক্ষ্ণ প্রতিভাধর ইমাম গাযালীর সংক্ষিপ্ত
জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। যেমন (১) তিনি জীবনের শুরুতে ‘ফালসাফা’ তথা দর্শন
শাস্ত্রের প্রতি অনুরক্ত হন। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে আসেন এবং এর তীব্র বিরোধিতা
করেন। অতঃপর (২) তিনি ইলমুল কালাম তথা তর্কশাস্ত্রের দিকে মনোযোগী হন এবং এর উছূল
তথা মূলনীতি বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করেন। এসময় তিনি দার্শনিকদের বিরুদ্ধে তীব্র
প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ও ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ উপাধিতে ভূষিত হন। এরপর (৩) তিনি ইলমুল
কালাম থেকে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাতেনী মাযহাব গ্রহণ করেন। অতঃপর (৪) তিনি
বাতেনী মাযহাব ছেড়ে তাছাউওফের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সব মাযহাবেই তিনি দক্ষতা অর্জন
করেন এবং সব মাযহাবের বিরুদ্ধেই তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অবশেষে তিনি
তিনি হাদীছের প্রতি ঝুঁকে পড়েন এবং আহলেহাদীছ হন এবং এর উপরেই তিনি মৃত্যুবরণ
করেন।
ইমাম আহমাদ ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হিঃ) বলেন, ‘তিনি শেষ
জীবনে আহলেহাদীছের তরীকায় ফিরে আসেন এবং ইলজামুল ‘আওয়াম আন ইলমিল কালাম’ বইটি রচনা
করেন’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৭২)। এর মাধ্যমে তিনি মুসলিম জাতিকে কিতাব ও
সুন্নাতের দিকে ফিরে আসার আহবান জানান। কিন্তু তাঁর ভ্রান্ত আক্বীদা সমূহ তাঁর
পূর্বেকার লেখনীর মধ্যেই থেকে যায়। যার মাধ্যমে বহু মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। আল্লাহ
তাঁকে ক্ষমা করুন।
অতএব যারা ইসলামের সঠিক আক্বীদা ও হাদীছ শাস্ত্র
সম্পর্কে সমধিক অবগত নন, তাদের জন্য গাযালীর গ্রন্থ সমূহ পাঠ করা হ’তে বিরত থাকা
আবশ্যক। যদিও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন সাপেক্ষে তাঁর মূল্যবান উপদেশ সমূহ গ্রহণ
করায় কোন আপত্তি নেই।
-ওমর ফারূক
কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ।
উত্তর : যে কোন নেককার মৃত মুসলিম ব্যক্তির নামের
শেষে ‘রহেমাহুল্লাহ’ (আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন) এবং জীবিত ব্যক্তির নামের পরে
‘হাফিযাহুল্লাহ’ (আল্লাহ তাকে হেফাযত করুন) যোগ করতে কোন বাধা নেই। এটি বান্দার
জন্য অপর বান্দার দো‘আ। রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাক্যটি ব্যবহার করেছেন (বুখারী
হা/১৭২৭, ৩৬৭৭, ৬৩৩৫)। তবে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী দ্বীনের খিদমতে জীবন উৎসর্গকারী
বিগত বিদ্বানগণের নামের শেষে ‘রাহেমাহুল্লাহ’ বাক্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অতএব
যেকোন মুসলিম মৃত ব্যক্তিকে তাদের সমান গণ্য করাটা অমর্যাদাকর বৈ কি!
-ফীরোয শাহ, লালবাগ, রংপুর।
উত্তর : ইসলাম কবুল করুক বা না করুক শেষনবী
মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনের পর থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষ তাঁর উম্মত। যারা
তাঁর দাওয়াত কবুল করে, তারা মুসলিম (أمة الإجابة)। আর যারা ইসলাম কবুল করেনি, তারাও
তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত (أمة الدعوة )। যাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া
মুসলিম উম্মাহর প্রধান দায়িত্ব (আলে ইমরান ৩/১১০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি’ (আম্বিয়া
২১/১০৭)। তিনি আরো বলেন, ‘আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও
সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না’ (সাবা ৩৪/২৮)।
হোসাইন শাকিল, মাদারটেক, ঢাকা।
উত্তর : আলেম হৌক বা জাহিল হৌক, কোন মুসলিম ব্যক্তির
জন্য নির্দিষ্ট কোন এক ব্যক্তির তাক্বলীদ করা, অর্থাৎ শারঈ বিষয়ে বিনা দলীলে তার
থেকে সকল মাসআলা গ্রহণ করা জায়েয নয়। কেননা ‘তাক্বলীদ’ হল নবী ব্যতীত অন্যের কোন
শারঈ বক্তব্যকে বিনা দলীলে কবুল করার নাম। পক্ষান্তরে ছহীহ দলীল অনুযায়ী নবীর
অনুসরণ করাকে বলা হয় ‘ইত্তেবা’। একটি হ’ল দলীল ছাড়াই অন্যের রায়ের অনুসরণ, অন্যটি
হ’ল দলীলের অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ। অন্য কথায় ‘তাক্বলীদ’ হ’ল রায়ের
অনুসরণ, ‘ইত্তেবা’ হ’ল রেওয়ায়াতের অনুসরণ। ইসলামে তাক্বলীদ নিষিদ্ধ এবং ইত্তেবা
প্রশংসিত। কোন মানুষ যেহেতু ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তাই মানব রচিত কোন মতবাদই, চাই তা
ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক যাই হোক না কেন, প্রকৃত সত্যের সন্ধান দিতে পারে
না। সেই মতবাদে পৃথিবীতে শান্তিও আসতে পারে না। আর এ জন্যই নবী ব্যতীত অন্যের
তাক্বলীদ নিষিদ্ধ এবং নবীর ইত্তেবা মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে অপরিহার্য। অতএব যার
যে বিষয়ে জানা নেই, তিনি সে বিষয়ে অন্যকে ছহীহ হাদীছের দলীলসহ জিজ্ঞেস করবেন।
প্রয়োজনে একাধিক আলেমকে জিজ্ঞেস করবেন।
-আব্দুল জাববার
দশমাইল, কাহারোল, দিনাজপুর।
উত্তর : পাপ থেকে হেফাযত এবং পূর্ণ নিরাপত্তার
মধ্যে থাকার শর্তে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে পারস্পরিক সম্মতিতে দীর্ঘ সময় দূরে থাকায়
শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে পাপের সাথে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে অল্প দিনের জন্য
হলেও দূরে থাকা বৈধ নয়। ওমর (রাঃ) নিজ কন্যা হাফছাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করে সে সময়ে
মুজাহিদদের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস বাইরে থাকার ব্যাপারে সময় নির্ধারণ করেছিলেন (মুছান্নাফ
আব্দুর রাযযাক হা/১২৫৯৪)।
-আব্দুল্লাহেল কাফী
ছোট বনগ্রাম, রাজশাহী।
উত্তর : সতর ও লেবাস সম্পর্কে চারটি শারঈ মূলনীতি
অনুসরণীয় : (১) পোষাক পরিধানের উদ্দেশ্য হবে দেহকে ভালভাবে আবৃত করা। যাতে
দেহের গোপনীয় স্থান সমূহ অন্যের চোখে প্রকট হয়ে না ওঠে (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৪
‘ক্বিছাছ’ অধ্যায়-১৬, অনুচ্ছেদ-২)। (২) ভিতরে-বাইরে তাক্বওয়াশীল হওয়া। এজন্য
ঢিলাঢালা, ভদ্র ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান করা। হাদীছে সাদা পোষাক পরিধানের নির্দেশ
এসেছে (আ‘রাফ ৭/২৬; মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৮ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘ক্রোধ ও
অহংকার’ অনুচ্ছেদ-২০; তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৩৫০ ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২; আহমাদ, নাসাঈ,
তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৩৩৭)। (৩) অমুসলিমদের সদৃশ না হওয়া (আহমাদ, আবুদাঊদ,
মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২)। (৪) অপচয় ও অহংকার প্রকাশ না পাওয়া। এজন্য
পুরুষ যেন সোনা ও রেশম পরিধান না করে এবং টাখনুর নীচে কাপড় না রাখে (মুত্তাফাক্ব
‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৪৩১১-১৪, ৪৩২১; নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৩৮১)। উক্ত
মূলনীতি সমূহের আলোকে মুসলমানদের পোষাক নির্ধারণ করতে হবে। উল্লেখ্য যে,
অমুসলিমদের বিপরীতে বিভিন্ন দেশে যেগুলি ইসলামী পোষাক হিসাবে চালু আছে, সেগুলি
সেভাবেই গণ্য হবে।
-রেযওয়ানুল ইসলাম
তাহেরপুর, রাজশাহী।
উত্তর : ‘উলুল আমর’ অর্থ শাসন ও কর্তৃত্বের
অধিকারী। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘উলুল আমর’ যেকোন শাসক ও আলেম হতে পারেন;
যখন তাঁরা আল্লাহকে মানার নির্দেশ দেন এবং তাঁর অবাধ্যতায় নিষেধ করেন’ (তাফসীর
ইবনে কাছীর, সূরা নিসা ৫৯ আয়াতের ব্যাখ্যা)।
আল্লামা নাসাফী (রহঃ) বলেন, ‘উলুল আমর’ হলেন
রাষ্ট্রনায়ক কিংবা আলেমগণ। কিন্তু তাঁরা যদি সত্যের বিরোধিতা করেন তাহলে তাঁদের
কথা মানা যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِيْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ অর্থাৎ ‘সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতায়
সৃষ্টির প্রতি কোন আনুগত্য নেই’ (তাফসীরে নাসাফী, ১/১৮০ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৬৯৬;
ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫২০)।
নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (রহঃ) বলেন, তাক্বলীদ
পন্থীরা বলে যে, ‘উলুল আমর’ হলেন আলেমগণ। অথচ মুফাসসিরগণ বলেছেন, ‘উলুল আমর’
প্রথমতঃ শাসকগণ অতঃপর আলেমগণ। এঁদের কারো কথা গ্রহণ করা যাবে না যতক্ষণ না তাঁরা
আল্লাহর রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী চলার নির্দেশ দেন। যদি এটা মেনে নেওয়া হয় যে,
কিছু আলেম এমনও আছেন, যারা লোকদেরকে তাঁদের কথা বিনা দলীলে মেনে নিতে বলেন, তাহলে
তাঁরা লোকদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে পথ দেখাবেন। এমতাবস্থায় তাদের কথা গ্রহণ
করা যাবে না’ (তাফসীরে রূহুল বায়ান, ১/২৬৩-২৬৪ পৃঃ)।
আল্লাহ রাববুল আলামীন প্রত্যেক সৃষ্টির মাঝেই সমাজবদ্ধ
জীবনের সহজাত প্রবণতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আর পবিত্র কুরআনে তিনি মুসলিম উম্মাহকে
হাবলুল্লাহর মূলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন (আলে ইমরান ৩/১০৩)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের উপর জামা‘আতবদ্ধ থাকা ফরয করা হ’ল এবং বিচ্ছিন্ন
থাকা নিষিদ্ধ করা হ’ল। কেননা শয়তান একক ব্যক্তির সাঙ্গে থাকে এবং সে দু’জন থেকে
দূরে থাকে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যস্থলে থাকতে চায়, সে যেন
জামা‘আতবদ্ধ জীবনকে অপরিহার্য করে নেয়’ (তিরমিযী হা/২১৬৫)। তিনি বলেন,
‘জামা‘আতের উপর আল্লাহর হাত থাকে’ (তিরমিযী হা/২১৬৬; মিশকাত হা/১৭৩)।
ইসলামী নেতৃত্ব গড়ে উঠবে কেবল বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের
ভিত্তিতে। যেখানে যোগ্য ব্যক্তিদের পরামর্শের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হবে,
যেভাবে খুলাফায়ে রাশেদীন নির্বাচিত হয়েছিলেন (মুসলিম হা/৪৮১৮)। এভাবে যুগ
যুগ ধরে আমীরের আনুগত্য অব্যাহত রয়েছে। ইসলামী খেলাফত না থাকলেও কোন যুগে আমীরের
আনুগত্য স্থগিত হয়নি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তা স্থগিত হবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত আমীর
কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপর নিজে অটল থাকবেন এবং তাঁর কর্মীদের সেভাবে নির্দেশ
দিবেন।
মাসঊদ, মান্দাই, সিঙ্গাপুর।
উত্তর : বীর্য পবিত্র। জ্যেষ্ঠ তাবেঈ হুমাম বিন
হারেছ একদিন আয়েশা (রাঃ)-এর মেহমান হন। এমতাবস্থায় সকালে তিনি কাপড় ধুতে থাকলে
আয়েশা (রাঃ)-এর দাসী সেটা দেখেন এবং তাঁকে সেটা অবহিত করেন। তখন আয়েশা (রাঃ)
বললেন, তার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট ছিল যে, সে বীর্য দেখলে কেবলমাত্র সে স্থানটি ধুয়ে
ফেলবে। আর না দেখা গেলে স্থানটিতে কেবল পানি ছিটিয়ে দিবে। কেননা আমি রাসূল
(ছাঃ)-এর কাপড় থেকে শুকনো বীর্য ঘষা দিয়ে তুলে ফেলেছি এবং তিনি সেই কাপড়েই ছালাত
আদায় করেছেন’ (আবুদাঊদ হা/৩৭১, মুসলিম হা/২৮৮, ‘বীর্য সম্পর্কীয় বিধান’
অনুচ্ছেদ)। তাছাড়া স্বপ্নদোষে নাপাক অবস্থায় পানি না পেলে কেবল তায়াম্মুমের
মাধ্যমে ছালাত আদায় করা জায়েয (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৭-২৮)। অতএব
বীর্য পবিত্র। তবে ময়লা ছাফ করার স্বার্থে তা পরিষ্কার করা আবশ্যক (লাজনা
দায়েমা ৫/৩৮১)।
- আব্দুল্লাহ
পাঁচরুখি মাদরাসা, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি জাল (সিলসিলা
যঈফাহ হা/৩৬)। একটি দেশে মুমিন-কাফির সবধরনের মানুষ বসবাস করে। আর নিজের দেশকে
সবাই ভালবাসে। তাই বলে কি তাতে কোন কাফির মুমিন হ’তে পারবে? এগুলি আদৌ কোন হাদীছ
নয়; বরং বানোয়াট বক্তব্য। যা হাদীছের নামে সমাজে চালু করা হয়েছে।
আরীফুল ইসলাম
ছোট বনগ্রাম, রাজশাহী।
উত্তর : দুপুরে বিশ্রাম নেওয়া উত্তম। বিভিন্ন
হাদীছে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক এর প্রমাণ পাওয়া যায় (বুখারী
হা/২৯১০, ৯৪১, আবুদাঊদ হা/২৪৯০)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা দুপুরে
বিশ্রাম নাও। কেননা শয়তান দুপুরে বিশ্রাম নেয় না’ (ছহীহাহ হা/১৬৪৭; ছহীহুল
জামে‘ হা/৪৪৩১)।
-ইমরুল হোসাইন
কানসাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : হজ্জ ও ওমরাহ দু’টি পৃথক ইবাদত। হজ্জের
সফরে একাধিক ওমরাহ করে থাকলে উক্ত ওমরাহ কবুল হবে না। কিন্তু এর কারণে তার হজ্জ
কবুল হবে না এমনটি নয়। তাছাড়া তিনি এটি অজ্ঞতা বশে করেছেন। উল্লেখ্য যে, বিদ‘আতীর
কোন নেক আমল কবুল হবে না’ মর্মে বর্ণিত হাদীছ সমূহের ব্যাপারে বিদ্বানগণ চার
প্রকার ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। (১) এমন বিদ‘আত যা মুসলমানকে কাফের বানিয়ে দেয়।
তার সমস্ত আমলই নিস্ফল হবে। (২) বিদ‘আতীর ঐ আমলটিই কেবল নিস্ফল হবে, যেটি সে
করেছে। (৩) বিদ‘আতী তার নেক আমলের প্রতিদান পাবে না। ফলে সেটি যেন কবুল হয়নি। (৪)
হাদীছগুলি বিদ‘আতের বিরুদ্ধে ধমকি স্বরূপ। যেন কেউ বিদ‘আত না করে’ (শাত্বেবী,
আল-ই‘তিছাম ১/১০৮-১১২ পৃঃ)।
নূরুল ইসলাম সরকার
পাঁচবিবি, জয়পুরহাট।
উত্তর : কেবল সূরা ফাতিহাতেই ছালাত শুদ্ধ হবে। তবে
প্রত্যেক ছালাতের প্রথম দুই রাক‘আতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পাঠ করা সুন্নাতে
মুওয়াক্কাদা। রাসূল (ছাঃ) কখনো তা পরিত্যাগ করেননি। অতএব ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ তা
ত্যাগ করবে না। তবে ভুলবশতঃ প্রথম দুই রাক‘আতে সূরা ফাতিহার পরে অন্য সূরা না
পড়লেও ছালাত হয়ে যাবে এবং এর জন্য কোন সহো সিজদা দিতে হবে না (বুখারী হা/৭৭২)।
বেলাল হোসাইন
ফতেহপুর, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : পণ্যের ঘাটতির সুযোগে অধিক মুনাফার লোভে
কৃত্রিমভাবে মূল্য বৃদ্ধি করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা
করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২০
‘ক্বিছাছ’ অধ্যায়)। তবে যদি পণ্যের ঘাটতির কারণে সাধারণভাবে বাজার মূল্য
বৃদ্ধি পায়, সে অবস্থায় মূল্য যত বেশীই হোক না কেন বাজার দরে বিক্রয় করা
শরী‘আতসম্মত। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, লোকেরা বলল যে, হে আল্লাহর রসূল! দাম বেড়ে
গেছে। অতএব আপনি মূল্য নির্ধারণ করে দিন। তখন রসূল (ছাঃ) বললেন, আল্লাহই মূল্য
নির্ধারণকারী, তিনি সংকোচনকারী, তিনি অধিক দানকারী এবং তিনিই রিযিক দানকারী। আর
আমি আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হতে চাই যে, তোমাদের কেউ যেন আমার কাছে রক্ত
কিংবা সম্পদের যুলুমের দাবীদার না থাকে’ (তিরমিযী হা/১৩১৪; ইবনু মাজাহ হা/২২০০;
আবুদাঊদ হা/৩৪৫১)।
রামাযান আলী, খুলনা।
উত্তর : পিতা সন্তানের কোন দেখাশুনা বা ভরণ-পোষণ
না দিলে তার জবাবদিহিতা আল্লাহর দরবারে তিনিই করবেন। এ কারণে সন্তান তার দায়িত্ব
পালন থেকে বিরত থাকবে না। পিতা পাপ করলে এর জন্য সন্তান দায়ী নয়; আবার সন্তান পাপ
করলে তার জন্য পিতা দায়ী নন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা সৎপথ অবলম্বন করবে তারা তো
নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য সৎপথ অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা নিজেদের
ধ্বংসের জন্যই পথভ্রষ্ট হবে। আর কেউ অন্য কারু (পাপের) বোঝা বহন করবে না’ (বনী
ইসরাঈল ১৭/১৫)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেন, পিতা হ’লেন সন্তানের জন্য জান্নাতের
মধ্যম দরজা স্বরূপ। যে চায় সে উক্ত দরজার হেফাযত করবে। আর যে চায় তা বিনষ্ট করবে’ (তিরমিযী
হা/১৯০০; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬৩)। অতএব পিতা-মাতা সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব
পালন না করলেও সন্তান তার পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে এবং তার দেখাশুনা করবে।
-আব্দুল্লাহ ফুয়াদ
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত বক্তব্যটি সঠিক। অন্ধ
ব্যক্তি যদি পরহেযগার হয় এবং অন্ধত্বকে আল্লাহর দেওয়া মনে করে ধৈর্য করলে আল্লাহ
তাকে ছবরের বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন। আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি যখন আমার কোন বান্দার দু’টি প্রিয়
বস্ত্তকে বিপদগ্রস্ত করি, আর সে তাতে ছবর করে, আমি তাকে এর বিনিময়ে জান্নাত দান
করব। প্রিয় বস্ত্তদ্বয় হ’ল তার চক্ষুদ্বয়’ (বুখারী হা/৫৬৫৩, মিশকাত হা/১৫৪৯)।
-যহূরুল ইসলাম, বগুড়া।
উত্তর : অন্যান্য ছালাতের ন্যায় জানাযার ছালাতেও
উভয় দিকে সালাম ফিরাতে হয়। আব্দুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, লোকেরা তিনটি কাজ
ছেড়ে দিয়েছে, যেগুলো রাসূল (ছাঃ) করতেন। তার একটি হ’ল, জানাযার ছালাতের সালাম
অন্যান্য ছালাতের ন্যায় হওয়া (বায়হাক্বী কুবরা হা/৭২৩৯, সনদ হাসান, আলবানী,
আহকামুল জানায়েয, মাসআলা নং ৮৪)। তবে শুধু ডান দিকেও সালাম ফিরানো যায় (দারাকুৎনী
হা/১৮৩৯ ও ১৮৬৪; সনদ হাসান, আহকামুল জানায়েয, মাসআলা নং ৮৫)।
-আকরাম আলী
কালীগঞ্জ, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়।
উত্তর : নির্দিষ্টভাবে কেবল জুম‘আর দিন ছিয়াম পালন
করা যাবে না। তার আগে বা পরে একদিন যোগ করে ছিয়াম রাখতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ)
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন কেবল জুম‘আর দিন নির্দিষ্ট করে
ছিয়াম পালন না করে তার একদিন আগে বা পরে ছিয়াম রাখা ব্যতীত (মুত্তাফাক্ব আলাইহ,
মিশকাত হা/২০৫১ ‘নফল ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ)। তবে ঐ দিন ক্বাযা বা অন্য কোন ছিয়াম
রাখলে সেটি স্বতন্ত্র (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৫২)।
-কামাল মিয়াঁ
রিয়াদ, সঊদী আরব।
উত্তর : করা যাবে। আত্মহত্যা করা জঘন্য অপরাধ
হ’লেও এর কারণে সে কাফের হয়ে যায় না, বরং মুসলমানই থাকে। আর যেকোন মুসলমানের জন্য
দান-খয়রাত ও দো‘আ করা যায়। জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদীনায়
হিজরত করেন, তখন তুফায়েল বিন আমরের সঙ্গে অন্য আরেকজন লোকও হিজরত করে। মদীনার
আবহাওয়া অনুকূলে না হওয়ায় অসহ্য হয়ে লোকটি স্বীয় হাতের আঙ্গুলসমূহের গিরা কেটে
ফেলে। ফলে অধিক রক্ত ক্ষরণে সে মৃত্যুবরণ করে। তারপর তুফায়েল বিন আমর একদিন
স্বপ্নযোগে লোকটিকে খুব ভাল অবস্থায় দেখেন। কিন্তু তার হাত দু’খানা ছিল আবৃত। তিনি
তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার হাত দু’টি আবৃত কেন? জবাবে সে বলল, মদীনায় হিজরত করার
কারণে মহান আল্লাহ হাত দু’টি ছাড়া আমার সবকিছুই ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তুফায়েল
স্বপ্নের ঘটনা নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে বললে তিনি আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন। ফলে তার
হাত দু’টিও ভাল হয়ে যায় (মুসলিম হা/১১৬; ‘আত্মহত্যাকারী কাফের না হওয়া’
অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৩৪৫৬)। উল্লেখ্য, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত অন্য
হাদীছে এসেছে ‘কেউ আত্মহত্যা করলে সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে’ (মুসলিম
হা/১০৯)। ছহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নববী (রহঃ) উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায়
বলেন, এখানে خالدًا مخلدًا
এর মর্ম হ’ল সুদীর্ঘকাল ও অধিককাল, চিরস্থায়ী নয় (মুসলিম শরহ নববী ২/১২৫,
হা/১১৩-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। অর্থাৎ দীর্ঘকাল সে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে এবং
পরে জান্নাতে যাবে। আর চিরস্থায়ী শাস্তি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যে আত্মহত্যাকে
হালাল বলে বিশ্বাস করে। এরূপ বিশ্বাস করার কারণে সে কাফের হয়ে যাবে। আর কাফের
নিঃসন্দেহে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। অতএব উভয় হাদীছের মধ্যে কোন বিরোধ নেই।
-আব্দুল হাকীম
গোমস্তাপুর, চাপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : এতে শরী‘আতে কোন বাধা নেই। আব্দুল্লাহ
ইবনে ওমর (রাঃ) আযারবাইজান সফরে গেলে পুরো বরফের মৌসুম সেখানে আটকে যান ও ছয় মাস
যাবৎ ক্বছর করেন (বায়হাক্বী ৩/১৫২ পৃঃ; ইরওয়া হা/৫৭৭ সনদ ছহীহ)। অনুরূপভাবে
হযরত আনাস (রাঃ) শাম বা সিরিয়া সফরে গিয়ে দু’বছর সেখানে থাকেন ও ক্বছর করেন (ফিক্বহুস
সুন্নাহ ১/২১৩-১৪ পৃঃ; মিরক্বাত ৩/২১১ পৃঃ)। সুতরাং স্থায়ী মুসাফির যেমন
জাহায, বিমান, ট্রেন, বাস ইত্যাদির চালক ও কর্মচারীগণ সফর অবস্থায় সর্বদা ছালাতে
ক্বছর করতে পারেন (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৮৭ পৃঃ)।
-আব্দুল লতীফ
ধুরইল, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : মসজিদের প্রয়োজন না থাকলে মসজিদ কমিটির
সম্মতিতে উক্ত জমিতে ঈদগাহ অথবা মাদরাসার মাঠ করাতে শরী‘আতে কোন বাধা নেই (ফিক্বহুস
সুন্নাহ ‘ওয়াকফ’ অধ্যায় ৩/৩১২)।
-আলী, ফরীদাবাদ, ঢাকা।
উত্তর : ছালাতের ১ম রাক‘আতের শুরুতে ‘আঊযুবিল্লাহ’
ও ‘বিসমিল্লাহ’ অতঃপর প্রতি রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরার পূর্বে বিসমিল্লাহ
পাঠ করা সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) যেকোন সূরা তেলাওয়াতের পূর্বে বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন (মুসলিম
হা/৪০০)। এছাড়া বিসমিল্লাহ সূরা সমূহের মাঝে পার্থক্য নির্দেশকারী একটি আয়াত (আবুদাঊদ
হা/৭৮৮, মিশকাত হা/২২১৮)।
আবুবকর, চাঁচড়া, যশোর।
উত্তর : পারস্পরিক সাক্ষাতে সালাম করা সুন্নাত (আবুদাঊদ
হা/৫২০০, মিশকাত হা/৪৬৫০)। আর সালামের পর মুছাফাহা করতে হবে। একদা আনাস (রাঃ)
রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ যখন তার বন্ধুর সাথে
সাক্ষাৎ করবে তখন সে কি তার জন্য মাথা ঝুঁকাবে? তিনি বললেন, না। আনাস (রাঃ) বললেন,
তবে কি তাকে জড়িয়ে ধরবে বা কোলাকুলি করবে বা চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। বরং তার
সাথে মুছাফাহা করবে (তিরমিযী হা/২৭২৮, ইবনু মাজাহ হা/৩৭০২, মিশকাত হা/৪৬৮০;
ছহীহাহ হা/১৬০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন কোন মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাথে
সাক্ষাৎ করে অতঃপর তার হাত ধরে করমর্দন করে, তখন উভয়ের গুনাহ সমূহ (ছগীরা)
আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে এমনভাবে ঝরে পড়ে যায়, যেমন শীতকালে গাছের পাতা সমূহ ঝরে যায়।
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ছাহাবীগণ সাক্ষাত হ’লে পরস্পরে মুছাফাহা করতেন এবং সফর থেকে
ফিরে আসলে কোলাকুলি করতেন (ত্বাবারানী আওসাত্ব হা/৯৭, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৪৭)।
স্মর্তব্য যে, দুইজনের চার হাত মিলানো ও বুকে হাত
লাগানোর প্রচলিত প্রথা সুন্নাত বিরোধী আমল (ইবনু মাজাহ হা/৩৭০২; তিরমিযী
হা/২৭২৮; মিশকাত হা/৪৬৮০)। এছাড়া হাতে বা কপালে চুমু খাওয়া, পায়ে হাত দিয়ে
কদমবুসি করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ ‘যঈফ’ (তিরমিযী হা/২৭৩৩; ইবনু মাজাহ
হা/৩৭০৪-০৫; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৯৭৫-৭৬, আলবানী সনদ যঈফ)।
সুবেদার আব্দুস সাত্তার
নবীনগর, সাভার।
উত্তর : কথাটি ভিত্তিহীন। আহলেহাদীছ হওয়ার জন্য
হাদীছ মুখস্ত করা শর্ত নয়, বরং সার্বিক জীবনে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের যথাযথ
অনুসরণ করা আবশ্যক ।
-আতাউর রহমান, বান্দাইখাড়া, নওগাঁ।
উত্তর : মাইয়েতের জন্য জানাযার ছালাত ব্যতীত অন্য
কোন সম্মিলিত দো‘আর অনুষ্ঠান নেই। অতএব জানাযার পরে পুনরায় মসজিদে বা বাইরে তার
জন্য সম্মিলিতভাবে দো‘আ করা বিদ‘আত। রাসূল (ছাঃ) কোন মাইয়েতকে কবরস্থ করার পর ছাহাবায়ে
কেরামকে বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ় থাকার
জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ কর। কেননা সত্বর সে জিজ্ঞাসিত হবে’(আবুদাউদ হা/৩২২১,
মিশকাত হা/১৩৩)। অতএব দাফন কার্য শেষে প্রত্যেকে বলবে, اَللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُ وَثَبِّتْهُ ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর
এবং তাকে (জবাব দানে) দৃঢ় রাখ’। তবে মসজিদের ইমাম ছাহেব মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে
মুছল্লীদের নিকটে মাইয়েতের জন্য দো‘আ চাইতে পারেন (বুখারী হা/১৩২৭)। যা
প্রত্যেকে পৃথক ভাবে করবেন।
-আব্দুল হামীদ, লালমণিরহাট।
উত্তর : এমর্মে বর্ণিত হাদীছটি মুনকার ও যঈফ।
বর্ণনাটি হ’ল- রাসূল (ছাঃ) একদা একটি যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ছাহাবায়ে কেরামকে বললেন,
আমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে ফিরে আসলাম। অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হল বড়
জিহাদ কি? তিনি বললেন, স্বীয় প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করা (বায়হাক্বী,
সিলসিলা যঈফাহ হা/২৪৬০)। নিঃসন্দেহে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ অতীব কষ্টসাধ্য এবং
সদা-সর্বদা মুমিনকে এ জিহাদে লিপ্ত থাকতে হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সর্বোত্তম জিহাদ
হ’ল স্বীয় প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করা (ছহীহুল জামে‘ হা/১০৯৯)। তিনি
বলেন, উত্তম জিহাদ হ’ল, যে আল্লাহর জন্য স্বীয় প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করে (ত্বাবারাণী,
ছহীহাহ হা/১৪৯১)। তবে তা কখনোই কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদের সাথে তুলনীয় নয়।
কেননা ময়দানের মুজাহিদ নিহত হ’লে আল্লাহর নিকটে ‘শহীদ’ হিসাবে গণ্য হন। কিন্তু
প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদকারী ব্যক্তি মারা গেলে শহীদ হিসাবে গণ্য হন না।
-কেরামত আলী, দুপচাঁচিয়া, বগুড়া।
উত্তর : স্ত্রী স্বামীকে ‘খোলা’ করে থাকলে স্বামীকে
তাতে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। স্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কুমতলব থাকলে কোনরূপ
মালের বিনিময় ছাড়াই আদালত উভয়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। ছাবিত বিন
ক্বায়েস-এর স্ত্রীকে ‘খোলা’-র মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে
ছিলেন। খোলা-র ইদ্দত মাত্র এক ঋতু (বুখারী হা/৫২৭৩; নাসাঈ হা/৩৫১০; মিশকাত
হা/৩২৭৪; দ্র: ‘তালাক ও তাহলীল’ বই পৃঃ ১৫)।
-আব্দুর রহমান, বংশাল, ঢাকা।
উত্তর : এটি তাঁদের যুক্তি মাত্র। যেখানে বিষয়টি
ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত, সেখানে যুক্তির কোন স্থান নেই। রাসূল (ছাঃ)-এর
বক্ষবিদারণের ঘটনা দু’বার ঘটেছিল। (১) দুধ মা হালীমার নিকটে ৪ বা ৫ বছর বয়সে (মুসলিম
হা/১৬২, আনাস (রাঃ) হ’তে; মিশকাত হা/৫৮৫২)। (২) হিজরতের পূর্বে মেরাজে গমনকালে
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৬৪)। এছাড়া আনাস (রাঃ) নিজে তাঁর বুকে
সেলাইয়ের চিহ্ন দেখেছেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৫২)।
-আব্দুল লতীফ, হালিশহর, চট্টগ্রাম।
উত্তর : পাকা চুল ও দাড়ি উঠানো যাবে না। রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা পাকা চুল তুলে ফেলো না। কেননা পাকা চুল হ’ল মুসলমানের
জ্যোতি। কোন মুসলমানের একটি চুল পেকে গেলে আল্লাহ তার জন্য একটি নেকী লিখেন, একটি
মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার একটি পাপ মোচন করেন’ (নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৫৮ ‘সনদ
হাসান’)। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘পাকা চুল মুসলমানদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন নূর
হবে’ (তিরমিযী হা/১৬৩৫, মিশকাত হা/৪৪৫৯ ‘পোষাক’ অধ্যায় ‘চুল আঁচড়ানো’ অনুচ্ছেদ)।
সুতরাং এগুলি উপড়ানোর কোন সুযোগ নেই।
-সেন্টু ইসলাম
দাড়েরপাড়া, কুষ্টিয়া।
উত্তর : এগুলি জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় ও গরীব
মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করা যায়। যদিও এতে পরকালে কোন নেকী পাওয়ার আশা করা যাবে না।
কেননা আল্লাহ পাক হারাম মালের ছাদাক্বা কবুল করেন না (মুসলিম, মিশকাত হা/৩০১;
আহমাদ, মিশকাত হা/২৭৭১)। (বিঃদ্রঃ ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ফৎওয়া নং- ২০১৩৫)।
সূত্র: মাসিক
আত-তাহরীক ওয়েব সাইট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন