শীত আসে নতুন গুড়ের পিঠাপুলির স্বাদ নিয়ে। বাঙালির এই
ঐতিহ্য গ্রাম-শহর সব জায়গায়ই সমান জনপ্রিয়। কয়েক ধরনের পিঠা তৈরির রেসিপি
জানাচ্ছেন বদরুন নেসা নিপা
ক্ষীর পুলি পিঠা
উপকরণ : চালের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম, নারকেল
কোরানো এক বাটি, মাওয়া ৫০ গ্রাম, গুড় ২
কাপ, লবণ ১ চিমটি, দুধ ১ লিটার,
কনডেন্স মিল্ক ১০০ গ্রাম।
প্রণালী : গরমপানি লবণ ও চালের গুঁড়া দিয়ে কাই তৈরি করে
নিন। একটি সসপ্যানে নারকেল, ১ কাপ গুড় ও মাওয়া নিন। চুলায় দিয়ে
জ্বাল দিন চিনি গলে আঠা হওয়া পর্যন্ত। নামিয়ে রাখুন। ১ কাপ গুড় দুধে ঢেলে জ্বাল
দিনে ঘন হলে এতে কনডেন্স মিল্ক ঢেলে নামিয়ে রাখুন। চালের ময়ান থেকে ছোট ছোট গোলা
নিয়ে রুটি তৈরি করুন। এর ভেতর নারকেলের পুর ভরে মুড়ে দিন। দুধে পিঠা ঢেলে কম আঁচে
১০ থেকে ১৫ মিনিট রান্না করুন। এবার নামিয়ে পরিবেশন করুন।
সবজি পিঠা
উপকরণ : চালের গুঁড়া ১ কাপ, আলু,
গাজর, (ছোট টুকরো করে কাটা) ১ কাপ, মটরশুঁটি আধা কাপ, তেল ২-৩ টেবিল চামচ, জিরা সিকি চা চামচ, আদাকুচি আধা চা চামচ, কাঁচামরিচ কুচি ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া সিকি চা চামচ,
ধনে গুঁড়া আধা চা চামচ, শুকনা মরিচ গুঁড়া অল্প,
লবণ আধা চা চামচ, গরম মসলা সিঁকি চা চামচ,
ধনেপাতা কুচি ২ চা চামচ।
প্রণালী : হাঁড়িতে অল্প পানি ফুটাতে দিন। তাতে অল্প লবণ
ও তেল দিন। এবার চালের গুঁড়া দিন। নেড়েচেড়ে নামিয়ে ঢেকে রাখুন। পাঁচ মিনিট পর
চালের গুঁড়া মেখে নরম ডো তৈরি করে নিন। এর থেকে ছোট ছোট বল তৈরি করে নিন।
অন্য দিকে কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে সব মসলা দিন। ৩-৪
মিনিট ভেজে তাতে সব সবজি ও অল্প পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। সেদ্ধ হয়ে পানি
শুকিয়ে এলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করুন। এবার চালের গোলা গোল করে তাতে এই সবজির পুর ভরে
মুখ বন্ধ করে দিন। অন্য হাঁড়িতে পানি গরম করে তাতে ঝাঁঝরি রাখুন। পিঠা ঝাঁঝরিতে
রেখে ভাপে সেদ্ধ করে নিন। চাটনিসহ পরিবেশন করুন।
আরিশা পিঠা
উপকরণ : চালের গুঁড়া ২ কাপ, চিনি
১ কাপ, তেল ৩০০ গ্রাম, তিল ১ চা চামচ।
প্রণালী : চালের গুঁড়া একটু মোটা রাখতে হবে। একটি
হাঁড়িতে এক কাপ চিনি ও এক কাপ পানি জ্বাল দিয়ে সিরা তৈরি করুন। চুলায় জ্বাল কমিয়ে
এতে ধীরে ধীরে চালের গুঁড়া ঢালুন এবং নাড়তে থাকুন। কেকের মতো ঘন মিশ্রণ তৈরি হলে
নামিয়ে নিন। কড়াইয়ে তেল গরম করুন। ভালোভাবে গরম হলে এই মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প নিয়ে
তেলে দিন। ছোট ছোট পিঠা তৈরি হবে। বাদামি করে ভেজে তুলে নিন।
গোকুল পিঠা
উপকরণ : নারকেল কোরানো ২০০ গ্রাম, মাওয়া
৪৫০ গ্রাম, গুড় তিন কাপ, ময়দা ১৫০
গ্রাম, পানি ৫-৬ কাপ, ঘি ৪০ গ্রাম,
খাওয়ার সোডা এক চিমটি।
প্রণালী : ২ কাপ গুড় ও ৩ কাপ পানি নিয়ে মাঝারি ঘন সিরা
তৈরি করুন। ঠাণ্ডা হতে দিন। অন্য প্যানে নারকেল, মাওয়া
ও ২ টেবিল চামচ গুড়ের সিরা নিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। আঠালো হয়ে এলে নামিয়ে
নিন। ময়দা, অল্প ঘি, সোডার সাথে
প্রয়োজনীয় পানি মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। নারকেল-মাওয়া মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প
পরিমাণে নিয়ে হাতে চেপে চেপ্টা বা ফ্যাট করে রাখুন। এই নারকেলের চেপ্টা পুর একটি
করে নিয়ে ময়দার মিশ্রণে ডুবিয়ে পরে ডুবো তেলে ভেজে তুলুন। গুড়ের সিরায় ডুবিয়ে তুলে
পরিবেশন করুন।
উৎস: নয়া দিগন্ত
তেলের পিঠা
যা লাগবে : আতপচালের গুঁড়া ২ কাপ, সিদ্ধ চালের গুঁড়া ২ কাপ, খেজুর বা পাটালি গুড় ২ কাপ, লবণ ১ চিমটি, পানি পরিমাণ মতো, তেল (ভাজার জন্য) ১ লিটার।
যেভাবে করবেন : আধা কাপ আতপচালের গুঁড়া চুলায় পানি ফুটিয়ে নরম সিদ্ধ কাই করে নিন। পরিমাণমতো পানিতে গুড় গলিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। সিদ্ধ কাই, লবণ, বাকি আতপ ও সিদ্ধ চালের গুঁড়া, গুড়ের পানি দিয়ে ঘন গোলা করে ১ ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। লোহার গর্ত কড়াই চুলায় বসিয়ে তেল গরম করে নিন। খুব গরম তেলে এক ডাবু চামচ গোলা দিন। পিঠা ফুলে উঠলে মাঝারি আঁচ করে দিন। এভাবে পিঠা ভেজে ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন।
ভাজা ক্ষীরশা পুলি
যা লাগবে : ময়দা দুই কাপ, লবণ এক চিমটি, ডিমের কুসুম দুইটি, দুধ এক লিটার, ঘি দুই টেবিল চামচ।
যেভাবে করবেন : এক লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে দুই কাপ পরিমাণ করে নিন। ফুটন্ত দুধে লবণ ও ময়দা দিয়ে সিদ্ধ করে শক্ত খামির তৈরি করে নিন। খামিরে দুইটি ডিমের কুসুম ও ঘি দিয়ে মেখে রুটি বেলার মতো করে নিতে হবে।
যা লাগবে : দুধ এক লিটার, নারিকেল কোরা আধা কাপ, খেজুর গুড় আধা কাপ, পোলাও চালের গুঁড়া দুই টেবিল চামচ, কিশমিশ দুই টেবিল চামচ
যেভাবে করবেন : চালের গুঁড়া কাঠখোলায় টেলে নিন। দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে চালের গুঁড়া দিন। সিদ্ধ হলে অন্যান্য উপকরণ দিয়ে শক্ত ক্ষীরসা বানিয়ে নামিয়ে নিন।
ভেজানোর ক্ষীরশা তৈরির জন্য : দুই লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে আধা লিটার বানিয়ে নিন।
যেভাবে করবেন : বানিয়ে রাখা খামির দিয়ে রুটি বেলে নিন। পিঠা বানানোর ডাইসে রুটি দিয়ে ভেতরে পুর দিন। ডাইস চেপে পিঠা কেটে নিন। ডাইস না থাকলে হাতেও তৈরি করতে পারেন। ডুবোতেলে হালকা আঁচে পিঠা ভেজে নিন। গরম পাতলা সিরায় পিঠা ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে তুলে নিন। ক্ষীরশা দিয়ে পরিবেশন করুন।
বি. দ্র. যতটুকু পিঠা পরিবেশন করা হবে ততটুকুতেই ক্ষীরশা ঢালুন।
লবঙ্গ লতিকা
যা লাগবে : ময়দা ১ কাপ, লবণ ১ চিমটি, তেল ১ টে-চামচ, কুসুম গরম পানি কোয়ার্টার কাপ, লবঙ্গ ১০-১২টি, নারিকেল কোরা ১ কাপ, চিনি-গুড় ১-২ কাপ, এলাচ গুঁড়া ১ চিমটি, তেল (ভাজার জন্য) প্রয়োজন মতো।
যেভাবে করবেন : ময়দা, লবণ ও ১ টেবিল চামচ তেল একসঙ্গে ঝুরঝুরে করে মেখে নিন। পরিমাণ মতো গরম পানি দিয়ে রুটির খামিরের মতো খামির তৈরি করুন। নারিকেল, চিনি-গুড় এবং এলাচ গুঁড়া একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে আঠালো পুর তৈরি করে নিন। পরিমাণমতো খামির নিয়ে বড় পাতলা রুটি বেলে নিন। চারকোণা করে রুটি কাটুন। মাঝখানে পুর দিয়ে কোণাগুলো মাঝখানে তুলে এনে লবঙ্গ দিয়ে আটকে দিন। গোল রুটি বেলেও বানাতে পারেন। ডুবো তেলে গোল্ডেন ব্রাউন করে ভেজে নিন।
গোলাপ পিঠা
যা লাগবে : চালের গুঁড়া (শুকনা) ২ কাপ, ময়দা ২ কাপ, তরল দুধ ৪ চাপ, ডিম ২টি, এলাচ-দারুচিনি গুঁড়া আধা চা চামচ করে, ঘি আধা কাপ, চিনি ৩ কাপ, পানি ২ কাপ, তেল (ভাজার জন্য) পরিমাণ মতো।
যেভাবে করবেন : হাঁড়িতে দুধ ফুটতে দিন। দুধ ফুটলে চালের গুঁড়া ও ময়দা দিয়ে সিদ্ধ কাই করে নিন। কাই শক্ত হবে। সিদ্ধ কাইয়ে ডিম ও ঘি দিয়ে খুব ভালোভাবে ময়ান করতে হবে। এমনভাবে মাখাতে হবে যেন হাতে না লাগে। চিনি, পানি, এলাচ, দারুচিনি গুঁড়া একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে মাঝারি ঘনত্বের সিরা তৈরি করে রাখুন। মেখে রাখা সিদ্ধ কাই থেকে পরিমাণমতো কাই নিয়ে ছোট রুটি বেলে অথবা বড় রুটি বেলে গোল কাটার বা বোতলের মুখ দিয়ে কেটে জোড়া দিয়ে গোলাপ তৈরি করুন। ডুবো তেলে মচমচে করে ভেজে সিরায় ফেলুন। সিরা থেকে ৫-৭ মিনিট পর তুলে নিন।
যা লাগবে : পোলাও চাল আধা কাপ, চিনি আধা কাপ, মাওয়া এক কাপ, কিশমিশ এক টেবিল চামচ, কাঠবাদাম-পেস্তাবাদাম কুচি এক টেবিল চামচ, দুধ দুই লিটার, খেজুর গুড় ৩০০ গ্রাম, ঘি দুই টেবিল চামচ।
যেভাবে করবেন : চাল ধুয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। চুলায় দুধ ফুটতে দিন। দুধে বলক এলে ভেজানো চাল কচলে দিয়ে দিন। চাল ফুটলে চিনি দিন। জ্বাল দিয়ে ঘন করুন। খেজুর গুড় অল্প পানিতে জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। দুধ-চালের মিশ্রণ ঘন হলে নামিয়ে প্রয়োজনমতো গুড় মেশান। মাওয়া, ঘি, অর্ধেক কিশমিশ ও পেস্তা কুচি মিশিয়ে ভালোমতো নেড়ে দিন। পরিবেশন পাত্রে ঢেলে বাকি কিশমিশ ও বাদাম কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
সুত্র: ইন্টারনেট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন