Download article as Word Download article as PDF
ফতোয়া সিয়াম
(মোট ৫৬টি ফতোয়া)
মূল: আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন (রাহ:)
অনুবাদক: মুহা: আব্দুল্লাহ আল কাফী
প্রশ্নঃ (৩৯২) ছিয়াম ফরয হওয়ার হিকমত কি?
উত্তরঃ পবিত্র কুরআনের নিম্ন লিখিত আয়াত পাঠ করলেই আমরা জানতে পারি ছিয়াম ফরয হওয়ার হিকমত
কি? আর তা হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহ্
ভীতি অর্জন করা ও আল্লাহ্র ইবাদত করা। আল্লাহ্ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ
الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম
ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।(সূরা
বাক্বারাঃ ১৮৩) তাক্বওয়া হচ্ছে হারাম কাজ পরিত্যাগ করা। ব্যাপক অর্থে তাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহ্র নির্দেশিত বিষয় বাস্তবায়ন করা, তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকা। নবী (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ
بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ[
যে ব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা
কথা, মিথ্যার কারবার ও মূর্খতা পরিত্যাগ
করল না, তার খানা-পিনা পরিহার করার মাঝে
আল্লাহর কোন দরকার নেই।[1]
অতএব এ কথা নিশ্চিত হয়ে গেল যে, রোযাদার যাবতীয় ওয়াজিব বিষয় বাস্তবায়ন
করবে এবং সবধরণের হারাম থেকে দূরে থাকবে। মানুষের গীবত করবে না, মিথ্যা বলবে না, চুগলখোরী করবে না, হারাম বেচা-কেনা করবে না, ধোঁকাবাজী করবে না। মোটকথা চরিত্র ধ্বংসকারী
অন্যায় ও অশ্লীলতা বলতে যা বুঝায় সকল প্রকার হারাম থেকে বিরত থাকবে। আর একমাস এভাবে
চলতে পারলে বছরের অবশিষ্ট সময় সঠিক পথে পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ্।
কিন্তু আফসোসের বিষয় অধিকাংশ
রোযাদার রামাযানের সাথে অন্য মাসের কোন পার্থক্য করে না। অভ্যাস অনুযায়ী ফরয কাজে উদাসীনতা
প্রদর্শন করে, হালাল-হারামে কোন পার্থক্য নেই।
তাকে দেখলে বুঝা যাবে না তার মধ্যে ছিয়ামের মর্যাদার কোন মূল্য আছে। অবশ্য এ সমস্ত
বিষয় ছিয়ামকে ভঙ্গ করে দিবে না। কিন্তু নিঃসন্দেহে তার ছওয়াব বিনষ্ট করে দিবে।
সারাবিশ্বে একসাথে রামাযানের রোযা শুরু করা।
প্রশ্নঃ
(৩৯৩) মুসলিম
জাতির একতার লক্ষ্যে কেউ কেউ চাঁদ দেখার বিষয়টিকে মক্কার সাথে সংশ্লিষ্ট করতে চায়।
তারা বলে মক্কায় যখন রামাযান মাস শুরু হবে তখন বিশ্বের সবাই রোযা রাখবে। এ ব্যাপারে
আপনার মতামত কি?
উত্তরঃ বিষয়টি
মহাকাশ গবেষণার দিক থেকে অসম্ভব। ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, চন্দ্র উদয়ের স্থান বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ বিদ্বানগণ ঐকমত্য। আর এই
বিভিন্নতার দাবী হচ্ছে প্রত্যেক এলাকায় ভিন্ন রকম বিধান হবে। একথার ¯^c‡¶ দলীল কুরআন হাদীছ ও সাধারণ যুক্তি।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ "অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন ছিয়াম পালন করে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) যদি পৃথিবীর শেষ সীমান্তের
লোকেরা এ মাসে উপস্থিত না হয় অর্থাৎ চাঁদ না দেখে আর মক্কার লোকেরা চাঁদ দেখে, তবে কিভাবে এই আয়াত তাদের ক্ষেত্রে প্রজোয্য হবে যারা কিনা চাঁদই দেখেনি। আর নবী
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) e‡jb,صُومُوا
لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ "তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ কর।[2] মক্কার অধিবাসীগণ যদি চাঁদ দেখে তবে পাকিস্তান
এবং তার পূর্ববর্তী এলাকার অধিবাসীদের কিভাবে আমরা বাধ্য করতে পারি যে তারাও ছিয়াম
পালন করবে? অথচ আমরা জানি যে, তাদের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিয়ামের
বিষয়টি চাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট করে দিয়েছেন।
যুক্তিগত দলীল হচ্ছে, বিশুদ্ধ ক্বিয়াস যার বিরোধীতা করার অবকাশ
নেই। আমরা ভাল ভাবে অবগত যে, পশ্চিম এলাকার অধিবাসীদের আগেই পূর্ব এলাকার
অধিবাসীদের নিকট ফজর উদিত হয়। এখন পূর্ব এলাকায় ফজর উদিত হলে কি আমরা পশ্চিম এলাকার
লোকদের বাধ্য করব একই সাথে খানা-পিনা থেকে বিরত হতে? অথচ তাদের ওখানে এখনও রাতের অনেক অংশ বাকী আছে? উত্তরঃ কখনই না। সূর্য যখন পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের আকাশে অস্তমিত হয়, তখন পশ্চিম এলাকার দিগন্তে তো সূর্য দেখাই যাচ্ছে তাদেরকে কি আমরা ইফতার করতে বাধ্য
করব? উত্তরঃ অবশ্যই না। অতএব চন্দ্রও সম্পূর্ণরূপে
সূর্যের মতই। চন্দ্রের হিসাব মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর সূর্যের হিসাব দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট।
আল্লাহ্ বলেছেন,
]أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ هُنَّ
لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ
تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ
وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ
لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ
أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ
عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا كَذَلِكَ
يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ[
ছিয়ামের রাতে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে; তারা তোমাদের জন্য আবরণ এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণ। তোমরা যে নিজেদের খিয়ানত করছিলে, আল্লাহ্ তা পরিজ্ঞাত আছেন। এ জন্যে তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের (ভার)
লাঘব করে দিলেন; অতএব এক্ষণে তোমরা (রোযার রাত্রেও) তাদের
সাথে সহবাসে লিপ্ত হতে পার এবং আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান
কর। এবং প্রত্যুষে (রাতের) কালো রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত
তোমরা খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা রোযা
পূর্ণ কর। তোমরা মসজিদে ইতেকাফ করার সময় (স্ত্রীদের) সাথে সহবাস করবে না; এটাই আল্লাহর সীমা, অতএব তোমরা তার নিকটেও যাবে না। এভাবে
আল্লাহ্ মানব মন্ডলীর জন্যে তাঁর নিদর্শন সমূহ বিবৃত করেন, যেন তারা সংযত হয়।(সূরা বাক্বারা- ১৮৭)
সেই আল্লাহ্ই বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে
উপস্থিত হবে, সে যেন ছিয়াম পালন করে।অতএব যুক্তি ও দলীলের
নিরীখে ছিয়াম ও ইফতারের ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্থানের জন্য আলাদা বিধান হবে। যার সম্পর্ক
হবে বাহ্যিক আলামত বা চিহ্ন দ্বারা যা আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনে
এবং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সুন্নাতে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর
তা হচ্ছে চাঁদ প্রত্যক্ষ করা এবং সূর্য বা ফজর প্রত্যক্ষ করা।
মানুষ যে এলাকায় থাকবে সে এলাকায় চাঁদ
দেখার উপর নির্ভর করে রোযা ভঙ্গ করবে।
প্রশ্নঃ (৩৯৪) রোযাদার যদি এক দেশ থেকে
অন্য দেশে স্থানান্তর হয়, কিন্তু আগের দেশে ঈদের চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেকি এখন রোযা ভঙ্গ করবে? উল্লেখ্য
যে, দ্বিতীয়
দেশে ঈদের চাঁদ এখনও দেখা যায়নি।
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি এক ইসলামী রাষ্ট্র থেকে অপর ইসলামী রাষ্ট্রে গমণ করে আর উক্ত রাষ্ট্রে
ছিয়াম ভঙ্গের সময় না হয়ে থাকে, তবে সে তাদের সাথে ছিয়াম চালিয়ে যাবে, যে পর্যন্ত না তারা ছিয়াম ভঙ্গ করে। কেননা মানুষ যখন রোযা রাখে তখন রোযা রাখতে
হবে, মানুষ যখন রোযা ভঙ্গ করে তখন
রোযা ভঙ্গ করতে হবে। মানুষ যেদিন কুরবানীর ঈদ করে সেদিন কুরবানীর ঈদ করবে। যদিও তার
একদিন বা দু’দিন বেশী হয়ে যায় তার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য হবে। যেমন কোন লোক রোযা রেখে পশ্চিম
দিকের কোন দেশে ভ্রমণে শুরু করল। সেখানে সূর্য অস্ত যেতে দেরী হচ্ছে। তখন সে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত অবশ্যই দেরী করবে। যদিও সময় সাধারণ দিনের চেয়ে দু’ঘন্টা
বা তিন ঘন্টা বা তার চাইতে বেশী হয়।
দ্বিতীয় শহরে সে যখন পৌঁছেছে
তখন সেখানে ঈদের চাঁদ দেখা যায়নি। অতএব সে অপেক্ষা করবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে চাঁদ না দেখে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ কর।[3]
এর বিপরীত কেউ যদি এমন দেশে
সফর করে যেখানে নিজের দেশের পূর্বে চাঁদ দেখা গেছে (যেমন কেউ বাংলাদেশ থেকে সঊদী আরব
সফর করে) তবে সে ঐ দেশের হিসাব অনুযায়ী রোযা ভঙ্গ করবে এবং ঈদের নামায পড়ে নিবে। আর
যে কটা ছিয়াম বাকী থাকবে তা রামাযান শেষে কাযা আদায় করে নিবে। চাই একদিন হোক বা দুদিন।
কেননা আরবী মাস ২৯ দিনের কম হবে না বা ৩০ দিনের বেশী হবে না। ২৯ দিন পূর্ণ না হলেও
রোযা ভঙ্গ করবে এজন্য যে, চাঁদ
দেখা গেছে। আর চাঁদ দেখা গেলে তো রোযা ভঙ্গ করা আবশ্যক। কিন্তু যেহেতু একটি রোযা কম
হল তাই রামাযান শেষে তা কাযা করতে হবে। কেননা মাস ২৮ দিনে হয় না।
কিন্তু পূর্বের মাসআলাটি এর
বিপরীত। নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়। কেননা নতুন চাঁদ না উঠা
পর্যন্ত রামাযান মাস বহাল। যদিও দুএকদিন বেশী হয়ে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই। সেটা এক
দিনে কয়েক ঘন্টা বৃদ্ধি হওয়ার মত। (অতিরিক্ত রোযা নফল হিসেবে গণ্য হবে।)
কষ্টকর কঠিন কাজ করার কারণে রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়।
প্রশ্নঃ (৩৯৫) যে ব্যক্তি কষ্টকর কঠিন কাজ করার কারণে রোযা রাখতে অসুবিধা অনুভব করে তার কি রোযা
ভঙ্গ করা জায়েয?
উত্তরঃ আমি যেটা মনে করি, কাজ করার
কারণে রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়, হারাম। রোযা রেখে কাজ করা যদি সম্ভব না হয়, তবে রামাযান মাসে ছুটি নিবে, অথবা কাজ কমিয়ে দিবে, যাতে করে রামাযানের ছিয়াম পালন করা সম্ভব
হয়। কেননা রামাযানের ছিয়াম ইসলামের অন্যতম একটি রুকন। যার মধ্যে শিথীলতা করা জায়েয
নয়।
ঋতুর দিনগুলোতে ছেড়ে দেয়া রোযা কাযা আদায় করা আবশ্যক।
প্রশ্নঃ (৩৯৬) জনৈক বালিকা ছোট বয়সে ঋতুবতী হয়ে গেছে। সে অজ্ঞতা বশতঃ ঋতুর দিনগুলোতে রোযা পালন
করেছে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ তার উপর আবশ্যক হচ্ছে, ঋতু অবস্থায় যে কয়দিনের ছিয়াম আদায় করেছে সেগুলোর কাযা আদায় করা। কেননা ঋতু অবস্থায়
ছিয়াম পালন করলে বিশুদ্ধ হবে না এবং গ্রহণীয় হবে না। যদিও তা অজ্ঞতা বশতঃ হয়ে থাকে।
তাছাড়া পরবর্তীতে যে কোন সময় তা কাযা করা সম্ভব। কাযা আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট কোন
সময় নেই।
এর বিপরীত আরেকটি মাসআলা হচ্ছে, অল্প বয়সে জনৈক বালিকা ঋতুবতী হয়ে গেছে।
কিন্তু লজ্জার কারণে বিষয়টি কারো সামনে প্রকাশ করেনি এবং তার ছিয়ামও পালন করেনি। এর
উপর ওয়াজিব হচ্ছে, উক্ত মাসের ছিয়াম কাযা আদায়
করা। কেননা নারী ঋতুবতী হয়ে গেলেই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায় এবং শরীয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান
পালন করা তার উপর ফরয হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ (৩৯৭) জীবিকা নির্বাহের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে ছিয়াম ভঙ্গ করার বিধান কি?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি রামাযানের ছিয়াম পরিত্যাগ করে এই যুক্তিতে যে, সে নিজের এবং পরিবারের জীবিকা উপার্জনে
ব্যস্ত। সে যদি এই তা’বীল বা ব্যাখ্যা করে যে, অসুস্থ ব্যক্তি যেমন রোযা ভঙ্গ না করলে
বেঁচে থাকতে অক্ষম তেমনি আমিও তো দরিদ্র অভাবী, জীবিকা উপার্জন করতে হলে আমাকে রোযা ভঙ্গ
করতে হবে, তবে এই যুক্তি খোঁড়া এবং নিঃসন্দেহে
এ ব্যক্তি মূর্খ। অতএব অজ্ঞতার কারণে এবং অপব্যাখ্যার কারণে সে উক্ত সময়ের কাযা আদায়
করবে যদি সে জীবিত থাকে। জীবিত না থাকলে তার পরিবার তার পক্ষ থেকে কাযা আদায় করে দিবে।
কেউ কাযা আদায় না করলে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের বিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াবে।
কিন্তু যদি কোন ধরণের ব্যাখ্যা
না করে ইচ্ছাকৃতভাবে ছিয়াম পরিত্যাগ করে থাকে, তবে বিদ্বানদের মতামত সমূহের মধ্যে থেকে
বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদত
সমূহ বিনা ওযরে ইচ্ছাকৃতভাবে সময় অতিবাহিত করে আদায় করলে তা কবূল হবে না। তাই এ লোকের
উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহ্র কাছে তওবা করা, নেক আমল ও নফল ইবাদত সমূহ বেশী বেশী সম্পাদন
করা ও ইস্তেগফার করা। এর দলীল হচ্ছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ
رَدٌّ যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যাতে আমাদের নির্দেশনা
নেই। তবে তা প্রত্যাখ্যাত।[4] সময়ের সাথে নির্দিষ্ট ইবাদত সমূহ যেমন সময়ের পূর্বে আদায় করলে কবূল হবে না। অনুরূপভাবে
সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও তা গ্রহণীয় হবে না। কিন্তু যদি অজ্ঞতা বা ভুলের কোন ওযর থাকে, তবে ভুল সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]مَنْ نَسِيَ صَلَاةً أو نام عنها فَلْيُصَلِّهَا
إِذَا ذَكَرَهَا لَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ[
যে ব্যক্তি ছালাত আদায় না করে
ঘুমিয়ে থাকে বা ভুলে যায়, তবে স্মরণ
হলেই সে তা আদায় করবে। এটাই তার কাফ্ফারা।[5]
প্রশ্নঃ (৩৯৮) রোযা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য
কারণ কি কি?
উত্তরঃ রোযা ভঙ্গের কারণ সমূহ হচ্ছেঃ
১) অসুস্থতা, ২) সফর। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্
বলেন, وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ
فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ আর যে
ব্যক্তি অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে (সে রোযা ভঙ্গ করে) অন্য দিনে তা কাযা আদায় করে
নিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
৩) গর্ভবতী নারীর নিজের বা শিশুর
জীবনের আশংকা করলে রোযা ভঙ্গ করবে।
৪) সন্তানকে দুগ্ধদানকারীনী
নারী যদি রোযা রাখলে নিজের বা সন্তানের জীবনের আশংকা করে তবে রোযা ভঙ্গ করবে।
৫) কোন বিপদগ্রস্ত মানুষকে বাঁচাতে
গিয়ে রোযা ভঙ্গ করা: যেমন পানিতে ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার, আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে দরকার হলে রোযা
ভঙ্গ করা।
৬) আল্লাহ্র পথে জিহাদে থাকার
সময় শরীরে শক্তি বজায় রাখার জন্য রোযা ভঙ্গ করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের সময় ছাহাবীদেরকে e‡jwQ‡jb,إِنَّكُمْ مُصَبِّحُو عَدُوِّكُمْ وَالْفِطْرُ أَقْوَى لَكُمْ فَأَفْطِرُوا আগামীকাল তোমরা শত্রুর মোকাবেলা
করবে, রোযা ভঙ্গ করলে তোমরা অধিক শক্তিশালী
থাকবে, তাই তোমরা রোযা ভঙ্গ কর।[6]
বৈধ কোন কারণে রোযা ভঙ্গ করলে
দিনের বাকী অংশ রোযা অবস্থায় থাকা আবশ্যক নয়। কেননা সে তো গ্রহণযোগ্য ওযরের কারণেই
রোযা ভঙ্গ করেছে। এজন্য এ মাসআলায় বিশুদ্ধ কথা হচ্ছেঃ কোন রুগী যদি অসুস্থতার কারণে
দিনে রোযা ভঙ্গ করে আর দিন শেষ হওয়ার আগেই সুস্থ হয়ে যায়, তবে দিনের বাকী অংশ রোযা অবস্থায় থাকার
কোন আবশ্যকতা নেই। কোন মুসাফির যদি রোযা ভঙ্গ অবস্থায় দিন থাকতেই সফর থেকে ফিরে আসে
তারও দিনের বাকী অংশ রোযা অবস্থায় থাকার আবশ্যকতা নেই। অনুরূপ বিধান ঋতুবতী নারীর।
কেননা এরা সবাই বৈধ কারণে রোযা ভঙ্গ করেছে। তাই ঐ দিবস তাদের জন্যই। তাতে তাদের প্রতি
ছিয়ামের আবশ্যকতা নেই। কেননা শরীয়ত তাদেরকে রোযা ভঙ্গের অনুমতি প্রদান করে আবার তা
আবশ্যক করবে না।
এর বিপরীত মাসআলা হচ্ছে, রামাযান মাসের চাঁদ দেখা গেছে একথা যদি
দিনের বেলায় প্রমাণিত হয়, তবে খবর
পাওয়ার সাথে সাথে রোযার নিয়ত করে নিতে হবে এবং দিনের বাকী সময় রোযা অবস্থায় কাটাতে
হবে। উভয় মাসআলায় পার্থক্য সুস্পষ্ট। কেননা যখন কিনা দিনের বেলায় রামাযান মাস শুরু
হওয়ার কথা প্রমাণিত হয়েছে, তখন তাদের উপর সে দিনের ছিয়াম পালন করা ওয়াজিব হয়ে গেছে। কিন্তু না জানার কারণে
তাদের ওযর গ্রহণযোগ্য এবং তাদের ছিয়াম বিশুদ্ধ। এই কারণে তারা যদি জানতে পারত যে আজ
রামাযান শুরু হয়েছে, তবে রোযা
রাখা তাদের জন্য আবশ্যক হত।
ফজর হওয়ার পর যদি জানতে পারে যে রামাযান মাস শুরু হয়েছে, তখন কি
করবে?
প্রশ্নঃ (৩৯৯) রামাযান মাস শুরু হয়েছে
কিনা এসংবাদ না পেয়েই জনৈক ব্যক্তি রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে সে ছিয়ামের নিয়ত করেনি ফজর
হয়ে গেছে। ফজরের সময় সে জানতে পারল আজ রামাযানের প্রথম দিন। এ অবস্থায় তার করণীয় কি? উক্ত
দিনের ছিয়াম কি কাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ যখন সে জানতে পারবে তখনই রোযার নিয়ত করে ফেলবে এবং ছিয়াম পালন করবে। অধিকাংশ বিদ্বানের
মতে এ দিনটির ছিয়াম পরে সে কাযা আদায় করবে। তবে ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) এতে বিরোধিতা
করেছেন। তিনি বলেন, জানার সাথে নিয়তের সম্পর্ক।
এ লোক তো জানতেই পারেনি। অতএব তার ওযর গ্রহণযোগ্য। সে জানতে পারলে রাতে কখনই ছিয়ামের
নিয়ত করা ছাড়তো না। কিন্তু সে তো ছিল অজ্ঞ। আর অজ্ঞ ব্যক্তির ওযর গ্রহণযোগ্য। অতএব
জানার পর যদি রোযার নিয়ত করে ফেলে তবে ছিয়াম বিশুদ্ধ। তাকে কাযা আদায় করতে হবে না।
অধিকাংশ বিদ্বান বলেন, তাকে উক্ত দিনের রোযা রাখা আবশ্যক এবং
তার কাযা আদায় করাও আবশ্যক। এর কারণ হিসেবে বলেন, এ লোকের দিনের একটি অংশ নিয়ত ছাড়া অতিবাহিত
হয়েছে। তাই তাকে কাযা আদায় করতে হবে।
আমি মনে করি, সতর্কতা বশতঃ উক্ত দিনের রোযা কাযা করে
নেয়াই উচিত।
রোযা ভঙ্গের ওযর শেষ হয়ে গেলে কি দিনের
বাকী অংশ রোযা অবস্থায় কাটাবে?
প্রশ্নঃ
(৪০০) কারণ বশতঃ কোন ব্যক্তি যদি রোযা ভঙ্গ করে আর দিন শেষ হওয়ার আগেই উক্ত ওযর দূর
হয়ে যায়। সে কি দিনের বাকী অংশ রোযা অবস্থায় কাটাবে?
উত্তরঃ না, দিনের বাকী অংশ ছিয়াম অবস্থায়
থাকা আবশ্যক নয়। তবে রামাযান শেষে উক্ত দিবসের কাযা তাকে আদায় করতে হবে। কেননা শরীয়ত
অনুমদিত কারণেই সে ছিয়াম ভঙ্গ করেছে। উদাহরণ ¯^iƒc অসুস্থ ব্যক্তির অপারগতার কারণে
শরীয়ত তাকে ঔষুধ সেবনের অনুমতি দিয়েছে। ঔষুধ সেবন
করা মানেই রোযা ভঙ্গ। অতএব পূর্ণ এই দিনটির ছিয়াম তার উপর আবশ্যক নয়। দিনের বাকী অংশ
রোযা অবস্থায় থাকার অবশ্যকতায় শরীয়ত সম্মত কোন ফায়েদা নেই। যেখানে কোন উপকার নেই তা
আবশ্যক করাও চলে না।
উদাহরণ ¯^iƒct জনৈক
ব্যক্তি দেখল একজন লোক পানিতে ডুবে যাচ্ছে। সে বলছে আমি যদি পানি পান করি তবে এই ব্যক্তিকে
উদ্ধার করতে পারব। পানি পান না করলে তাকে বাঁচানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। এ অবস্থায়
সে পানি পান করবে এবং তাকে পানিতে ডুবা থেকে উদ্ধার করবে। অতঃপর দিনের অবশিষ্ট অংশ
খানা-পিনা করবে। এ দিনের সম্মান তার জন্য আর নেই। কেননা শরীয়তের দাবী অনুযায়ীই রোযা
ভঙ্গ করা তার জন্য বৈধ হয়েছে। তাই দিনের বাকী অংশ রোযা রাখা আবশ্যক নয়।
যদি কোন লোক অসুস্থ থাকে তাকে
কি আমরা বলব, ক্ষুধার্ত না হলে খানা খাবে
না? পিপাসিত না হলে পানি পান করবে
না? অর্থাৎ- প্রয়োজন না হলে খানা-পিনা
করবে না? না, এরূপ বলব না। কেননা এ লোককে তো রোযা ভঙ্গের
অনুমতি দেয়া হয়েছে। অতএব শরঈ দলীলের ভিত্তিতে রামাযানের রোযা ভঙ্গকারী প্রত্যেক ব্যক্তির
দিনের অবশিষ্ট অংশ রোযা অবস্থায় অতিবাহিত করা আবশ্যক নয়।
এর বিপরীত মাসআলায় বিপরীত সমাধান।
অর্থাৎ- বিনা ওযরে যদি রোযা ভঙ্গ করে তবে তাকে দিনের অবশিষ্ট অংশ রোযা অবস্থায় থাকতে
হবে। কেননা রোযা ভঙ্গ করা তার জন্য বৈধ ছিল না। শরীয়তের অনুমতি ছাড়াই সে এদিনের সম্মান
নষ্ট করেছে। অতএব দিনের বাকী অংশ ছিয়াম পালন করা যেমন আবশ্যক তেমনি কাযা আদায় করাও
যরূরী।
কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে রোযা ভঙ্গ
করে মিসকীন খাওয়াবে।
প্রশ্নঃ (৪০১) জনৈক মহিলা কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ডাক্তারগণ তাকে রোযা রাখতে নিষেধ করেছে।
এর বিধান কি?
উত্তরঃ আল্লাহ্ বলেন,
]شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ
الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنْ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ
شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ
فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ
بِكُمْ الْعُسْرَ[
রামাযান হচ্ছে সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথ যাত্রীদের
জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের
মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে নিবে। আল্লাহ্
তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য কঠিন কামনা করেন না।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
মানুষ যদি এমন রোগে আক্রান্ত
হয় যা থেকে সুস্থ হওয়ার কোন আশা নেই। তবে প্রতিদিনের বিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে খাদ্য
খাওয়াবে। খাদ্য দেয়ার পদ্ধতি হচ্ছে, মিসকীনকে পরিমাণমত চাউল প্রদান করা এবং সাথে মাংস ইত্যাদি তরকারী হিসেবে দেয়া উত্তম।
অথবা দুপুরে বা রাতে তাকে একবার খেতে দিবে। এটা হচ্ছে ঐ রুগীর ক্ষেত্রে যার সুস্থ হওয়ার
কোন সম্ভবনা নেই। আর নারী এ ধরণের রোগে আক্রান্ত। তাই আবশ্যক হচ্ছে সে প্রতিদিনের জন্য
একজন করে মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করবে।
প্রশ্নঃ (৪০২) কখন এবং কিভাবে
মুসাফির নামায ও রোযা আদায় করবে?
উত্তরঃ মুসাফির নিজ শহর থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত দু’দু রাকাত
নামায আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন,
أَوَّلَ مَا فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ
فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ وَأُتِمَّتْ صَلَاةُ الْحَضَرِ
সর্বপ্রথম যে নামায ফরয করা
হয়েছিল তা হচ্ছে দু’রাকাত। সফরের নামাযকে ঐভাবেই রাখা হয়েছে এবং গৃহে অবস্থানের
সময় নামাযকে পূর্ণ (চার রাকাত) করা হয়েছে।অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, গৃহে অবস্থানের সময় নামায বৃদ্ধি করা হয়েছে।[7] আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, আমরা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে
যাত্রা করলাম। তিনি মদীনা ফিরে আসা পর্যন্ত দুদু রাকাত করে নামায আদায় করলেন।
কিন্তু মুসাফির যদি স্থানীয়
ইমামের সাথে নামায আদায় করে তবে পূর্ণ চার রাকাতই পড়বে। চাই নামাযের প্রথম থেকে ইমামের
সাথে থাকুক বা পরে এসে অংশ গ্রহণ করুক। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর
সাধারণ বাণী একথার দলীল।
إِذَا سَمِعْتُمُ الْإِقَامَةَ
فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ وَلَا
تُسْرِعُوا فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
যখন নামাযের ইকামত
প্রদান করা হয় তখন হেঁটে হেঁটে ধীর-স্থীর এবং প্রশান্তির সাথে নামাযের দিকে আগমণ করবে।
তাড়াহুড়া করবে না। অতঃপর নামাযের যতটুকু অংশ পাবে আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা পরে
পূর্ণ করে নিবে।[8]
এ হাদীছটি স্থানীয়
ইমামের পিছনে নামায আদায়কারী মুসাফিরদেরও শামিল করে। ইবনু আব্বাস (রাঃ)কে প্রশ্ন করা
হয়েছিল, এটা কি কথা মুসাফির একাকী নামায পড়লে দু’রাকাত পড়বে আর স্থানীয় ইমামের পিছনে পড়লে চার রাকাত পড়বে? তিনি বললেন, এটা সুন্নাত।
মুসাফিরের জন্য
জামাআতের নামায রহিত নয়। কেননা আল্লাহ্ বলেনঃ
]وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ
لَهُمْ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا
أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ
طَائِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ[
আর যখন আপনি তাদের সাথে থাকেন
আর তাদেরকে জামাআতের সাথে নামায পড়ান, তবে তা এইভাবে হবে যে, তাদের মধ্যে থেকে একদল আপনার সাথে নামাযে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র সাথে
রাখবে। অনন্তর যখন তারা সিজদা করবে (এক রাকাআত পূর্ণ করবে), তখন তারা আপনাদের পিছনে চলে যাবে এবং অন্য
দল যারা এখনও নামায পড়েনি তারা আসবে এবং আপনার সাথে নামায পড়ে নিবে।(সূরা
নিসাঃ ১০২)
অতএব মুসাফির যদি নিজ শহর ছেড়ে
অন্য শহরে অবস্থান করে, তবে আযান
শুনলেই মসজিদে জামাআতের নামাযে উপস্থিত হবে। তবে যদি মসজিদ থেকে বেশী দূরে থাকে বা
সফর সঙ্গীদের ক্ষতির আশংকা করে তবে মসজিদে না গেলেও চলবে। কেননা সাধারণ দলীল সমূহ একথাই
প্রমাণ করে যে, আযান বা এক্বামত শুনলেই জামাআতে
উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব।
নফল বা সুন্নাত নামাযের ক্ষেত্রেঃ
মুসাফির যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নাত ছাড়া
সবধরণের নফল ও সুন্নাত আদায় করবে। রাতের নফল (তাহাজ্জুদ), বিতর, ফজরের সুন্নাত, চাশত, তাহিয়্যাতুল ওযু, তাহিয়্যাতুল মসজিদ, সফর থেকে ফেরত এসে দু’রাকাত
নামায আদায় করবে।
দু’নামায
একত্রিত করার বিধান হচ্ছেঃ সফর যদি চলমান থাকে তবে উত্তম হচ্ছে দু’নামাযকে
একত্রিত করা। যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশা একত্রিত আদায় করবে। প্রথম নামাযের সময়ই দু’নামায
একত্রিত আদায় করবে অথবা দ্বিতীয় নামাযের সময় দু’নামাযকে
একত্রিত করবে। যেভাবে তার জন্য সুবিধা হয় সেভাবে করবে।
কিন্তু সফরে গিয়ে কোন জায়গায়
যদি অবস্থান করে তবে উত্তম হচ্ছে দু’নামাযকে একত্রিত না করা। একত্রিত করলেও
কোন অসুবিধা নেই। কেননা উভয়টিই রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে
প্রমাণিত আছে।
ছিয়ামের
ক্ষেত্রে মুসাফিরের জন্য উত্তম হচ্ছে ছিয়াম পালন করা। ছিয়াম ভঙ্গ করলেও কোন অসুবিধা
নেই। পরে উক্ত দিনগুলোর কাযা আদায় করে নিবে। তবে ছিয়াম ভঙ্গ করা যদি বেশী আরাম দায়ক
হয় তাহলে ছিয়াম ভঙ্গ করাই উত্তম। কেননা আল্লাহ্ বান্দাকে যে ছুটি দিয়েছেন তা গ্রহণ
করা তিনি পসন্দ করেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্য।
প্রশ্নঃ (৪০৩) সফর অবস্থায় কষ্ট হলে রোযা
রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ সফর অবস্থায় যদি এমন কষ্ট হয় যা সহ্য করা সম্ভব, তবে সে সময় রোযা রাখা মাকরূহ। কেননা একদা
সফরে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখলেন জনৈক ব্যক্তির পাশে লোকজন ভীড় করছে
এবং তাকে ছাঁয়া করছে। তিনি বললেন, এর কি হয়েছে? তারা বলল, লোকটি রোযাদার। তখন তিনি বললেন, لَيْسَ مِنَ الْبِرِّ الصَّوْمُ فِي السَّفَرِ সফর অবস্থায় ছিয়াম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।[9]
কিন্তু সফরে রোযা রাখা যদি অধিক
কষ্টদায়ক হয় তবে ওয়াজিব হচ্ছে রোযা ভঙ্গ করা। কেননা সফর অবস্থায় লোকেরা যখন নবী (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট অভিযোগ করল যে তাদের কষ্ট হচ্ছে তখন তিনি রোযা ভঙ্গ করলেন।
অতঃপর বলা হল, কিছু লোক এখনও রোযা রেখেছে।
তিনি বললেন, أُولَئِكَ الْعُصَاةُ أُولَئِكَ الْعُصَاةُ ওরা নাফরমান, ওরা নাফরমান।[10]
কিন্তু রোযা রাখতে যার কোন কষ্ট
হবে না, তার জন্য উত্তম হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর অনুসরণ করে রোযা পালন করা। কেননা সফর অবস্থায় তিনি রোযা রাখতেন।
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ فِي حَرٍّ شَدِيدٍ وَمَا فِينَا صَائِمٌ
إِلَّا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَبْدُ اللَّهِ ابْنُ
رَوَاحَةَ
একদা রামাযান মাসে কঠিন গরমের
সময় আমরা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে সফরে ছিলাম। তখন আমাদের মধ্যে
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবদুল্লাহ্ বিন রাওয়াহা ছাড়া আর
কেউ রোযা রাখেন নি।[11]
সফর আরাম দায়ক হলে রোযা ভঙ্গ না করাই উত্তম।
প্রশ্নঃ (৪০৪) আধুনিক যুগের
যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত ও আরাম দায়ক হওয়ার কারণে সফর অবস্থায় রোযা রাখা মুসাফিরের জন্য
কষ্টকর নয়। এ অবস্থায় রোযা রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ মুসাফির রোযা রাখা ও ভঙ্গ করার ব্যাপারে ইচ্ছাধীন। আল্লাহ্ বলেন,
]وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ
فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ
بِكُمْ الْعُسْرَ[
আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির
অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে
নিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) ছাহাবায়ে কেরাম নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে
সফরে থাকলে কেউ রোযা রাখতেন কেউ রোযা ভঙ্গ করতেন। কোন রোযা ভঙ্গকারী অপর রোযাদারকে
দোষারোপ করতেন না, রোযাদারও রোযা ভঙ্গকারীকে দোষারোপ
করতেন না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও সফর অবস্থায় রোযা রেখেছেন। আবু দারদা
(রাঃ) বলেন, একদা রামাযান মাসে কঠিন গরমের
সময় আমরা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে সফরে ছিলাম। তখন আমাদের মধ্যে
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবদুল্লাহ্ বিন রাওয়াহা ছাড়া আর
কেউ রোযা রাখে নি।[12]
মুসাফিরের জন্য মূলনীতি হচ্ছে, সে রোযা রাখা ও ভঙ্গ করার ব্যাপারে ইচ্ছাধীন।
কিন্তু কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম। কেননা এতে তিনটি উপকারীতা রয়েছেঃ
প্রথমতঃ রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর অনুসরণ।
দ্বিতীয়তঃ রোযা রাখতে সহজতা। কেননা সমস্ত মানুষ যখন রোযা রাখে তখন সবার সাথে রোযা রাখা অনেক
সহজ।
তৃতীয়তঃ দ্রুত নিজেকে যিম্মামুক্ত করা।
কিন্তু কষ্টকর হলে রোযা রাখবে
না। এ অবস্থায় রোযা রাখা পূণ্যেরও কাজ নয়। কেননা এক সফরে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) দেখলেন জনৈক ব্যক্তির পাশে লোকজন ভীড় করছে এবং তাকে ছাঁয়া দিচ্ছে। তিনি
বললেন, এর কি হয়েছে? তারা বলল, লোকটি রোযাদার। তখন তিনি বললেন, لَيْسَ مِنَ الْبِرِّ الصَّوْمُ فِي السَّفَرِ সফর অবস্থায় ছিয়াম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।[13]
এভিত্তিতে আমরা বলব, বর্তমান যুগে সাধারণতঃ সফরে তেমন কোন কষ্ট
হয় না। তাই ছিয়াম পালন করাই উত্তম।
মুসাফির মক্কায় পৌঁছে রোযা ছেড়ে দিয়ে প্রশান্তির সাথে ওমরা করতে পারে।
প্রশ্নঃ (৪০৫) রোযা অবস্থায়
মুসাফির যদি মক্কায় পৌঁছে। তবে ওমরা আদায় করতে শক্তি পাওয়ার জন্য রোযা ভঙ্গ করা জায়েয
হবে কি?
উত্তরঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের সময় রামাযান মাসের বিশ তারিখে
মক্কায় প্রবেশ করেন। সে সময় তিনি রোযা ভঙ্গ অবস্থায় ছিলেন। সেখানে দু’দু রাকআত
করে নামায কসর আদায় করেছেন। আর মক্কাবাসীদের বলেছেন, হে মক্কাবাসীগণ! তোমরা নামায পূর্ণ করে
নাও। কেননা আমরা মুসাফির।[14] ছহীহ্ বুখারীতে একথাও প্রমাণিত হয়েছে, তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসের অবশিষ্ট দিনগুলো রোযা ভঙ্গ অবস্থাতেই
অতিবাহিত করেছেন। কেননা তিনি ছিলেন মুসাফির।
তাই ওমরাকারী মক্কা পৌঁছলেই
তার সফর শেষ হয়ে যায় না। যদি রোযা ভঙ্গ অবস্থায় মক্কা পৌঁছে থাকে, তবে দিনের বাকী অংশ পানাহার ত্যাগ করা
আবশ্যক নয়। কিন্তু বর্তমান যুগে যেহেতু সফর আরাম দায়ক তাই রোযা রাখাও তেমন কষ্টকর নয়।
সেহেতু কেউ যদি রোযা রেখে মক্কায় পৌঁছে অত্যধিক ক্লান্তি অনুভব করে, তখন চিন্তা করে আমি কি রোযা পূর্ণ করে
ইফতারের পর ওমরার কাজ শুরু করবো? নাকি রোযা ভঙ্গ করব এবং সর্বপ্রথম ওমরা আদায় করে নিব?
এ অবস্থায় আমরা তাকে বলব, আপনার জন্য উত্তম হচ্ছে, সুস্থাবস্থায় ওমরা পালন করার জন্য রোযা
ভঙ্গ করা। কেননা হজ্জ-ওমরা আদায়কারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, উক্ত উদ্দেশ্যে মক্কা আগমণ করলে, সেখানে পৌঁছার সাথে সাথেই হজ্জ-ওমরার কাজে
আত্মনিয়োগ করা। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় মক্কা আগমণ করলে
দ্রুত মসজিদে হারামে গমণ করতেন। এমনকি আরোহীকে মসজিদের নিকটবর্তী স্থানে বসাতেন।
অতএব ওমরাকারীর জন্য উত্তম হচ্ছে, দিনের বেলায় কর্মশক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে
রোযা ভঙ্গ করে ওমরা পালন করা। রাত পর্যন্ত অপেক্ষা না করা।
ছহীহ্ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
মক্কা বিজয়ের জন্য যখন সফরে ছিলেন এবং তিনি রোযা অবস্থায় ছিলেন, তখন কতিপয় লোক এসে অভিযোগ করল, রোযা রাখতে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। আপনি
কি করছেন এটা দেখার অপেক্ষায় আছে তারা। তখন সময়টি ছিল আছরের পর। নবী (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি চাইলেন এবং পান করলেন। লোকেরা সবাই দেখল।[15]
অতএব নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় দিনের শেষ প্রহরে রোযা ভঙ্গ
করলেন। একাজ যে জায়েয একথা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে তিনি এরূপ করেছেন।
উল্লেখ্য
যে, সফরে কষ্ট ¯^xKvi করে কিছু লোক যে ছিয়াম পালন করতেই থাকে নিঃসন্দেহে তা সুন্নাহ্
বিরোধী কাজ। তার ব্যাপারেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ لَيْسَ
مِنَ الْبِرِّ الصَّوْمُ فِي السَّفَرِ সফর অবস্থায় ছিয়াম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।[16]
প্রশ্নঃ (৪০৬) সন্তানকে দুগ্ধদানকারীনী
কি রোযা ভঙ্গ করতে পারবে? ভঙ্গ করলে কিভাবে কাযা আদায় করবে? নাকি রোযার বিনিময়ে খাদ্য দান
করবে?
উত্তরঃ দুগ্ধদানকারীনী রোযা রাখার কারণে যদি সন্তানের জীবনের আশংকা করে অর্থাৎ রোযা রাখলে
স্তনে দুধ কমে যাবে ফলে শিশু ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তবে মায়ের রোযা ভঙ্গ করা জায়েয। কিন্তু
পরবর্তীতে তার কাযা আদায় করে নিবে। কেননা এ অবস্থায় সে অসুস্থ ব্যক্তির অনুরূপ। যার
সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,
]وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ
فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির
অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে
নিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
অতএব রোযা রাখার ব্যাপারে যখনই
বাধা দূর হবে তখনই কাযা আদায় করবে। চাই তা শীতকালে অপেক্ষাকৃত ছোট দিনে হোক অথবা সম্ভব
না হলে পরবর্তী বছর হোক। কিন্তু ফিদ্ইয়া ¯^iƒc মিসকীন খাওয়ানো জায়েয হবে না। তবে ওযর যদি চলমান থাকে অর্থাৎ
সার্বক্ষণিক রোযা রাখায় বাধা দেখা যায় যা বাধা দূর হওয়ার সম্ভবনা না থাকে, তখন প্রতিটি রোযার বদলে একজন করে মিসকীনকে
খাওয়াবে।
প্রশ্নঃ (৪০৭) ক্ষুধা-পিপাসা
ও অতিরিক্ত ক্লান্তির সাথে রোযা পালন করলে রোযার বিশুদ্ধতায় কি কোন প্রভাব পড়বে?
উত্তরঃ ক্ষুধা-পিপাসা ও অতিরিক্ত ক্লান্তির সাথে রোযা পালন করলে রোযার বিশুদ্ধতায় এর
কোন প্রভাব পড়বে না। বরং এতে অতিরিক্ত ছওয়াব পাওয়া যাবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাঃ)কে বলেছিলেন, তোমার ক্লান্তি ও কষ্ট অনুযায়ী তুমি ছওয়াব
পাবে।[17] অতএব আল্লাহ্র আনুগত্যের ক্ষেত্রে মানুষের ক্লান্তি যত বেশী হবে ততই তার প্রতিদান
বেশী হবে। তবে রোযার ক্লান্তি দূর করার জন্য মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালা বা ঠান্ডা শীতল
স্থানে আরাম গ্রহণ করা যেতে পারে।
রামাযানের পূরা মাসের রোযার
নিয়ত একবার করে নিলেই চলবে।
প্রশ্নঃ (৪০৮) রামাযানের প্রত্যেক
দিনের জন্য আলাদা আলাদাভাবে কি নিয়ত করা আবশ্যক? নাকি পূর্ণ মাসের নিয়ত একবার
করে নিলেই হবে?
উত্তরঃ রামাযানের প্রথমে পূর্ণ মাসের জন্য একবার নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে। কেননা রোযাদার
যদি প্রতিদিনের জন্য রাতে নিয়ত না করে, তবে তা রামাযানের প্রথমের নিয়তের শামিল হয়ে তার ছিয়াম বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু
সফর, অসুস্থতা প্রভৃতি দ্বারা যদি
মাসের মধ্যখানে বিচ্ছিন্নতা আসে, তবে নতুন করে আবার নিয়ত আবশ্যক। কেননা মাসের প্রথমে সে যে ছিয়ামের নিয়ত করেছিল
তা সফর বা অসুস্থতা প্রভৃতির মাধ্যমে ভঙ্গ করে ফেলেছে।
প্রশ্নঃ
(৪০৯) রোযা ভঙ্গের জন্য অন্তরে দৃঢ় নিয়ত করলেই কি রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তরঃ একথা সর্বজন বিদিত যে, ছিয়াম হচ্ছে নিয়ত এবং পরিত্যাগের সমষ্টির নাম। অর্থাৎ রোযা বিনষ্টকারী যাবতীয় বস্তু
পরিত্যাগ করে রোযাদার রোযার দ্বারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের নিয়ত করবে।
কিন্তু সত্যিই যদি এটাকে সে ভঙ্গ করার দৃঢ় সংকল্প করে ফেলে তবে তার ছিয়াম বাতিল হয়ে
যাবে। আর এটা রামাযান মাসে হলে দিনের অবশিষ্ট অংশ তাকে পানাহার ছাড়াই কাটাতে হবে। কেননা
বিনা ওযরে যে ব্যক্তি রামাযানে ছিয়াম ভঙ্গ করবে তাকে যেমন দিনের বাকী অংশ ছিয়াম অবস্থাতেই
কাটাতে হবে, অনুরূপভাবে তার কাযাও আদায় করতে
হবে।
কিন্তু যদি দৃঢ় সংকল্প না করে
বরং দ্বিধা-দ্বন্দে থাকে, তবে তার
ব্যাপারে বিদ্বানদের মতবিরোধ রয়েছে।
কেউ বলেছেন, তার ছিয়াম বাতিল হয়ে যাবে। কেননা দ্বিধা-দ্বন্দ
দৃঢ়তার বিপরীত।
কেউ বলেছেন, বাতিল হবে না। কেননা আসল হচ্ছে, নিয়তের দৃঢ়তা অবশিষ্ট থাকা, যে পর্যন্ত তা আরেকটি দৃঢ়তা দ্বারা বিচ্ছিন্ন
না করবে। আমার দৃষ্টিতে এমতই বিশুদ্ধ। (আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞান রাখেন)
প্রশ্নঃ (৪১০) রোজাদার ভুলক্রমে
পানাহার করলে তার ছিয়ামের বিধান কি? কেউ এটা দেখলে তার করণীয় কি?
উত্তরঃ রামাযানের রোযা রেখে কেউ যদি ভুলক্রমে খানা-পিনা করে তবে তার ছিয়াম বিশুদ্ধ। তবে
স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে বিরত হওয়া ওয়াজিব। এমনকি খাদ্য বা পানীয় যদি মুখের মধ্যে থাকে
এবং স্মরণ হয়, তবে তা ফেলে দেয়া ওয়াজিব। ছিয়াম
বিশুদ্ধ হওয়ার দলীল হচ্ছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন,
مَنْ نَسِيَ وَهُوَ صَائِمٌ فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ
فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ
যে ব্যক্তি রোযা রেখে ভুলক্রমে
পানাহার করে, সে যেন তার ছিয়াম পূর্ণ করে।
কেননা আল্লাহ্ই তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।[18] তাছাড়া ভুলক্রমে নিষিদ্ধ কাজ করে ফেললে তাকে পাকড়াও করা হবে না। আল্লাহ্ বলেন, رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।(সূরা
বাক্বারাঃ ২৮৬) আল্লাহ্ বলেন, আমি তাই করলাম।
কেউ যদি দেখতে পায় যে ভুলক্রমে
কোন মানুষ খানা-পিনা করছে, তবে তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে, তাকে বাঁধা দেয়া এবং ছিয়ামের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। কেননা ইহা গর্হিত কাজে বাধা
দেয়ার অন্তর্গত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ
بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ
فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ
যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ হতে
দেখবে, সে যেন হাত দ্বারা বাধা প্রদান
করে, যদি সম্ভব না হয় তবে যবান দ্বারা
বাধা দিবে, যদি তাও সম্ভব না হয় তবে অন্তর
দ্বারা তা ঘৃণা করবে।[19] সন্দেহ নেই রোযা রেখে খানা-পিনা করা একটি গর্হিত কাজ। কিন্তু ভুল ক্রমে হওয়ার
কারণে তাকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তা দেখবে তার জন্য তাতে বাধা না দেয়ার
কোন ওযর থাকতে পারে না।
প্রশ্নঃ (৪১১) রোযা রেখে সুরমা
ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ রোযাদারের জন্য সুরমা ব্যবহার করায় কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে চোখে বা কানে
ঔষুধ (ড্রপ) ব্যবহার করতেও কোন অসুবিধা নেই, যদিও এতে গলায় ড্রপের ¯^v`
অনুভব করে। এতে রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা ইহা খাদ্য বা পানীয়
নয় বা খানা-পিনার বিকল্প হিসেবেও ব্যবহৃত নয়। একথার দলীল হচ্ছে, ছিয়ামের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা তা হচ্ছে
খানা-পিনা করা। সুতরাং যা খানা-পিনার অন্তর্ভূক্ত নয় তা এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গণ্য
হবে না। ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) একথাই বলেছেন। আর এটাই বিশুদ্ধ মত।
কিন্তু যদি নাকে ড্রপ ব্যবহার
করে এবং তা পেটে পৌঁছে, তবে রোযা
ভঙ্গ হবে- যদি রোযা ভঙ্গের উদ্দেশ্য করে থাকে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেন,
وَبَالِغْ فِي
الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا
প্রশ্নঃ (৪১২) রোযা অবস্থায়
মেসওয়াক ও সুগন্ধি ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে দিনের প্রথম ভাগে যেমন শেষ ভাগেও তেমন মেসওয়াক করা সুন্নাত।
কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
السِّوَاكُ
مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ ومَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ
لَوْلا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى
النَّاسِ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاةٍ
আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে
না করলে আমি প্রত্যেক নামাযের সময় তাদেরকে মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।[22]
অনুরূপভাবে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার
করাও রোযাদারের জন্য জায়েয। চাই তা দিনের প্রথম ভাগে হোক বা শেষ ভাগে। চাই উক্ত সুগন্ধি
ভাপ হোক বা তৈল জাতীয় বা সেন্ট প্রভৃতি হোক। তবে ভাপের সুগন্ধি নাকে টেনে নেয়া জায়েয
নয়। কেননা ধোঁয়ার মধ্যে প্রত্যক্ষ ও অনুভবযোগ্য কিছু অংশ আছে যা নাক দ্বারা গ্রহণ করলে
নাকের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে পেটে পৌঁছায়।[23]
এজন্য নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাক্বীত বিন ছাবুরা (রাঃ)কে বলেছেন, بَالِغْ فِي الاسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا ছিয়াম অবস্থায় না থাকলে ওযুর ক্ষেত্রে নাকে অতিরিক্ত পানি নিবে।[24]
প্রশ্নঃ (৪১৩) ছিয়াম ভঙ্গকারী
বিষয় কি কি?
উত্তরঃ ছিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়গুলো হচ্ছে নিম্নরূপঃ
ক) স্ত্রী সহবাস।
খ) খাদ্য গ্রহণ।
গ) পানীয় গ্রহণ।
ঘ) উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত
করা।
ঙ) খানা-পিনার অন্তর্ভূক্ত এমন
কিছু গ্রহণ করা। যেমন সেলাইন ইত্যাদি।
চ) ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।
ছ) শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করা।
জ) হায়েয বা নেফাসের রক্ত প্রবাহিত
হওয়া।
উল্লেখিত বিষয়গুলোর দলীল নিম্নরূপঃ
সহবাস ও খান-পিনা সম্পর্কে আল্লাহ্
বলেন,
]فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ
اللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ
الْأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا
الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ[
অতএব এক্ষণে তোমরা (রোযার রাত্রেও)
তাদের সাথে সহবাস করতে পার এবং আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান
কর। এবং প্রত্যুষে (রাতের) কাল রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তোমরা
খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত
তোমরা রোযা পূর্ণ কর।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৭)
উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত রোযা
ভঙ্গের কারণ। দলীল, হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ্ তা’আলা রোযাদারের
উদ্দেশ্যে বলেন, সে খানা-পিনা ও উত্তেজনা পরিত্যাগ
করে আমারই কারণে।[25] উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত করার ক্ষেত্রে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন,
وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ قَالُوا يَا
رَسُولَ اللَّهِ أَيَأتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ
قَالَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ
فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلَالِ كَانَ لَهُ أَجْرًا
স্ত্রী সঙ্গমেও তোমাদের জন্য সাদকার
ছওয়াব রয়েছে। সাহাবীগণ (আশ্চর্য হয়ে) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের একজন
তার উত্তেজনার চাহিদা মেটাবে, আর এতে ছওয়াবের হকদার হবে এটা কেমন কথা? তিনি জবাবে বললেনঃ তোমরা কি মনে কর, সে যদি এই কাজ কোন হারাম স্থানে করত তবে পাপের অধিকারী হত না? তেমনি হালাল স্থানে ব্যবহার করার কারণে অবশ্যই সে পুরস্কারের
অধিকারী হবে।[26] আর উত্তেজনার চাহিদা মেটানোর মাধ্যম হচ্ছে ¯^‡e‡M বীর্য নির্গত হওয়া। এজন্য বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, মযী[27] বের হলে ছিয়াম
বিনষ্ট হবে না, যদিও তা উত্তেজনা, Pz¤^b ও স্পর্শ করার কারণে হয়।
খানা-পিনার অন্তর্ভূক্ত এমন
কিছু গ্রহণ করা রোযা ভঙ্গের কারণ। যেমন, খানা-পিনার অভাব পূর্ণ করবে এরকম সেলাইন গ্রহণ করা। কেননা ইহা যদিও সরাসরি খানা-পিনা
নয় কিন্তু ইহা খানা-পিনার কাজ করে এবং তার প্রয়োজন মেটায়। একারণেই তো ইহা দ্বারা শরীরের
গঠন প্রকৃতি ঠিক থাকে, খানা-পিনার
অভাব অনুভব করে না।
কিন্তু খানা-পিনার কাজ করে না
এরকম ইন্জেকশন গ্রহণ করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। চাই উহা শিরার মধ্যে প্রদান করা হোক বা
পেশীতে বা শরীরের যে কোন স্থানে।
ইচ্ছাকৃত বমি করা। অর্থাৎ বমির
মাধ্যমে পেটের মধ্যে যা আছে তা মুখ দিয়ে বাইরে বের করা। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ ذَرَعَهُ الْقَيْءُ فَلَيْسَ عَلَيْهِ
قَضَاءٌ وَمَنِ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِ
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করবে সে যেন রোযা কাযা আদায় করে। কিন্তু
অনিচ্ছাকৃত যার বমি হয় তার কোন কাযা নেই।[28] এর কারণ হচ্ছে, মানুষ
বমি করলে তার পেট খাদ্যশুন্য হয়ে যায়। তখন তার এই শুন্যতা পূরণের প্রয়োজন পড়ে। এ কারণে
আমরা বলব, ছিয়াম ফরয হলে কোন মানুষের বমি
করা জায়েয নয়। কেননা বমি করলে তার ফরয ছিয়াম বিনষ্ট হয়ে যাবে। তবে অসুস্থতার কারণে
অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে রোযা নষ্ট হবে না।
শিঙ্গা লাগানো। অর্থাৎ শিঙ্গা
লাগানোর মাধ্যমে শরীর থেকে রক্ত বের করা। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, أَفْطَرَ الْحَاجِمُ وَالْمَحْجُومُ যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগায় ও যার শিঙ্গা লাগানো হয় উভয়ের রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।[29]
হায়েয বা নেফাসের রক্ত প্রবাহিত
হওয়া। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদের সম্পর্কে বলেন, أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ সে কি এমন নয় যে, ঋতুবতী
হলে নামায পড়বে না ও রোযা রাখবে না।[30]
উল্লেখিত
বিষয়গুলো নিম্ন লিখিত তিনটি শর্তের ভিত্তিতে রোযা ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য হবেঃ
1)
জ্ঞান থাকা।
2)
স্মরণ থাকা।
3)
ইচ্ছাকৃতভাবে করা।
প্রথম শর্তঃ জ্ঞান থাকা। অর্থাৎ উক্ত বিষয়ে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান সম্পর্কে জ্ঞান
থাকা অথবা ছিয়ামের জন্য যে সময় নির্দিষ্ট সে সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা।
যদি শরীয়তের
বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে তবে তার ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে। কেননা আল্লাহ্ বলেন, رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।(সূরা
বাক্বারাঃ ২৮৬) আল্লাহ্ বলেন, আমি তাই করলাম। আল্লাহ্ আরো বলেন,
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ
بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[
ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে
সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।(সূরা
আহযাবঃ ৫)
সুন্নাহ্ থেকে ছিয়ামের ক্ষেত্রে
বিশেষ দলীল হচ্ছে, ছহীহ্ হাদীছে আ’দী বিন
হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রোযা রাখার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে উট বাঁধার দুটো রশী বালিশের নীচে রেখে দিলেন। একটি কালো রঙের অন্যটির রং
সাদা। এরপর খানা-পিনা করতে থাকলেন। যখন ¯^vfvweK দৃষ্টিতে সাদা ও কালো রশী চিনতে পারলেন তখন খানা-পিনা বন্ধ
করলেন। সকালে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দরবারে গিয়ে বিষয়টি উল্লেখ করলে
তিনি তাকে বললেন, কুরআনের আয়াতে সাদা ও কালো সুতা
বলতে আমাদের পরিচিত সূতা বা রশী উদ্দেশ্য নয়। এ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাদা সুতা বলতে দিনের শ্রভ্রতা (সুবহে
সাদেক বা ফজর হওয়া) আর কালো সূতা বলতে রাতের অন্ধকার উদ্দেশ্য। কিন্তু নবী (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ছিয়াম কাযা আদায় করার আদেশ করেন নি।[31]
কেননা বিষয়টি সম্পর্কে তিনি ছিলেন অজ্ঞ। ভেবেছিলেন এটাই আয়াতের অর্থ।
আর ছিয়ামের জন্য যে সময় নির্দিষ্ট
সে সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলেও তার ছিয়াম বিশুদ্ধ। দলীল: ছহীহ্ বুখারীতে আসমা বিনতে আবু
বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যুগে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার
কারণে ইফতার করে নিয়েছিলাম। তার কিছুক্ষণ পর আবার সূর্য দেখা গিয়েছিল।কিন্তু নবী (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে উক্ত ছিয়ামের কাযা আদায় করার আদেশ করেন নি। কেননা কাযা
আদায় করা ওয়াজিব হলে তিনি অবশ্যই সে আদেশ প্রদান করতেন। আর সে আদেশ থাকলে আমাদের কাছেও
তার বর্ণনা পৌঁছতো। কেননা আল্লাহ্ বলেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا
الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ নিশ্চয়
আমি যিকির অবতীর্ণ করেছি আর আমিই তার সংরক্ষণকারী।(সূরা
হিজ্রঃ ৯) অতএব প্রয়োজন থাকা সত্বেও যখন এক্ষেত্রে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না, তাই বুঝা যায় যে, তিনি তাদেরকে এর কাযা আদায় করার নির্দেশ
প্রদান করেন নি। অতএব অজ্ঞতা বশতঃ দিন থাকতেই পানাহার করে ফেললে তার কাযা আদায় করা
ওয়াজিব নয়। জানার সাথে সাথে পানাহার থেকে বিরত থাকবে এবং দিনের বাকী অংশ ছিয়াম অবস্থায়
অতিবাহিত করবে।
অনুরূপভাবে কোন লোক যদি খানা-পিনা
করে এই ভেবে যে এখনও রাত আছে- ফজর হয়নি। কিন্তু পরে জানলো যে সে ফজর হওয়ার পরই পানাহার
করেছে, তবে তার ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে।
তাকে কাযা আদায় করতে হবে না। কেননা সে ছিল অজ্ঞ।
দ্বিতীয় শর্তঃ স্মরণ থাকা। অর্থাৎ সে যে রোযা রেখেছে একথা ভুলে না যাওয়া। অতএব রোযা রেখে ভুলক্রমে
কোন মানুষ যদি খানা-পিনা করে ফেলে, তবে তার ছিয়াম বিশুদ্ধ এবং তাকে কাযা আদায় করতে হবে না। কেননা আল্লাহ্ বলেন, رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا হে আমাদের পালনকর্তা আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি, তবে আমাদের পাকড়াও করবেন না।(সূরা
বাক্বারাঃ ২৮৬) আল্লাহ্ বলেন, আমি তাই করলাম। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেন,
مَنْ نَسِيَ وَهُوَ صَائِمٌ فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ
فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ
যে ব্যক্তি রোযা রেখে ভুলক্রমে
পানাহার করে, সে যেন তার ছিয়াম পূর্ণ করে।
কেননা আল্লাহ্ই তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।[32]
তৃতীয় শর্তঃ ইচ্ছাকৃত করা। অর্থাৎ রোযাদার নিজ ইচ্ছায় উক্ত রোযা ভঙ্গের কাজে লিপ্ত হবে। অনিচ্ছাকৃতভাবে
হলে তার ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে চাই তাকে জোর জবরদস্তী করা হোক বা না হোক। কেননা বাধ্য করে
কুফরীকারীকে আল্লাহ্ বলেন,
]مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ
إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ
بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنْ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ[
যার উপর জবরদস্তী করা হয়েছে
এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহ্তে অবিশ্বাসী
হয় এবং কুফরীর জন্য মন উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহ্র গযব এবং তাদের
জন্যে রয়েছে শাস্তি।(সূরা নাহালঃ ১০৬) বাধ্য অবস্থায় কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার পাপ
যদি ক্ষমা করা হয়; তবে তার নিম্ন পর্যায়ের পাপে
বাধ্য হয়ে লিপ্ত হলে ক্ষমা হওয়াটা অধিক যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন,
إِنَّ اللَّهَ وَضَعَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ
وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
নিশ্চয় আল্লাহ্ তা’আলা আমার
উম্মতের ভুল ক্রমে করে ফেলা এবং আবশ্যিক বিষয় করতে ভুলে যাওয়া ও বাধ্য অবস্থায় করে
ফেলা পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন।[33]
এভিত্তিতে কারো নাকে যদি ধুলা
ঢুকে পড়ে এবং তার ¯^v` গলায় পৌঁছে ও পেটের ভিতর প্রবেশ করে, তবে তার রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা সে এটার ইচ্ছা করেনি।
অনুরূপভাবে কাউকে যদি ইফতার
করতে জবরদস্তি করা হয় আর সে বাধ্য হয়ে ইফতার করে ফেলে, তবে তার ছিয়াম বিশুদ্ধ। কেননা সে অনিচ্ছাকৃতভাবে
একাজ করেছে।
এমনিভাবে ঘুমন্ত ব্যক্তির ¯^cœ‡`vl হলে, তার ছিয়ামও বিশুদ্ধ। কেননা সে ছিল ঘুমন্ত, ইচ্ছাও ছিল না তার একাজে। কোন ব্যক্তি
যদি স্ত্রীকে তার সাথে সহবাস করতে বাধ্য করে এবং স্ত্রী বাধ্যগত হয়ে সহবাসে লিপ্ত হয়, তবে তার (স্ত্রীর) ছিয়াম বিশুদ্ধ। কেননা
একাজে তার কোন এখতিয়ার ছিল না।
একটি মাসআলাঃ খুবই সতর্ক থাকা উচিত। কোন মানুষ যদি রামাযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত
হয়, তবে নিম্ন লিখিত পাঁচটি বিধান
তার ক্ষেত্রে প্রজোয্য হবেঃ
1)
সে গুনাহগার হবে।
2)
দিনের বাকী অংশ তাকে ছিয়াম অবস্থায়
কাটাতে হবে।
3)
তার উক্ত ছিয়াম বিনষ্ট হবে।
4)
তাকে কাযা আদায় করতে হবে।
5)
কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।
সহবাসে
লিপ্ত হলে কি ধরণের কাফ্ফারা দিতে হবে এ সম্পর্কে জানা থাক বা নাজানা থাক কোন পার্থক্য
নেই। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি রামাযানের দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হল- রোযাও তার
উপর ফরয-[34]
কিন্তু তার এই জ্ঞান নেই যে, একাজ করলে তাকে এত কাফ্ফারা দিতে হবে, তবুও তার উপর উল্লেখিত বিধান সমূহ প্রজোয্য হবে। কেননা সে ইচ্ছাকৃতভাবে
রোযা ভঙ্গ করেছে। আর ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভঙ্গের কাজে লিপ্ত হলে, তার উপর যাবতীয় বিধান প্রজোয্য হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেন, কিসে তোমাকে ধ্বংস করল?সে বলল, রামাযানের রোযা রেখে আমি স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কাফ্ফারা আদায় করার আদেশ করলেন।[35] অথচ লোকটি জানতো
না যে তাকে কাফ্ফারা দিতে হবে কি হবে না।
আমরা বলেছি, তার উপর রোযা ফরয। অর্থাৎ সে মুসাফির নয়
নিজ গৃহে মুক্বীম হিসেবে অবস্থান করছে। যদি সফরে থেকে কোন ব্যক্তি রোযা ভঙ্গ করে এবং
স্ত্রী সহবাস করে তবে কাফ্ফারা দিতে হবেনা। কেননা সফর অবস্থায় রোযা রাখা ফরয নয়। রোযা
ভঙ্গ করা ও রাখার ব্যাপারে সে ¯^vaxb|
তবে ভঙ্গ করলে পরে কাযা আদায় করতে হবে।
প্রশ্নঃ (৪১৪) রোযা অবস্থায়
শ্বাসকষ্টের কারণে স্প্রে(nabulijer) ব্যবহার করার বিধান কি? এ দ্বারা
কি ছিয়াম ভঙ্গ হবে?
উত্তরঃ এই সেপ্র নাকে প্রবেশ করে কিন্তু পেট পর্যন্ত পৌঁছে না। তাই রোযা রেখে ইহা ব্যবহার
করতে কোন অসুবিধা নেই। এতে রোযা ভঙ্গও হবে না। কেননা এটা এমন বস্তু যা উড়ে বেড়ায় নাকে
প্রবেশ করে এবং বিলীন হয়ে যায়, এর অংশ বিশেষ পেটের মধ্যে প্রবেশ করে না। তাই এদ্বারা ছিয়াম ভঙ্গ হবে না।
প্রশ্নঃ (৪১৫) বমি করলে কি রোযা ভঙ্গ হবে?
উত্তরঃ কোন লোক যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে তবে তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে
বমি হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেন,
]مَنْ ذَرَعَهُ الْقَيْءُ فَلَيْسَ عَلَيْهِ
قَضَاءٌ وَمَنِ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِ[
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বমি করবে
সে যেন রোযা কাযা আদায় করে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত যার বমি হয় তার কোন কাযা নেই।[36]
কিন্তু বমি যদি আপনাকে পরাজিত
করে ফেলে- বমি বের হয়েই যায়, তবে রোযা ভঙ্গ হবেনা। মানুষ যদি পেটের মধ্যে খিচুনী অনুভব করে, মনে হয় যেন ভিতর থেকে সব কিছু বের হয়ে
আসবে, তখন তাতে বাধা দিবেনা। সাধারণভাবে
থাকার চেষ্টা করবে। ইচ্ছা করে কোন কিছু বের করার চেষ্টা করবে না। নিজে নিজে বের হয়ে
আসলে কোন ক্ষতি হবেনা এবং রোযাও নষ্ট হবেনা।
প্রশ্নঃ (৪১৬) রোযাদারের দাঁতের
মাড়ি থেকে রক্ত বের হলে কি রোযা নষ্ট হবে?
উত্তরঃ দাঁত থেকে রক্ত প্রবাহিত হলে রোযার উপর কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু সাধ্যানুযায়ী
রক্ত গিলে নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। অনুরূপভাবে নাক থেকে রক্ত বের হলেও রোযা নষ্ট
হবে না। কিন্তু রক্ত ভিতরে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকবে। নাক বা দাঁত থেকে রক্ত বের হওয়া
রোযা ভঙ্গের কারণ নয়। অতএব কাযা আদায় করার প্রশ্নই উঠে না।
ঋতুবতী ফজরের পূর্বে পবিত্র হলে রোযা রাখবে।
প্রশ্নঃ (৪১৭) ঋতুবতী যদি ফজরের
পূর্বে পবিত্র হয় এবং ফজর হওয়ার পর গোসল করে, তবে তার রোযার বিধান কি?
উত্তরঃ ফজরের পূর্বে পবিত্র হয়েছে এব্যাপারে নিশ্চিত হলে, তার ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে। কেননা নারীদের মধ্যে অনেকে এমন আছে, ধারণা করে যে পবিত্র হয়ে গেছে অথচ সে আসলে পবিত্র হয়নি। এই কারণে
নারীরা আয়েশা (রাঃ) এর কাছে আসতেন তাদের লজ্জাস্থানে তুলা লাগিয়ে উক্ত তুলার চিহ্ন
দেখানোর জন্য যে, তারা কি পবিত্র হয়েছেন? তখন তিনি বলতেন, لَا تَعْجَلْنَ حَتَّى
تَرَيْنَ الْقَصَّةَ الْبَيْضَاءَ ‘তোমরা তাড়াহুড়া করবে না যতক্ষণ না তোমরা কাছ্ছা বাইযা (বা সাদা
পানি) না দেখ।’ অতএব নারী অবশ্যই ধীরস্থীরতার সাথে
লক্ষ্য করবে এবং নিশ্চিত হবে পূর্ণরূপে পবিত্র হয়েছে কিনা। যদি পবিত্র হয়ে যায় তবে
ছিয়ামের নিয়ত করে নিবে। ফজর হওয়ার পর গোসল করবে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু নামাযের দিকে
লক্ষ্য রেখে দ্রুত গোসল সেরে নেয়ার চেষ্টা করবে, যাতে করে সময়ের মধ্যেই ফজর নামায আদায় সম্ভব হয়।
আমরা শুনতে পাই অনেক নারী ফজরের
পূর্বে বা পরে ঋতু থেকে পবিত্র হয়, কিন্তু তারা গোসল করতে দেরী করে নামাযের সময় পার করে দেয়। পরিপূর্ণ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন
হওয়ার যুক্তিতে সূর্য উঠার পর গোসল করে। কিন্তু এটা মারাত্মক ধরণের ভুল। চাই তা রামাযান
মাসে হোক বা অন্য মাসে। কেননা তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে সময়মত নামায আদায় করার জন্য দ্রুত
গোসল সেরে নেয়া। নামাযের ¯^v‡_©
গোসলের ওয়াজিব কাজগুলো সারলেই যথেষ্ট হবে। তারপর দিনের বেলায়
আবারো যদি পরিপূর্ণরূপে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসল করে, তবে কি অসুবিধা আছে?
ঋতুবতী নারীর মত অন্যান্য নাপাক
ব্যক্তিগণ (যেমন স্ত্রী সহবাস বা ¯^cœ
দোষের কারণে নাপাক) নাপাক অবস্থাতেই ছিয়ামের নিয়ত করতে পারবে।
এবং ফজর হওয়ার পর গোসল করে নামায আদায় করবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কখনো কখনো স্ত্রী সহবাসের কারণে নাপাক অবস্থাতেই ছিয়ামের নিয়ত করতেন এবং ফজর হওয়ার
পর নামাযের আগে গোসল করতেন।[37]
(আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞান রাখেন।)
প্রশ্নঃ (৪১৮) রোযা অবস্থায়
দাঁত উঠানোর বিধান কি?
উত্তরঃ সাধারণ দাঁত বা মাড়ির দাঁত উঠানোতে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তাতে রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা এতে শিঙ্গা
লাগানোর মত প্রভাব পড়ে না। তাই রোযাও ভঙ্গ হবে না।
প্রশ্নঃ (৪১৯) রোযা রেখে রক্ত
পরীক্ষা (Blood test) করার জন্য রক্ত প্রদান করার বিধান কি? এতে কি রোযা নষ্ট হবে।
উত্তরঃ ব্লাড টেষ্ট করার জন্য রক্ত বের করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা ডাক্তার অসুস্থ
ব্যক্তির চেক আপ করার জন্য রক্ত নেয়ার নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু এই রক্ত নেয়া অল্প
হওয়ার কারণে শিঙ্গা লাগানোর মত এর কোন প্রভাব শরীরে দেখা যায় না, তাই এতে রোযা ভঙ্গ হবেনা। আসল হচ্ছে ছিয়াম
ভঙ্গ না হওয়া- যতক্ষণ পর্যন্ত রোযা ভঙ্গের জন্য শরীয়ত সম্মত দলীল না পাওয়া যাবে। আর
সামান্য রক্ত বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে এখানে এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না।
কিন্তু রোগীর শরীরে রক্ত প্রবেশ
করার জন্য বেশী পরিমাণে রক্ত প্রদান করা রোযা ভঙ্গের অন্যতম কারণ। কেননা এর মাধ্যমে
শিঙ্গা লাগানোর মত শরীরে প্রভাব পড়ে। অতএব ছিয়াম যদি ওয়াজিব হয়, তবে এভাবে বেশী পরিমাণে রক্ত দান করা জায়েয
নয়। তবে রোগীর অবস্থা যদি আশংকা জনক হয়, মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষা করলে তার প্রাণ নাশের সম্ভাবনা থাকে এবং ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত
যে, এই রোযাদারের রক্তই শুধু রোগীর
উপকারে আসবে ও তার প্রাণ বাঁচানো সম্ভবপর হতে পারে, তবে এই অবস্থায় রক্ত দান করতে কোন অসুবিধা
নেই। রক্ত দানের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করে পানাহার করবে। অতঃপর এই রোযার কাযা আদায় করবে।
(আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞান রাখেন।)
প্রশ্নঃ (৪২০) রোযাদার হস্ত
মৈথুন করলে কি রোযা ভঙ্গ হবে? তাকে কি কোন কাফ্ফারা দিতে হবে?
উত্তরঃ রোযাদার
হস্ত মৈথুন করে যদি বীর্যপাত করে তবে তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। দিনের বাকী অংশ তাকে
ছিয়াম অবস্থায় কাটাতে হবে। এ অপরাধের জন্য আল্লাহ্র কাছে তওবা করতে হবে এবং উক্ত দিনের
রোযা কাযা আদায় করতে হবে। কিন্তু কাফ্ফারা আবশ্যক হবে না। কেননা কাফ্ফারা শুধুমাত্র
সহবাসের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করলে আবশ্যক হবে।
প্রশ্নঃ (৪২১) রোযাদারের জন্য
আতর-সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ রোযাদারের আতর-সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়াতে কোন অসুবিধা নেই। চাই তৈল জাতীয় হোক বা ধোঁয়া
জাতীয়। তবে ধোঁয়ার সুঘ্রাণ নাকের কাছে নিয়ে শুঁকবে না। কেননা এতে একজাতীয় পদার্থ আছে
যা পেট পর্যন্ত পৌঁছায়, তখন রোযা
ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন পানি বা তদানুরূপ বস্তু। কিন্তু সাধারণ ভাবে তার সুঘ্রাণ নাকে
ঢুকলে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (৪২২) নাকে ধোঁয়া টানা
এবং চোখে বা নাকে ড্রপ দেয়ার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃ উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, নাকে ভাপের ধোঁয়া টানা নিজ ইচ্ছায় হয়ে থাকে। যাতে করে ধোঁয়ার কিছু অংশ পেটে প্রবেশ
করে, তাই এতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
কিন্তু ড্রপ ব্যবহার করে উহা পেটে পৌঁছানোর ইচ্ছা করা হয় না; বরং এতে উদ্দেশ্য হচ্ছে নাকে বা চোখে শুধু
ড্রপ ব্যবহার করা।
প্রশ্নঃ (৪২৩) রোযাদারের নাকে, কানে
ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ নাকের ড্রপ যদি নাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে তবে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা লাক্বীত বিন
সাবুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেন, وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ
صَائِمًا ছিয়াম অবস্থায় না থাকলে ওযুর
ক্ষেত্রে নাকে অতিরিক্ত পানি নিবে।[38] অতএব পেটে পৌঁছে এরকম করে রোযাদারের নাকে ড্রপ ব্যবহার করা জায়েয নয়। কিন্তু পেটে
না পৌঁছলে কোন অসুবিধা নেই।
চোখে ড্রপ ব্যবহার করা সুরমা
ব্যবহার করার ন্যায়। এতে রোযা নষ্ট হবে না। অনুরূপভাবে কানে ড্রপ ব্যবহারেও রোযা বিনষ্ট
হবে না। কেননা এসব ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কোন দলীল নেই। এবং যে সব ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা
এসেছে এগুলো তারও অন্তর্ভূক্ত নয়। চোখ বা কান দ্বারা পানাহার করা যায় না। এগুলো শরীরের
অন্যান্য চামড়ার লোমকুপের মত।
বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন, কোন লোকের পায়ের তলায় যদি তরল কোন পদার্থ
লাগানো হয় এবং এর ¯^v` গলায় অনুভব করে, তবে রোযার
কোন ক্ষতি হবে না। কেননা উহা খানা-পিনা গ্রহণের স্থান নয়। অতএব সুরমা ব্যবহার করলে, চোখে বা কানে ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা নষ্ট
হবে না- যদিও এগুলো ব্যবহার করলে গলায় ¯^v` অনুভব করে।
অনুরূপভাবে চিকিৎসার জন্য অথবা
অন্য কোন কারণে যদি কেউ তৈল ব্যবহার করে, তাতেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
এমনিভাবে শ্বাস কষ্ট দূর করার
জন্য যদি মুখে পাইপ লাগিয়ে অক্সিজেনের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে চলমান
করা হয়, এবং তা পেটে পৌঁছে, তাতেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কেননা উহা
পানাহারের অন্তর্ভূক্ত নয়।
প্রশ্নঃ (৪২৪) রোযা অবস্থায়
¯^cœ‡`vl হলে কি ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তার ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে। কেননা
¯^cœ‡`vl রোযা
বিনষ্ট করে না। ¯^cœ‡`vl তো মানুষের অনিচ্ছায় হয়ে থাকে। আর নিদ্রা অবস্থায় সংঘটিত বিষয় থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া
হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে একটি সতর্কতাঃ বর্তমান
যুগে অনেক মানুষ রামাযানের রাতে জেগে থাকে। কখনো আজেবাজে কর্ম এবং কথায় রাত কাটিয়ে
দেয়। তারপর গভীর নিদ্রায় সমস্ত দিন অতিবাহিত করে। বরং মানুষের উচিত হচ্ছে, রোযার সময়টাকে যিকির, কুরআন তেলাওয়াত প্রভৃতি আনুগত্যপূর্ণ ও
আল্লাহর নৈকট্যদানকারী কাজে অতিবাহিত করা।
প্রশ্নঃ (৪২৫) রোযাদারের ঠান্ডা
ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ ঠান্ডা-শীতল বস্তু অনুসন্ধান করা রোযাদার ব্যক্তির জন্য জায়েয, কোন অসুবিধা নেই। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোযা রেখে গরমের কারণে বা তৃষ্ণার কারণে মাথায় পানি ঢালতেন।[39]
ইবনু ওমর (রাঃ) রোযা রেখে গরমের প্রচন্ডতা অথবা পিপাসা হ্রাস করার জন্য শরীরে কাপড়
ভিজিয়ে রাখতেন। কাপড়ের এই সিক্ততার কোন প্রভাব নেই। কেননা উহা এমন পানি নয়, যা নাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।
প্রশ্নঃ (৪২৬) রোযাদার কুলি
করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি পেটে পৌঁছে যায়, তবে কি তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তরঃ রোযাদার কুলি করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি পেটে পৌঁছে
যায়, তবে তার রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা
এতে তার কোন ইচ্ছা ছিল না। আল্লাহ্ বলেন,
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ
بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[
ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে
সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।(সূরা
আহযাবঃ ৫)
প্রশ্নঃ (৪২৭) রোযাদারের আতরের
সুঘ্রাণ ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ ৪২১ নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন।
প্রশ্নঃ (৪২৮) নাক থেকে রক্ত
বের হলে কি রোযা নষ্ট হবে?
উত্তরঃ নাক থেকে রক্ত বের হলে রোযা নষ্ট হবে না- যদিও বেশী পরিমাণে বের হয়। কেননা এখানে
ব্যক্তির কোন ইচ্ছা থাকেনা।
সতর্কতা বশতঃ ফজরের দশ/পনর মিনিট পূর্বে পানাহার বন্ধ করা।
প্রশ্নঃ (৪২৯) রামাযানের কোন
কোন ক্যালেন্ডারে দেখা যায় সাহুরের জন্য শেষ টাইম নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তার প্রায়
দশ/পনর মিনিট পর ফজরের টাইম নির্ধারণ করা হয়েছে। সুন্নাতে কি এর পক্ষে কোন দলীল আছে
নাকি এটা বিদআত?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে ইহা বিদআত। সুন্নাতে নববীতে এর কোন প্রমাণ নেই। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা সম্মানিত
কিতাবে বলেন,
]وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى
يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ
الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ[
এবং প্রত্যুষে
(রাতের) কাল রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা রোযা পূর্ণ কর।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৭)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেন,
أَنَّ بِلَالًا كَانَ يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ
فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ فَإِنَّهُ لَا
يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
নিশ্চয় বেলাল রাত থাকতে আযান
দেয়, তখন তোমরা খাও ও পান কর, যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতূমের আযান শোন।
কেননা ফজর উদিত না হলে সে আযান দেয় না।[40] ফজর না হতেই খানা-পিনা বন্ধ করার জন্য লোকেরা সময় নির্ধারণ করে যে ক্যালেন্ডার
তৈরী করেছে তা নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র নির্ধারিত ফরযের উপর বাড়াবাড়ী। আর এটা হচ্ছে আল্লাহ্র
দ্বীনের মাঝে অতিরঞ্জন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ هَلَكَ
الْمُتَنَطِّعُونَ هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ
প্রশ্নঃ (৪৩০) এয়ারপোর্টে থাকাবস্থায় সূর্য অস্ত গেছে মুআয্যিন আযান দিয়েছে, ইফতারও করে নিয়েছে। কিন্তু বিমানে চড়ে উপরে গিয়ে সূর্য দেখতে পেল। এখন কি পানাহার বন্ধ করতে হবে?
উত্তরঃ খানা-পিনা বন্ধ করা অবশ্যক নয়। কেননা যমীনে থাকাবস্থায় ইফতারের সময় হয়ে গেছে সূর্যও
ডুবে গেছে। সুতরাং ইফতার করতে বাধা কোথায়? রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا
وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ
الصَّائِمُ
এদিক থেকে যখন রাত আগমণ করবে
এবং ঐদিক থেকে দিন শেষ হয়ে যাবে ও সূর্য অস্ত যাবে, তখন রোযাদার ইফতার করে ফেলবে।[42]
অতএব এয়ারপোর্টের যমীনে থাকাবস্থায়
যখন সূর্য ডুবে গেছে, তখন তার
দিনও শেষ হয়ে গেছে, তাই সে শরীয়তের দলীল মোতাবেক
ইফতারও করে নিয়েছে। সুতরাং শরীয়তের দলীল ব্যতীরেকে আবার তাকে পানাহার বন্ধ করার আদেশ
দেয়া যাবে না।
প্রশ্নঃ (৪৩১) রোযাদারের কফ
অথবা থুথু গিলে ফেলার বিধান কি?
উত্তরঃ কফ বা শ্লেষা যদি মুখে এসে একত্রিত না হয় গলা থেকেই ভিতরে চলে যায় তবে তার রোযা
নষ্ট হবে না। কিন্তু যদি গিলে ফেলে তবে সে ক্ষেত্রে বিদ্বানদের দু’টি মত
রয়েছেঃ
১ম মতঃ তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা উহা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত।
২য় মতঃ রোযা নষ্ট হবে না। কেননা উহা মুখের সাধারণ থুথুর অন্তর্গত। মুখের মধ্যে সাধারণ
পানি যাকে থুথু বলা হয় তা দ্বারা রোযা নষ্ট হয় না। এমনকি যদি থুথু মুখের মধ্যে একত্রিত
করে গিলে ফেলে তাতেও ছিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না।
আমরা জানি আলেমগণ মতবিরোধ করলে
তার সমাধান কুরআন-সুন্নাহ্ থেকে খুঁজতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাতে সুস্পষ্ট
কোন উক্তি নেই। এ বিষয়ে যখন সন্দেহ হয়ে গেল, তার ইবাদতটি নষ্ট হয়ে গেল না নষ্ট হল না। তখন আমাদেরকে মূলের দিকে ফিরে যেতে হবে।
মূল হচ্ছে দলীল ছাড়া ইবাদত বিনষ্ট না হওয়া। অতএব কফ গিলে নিলে রোযা নষ্ট হবে না।
মোটকথা কফ নিজ অবস্থায় ছেড়ে
দিবে। উহা গলার নীচে থেকে মুখে টেনে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে না। কিন্তু মুখে এসে পড়লে
বাইরে ফেলে দিবে। চাই রোযাদার হোক বা না হোক। কিন্তু গিলে ফেললে রোযা নষ্ট হবে এর জন্য
দলীল দরকার।
প্রশ্নঃ (৪৩২) খাদ্যের ¯^v` গ্রহণ
করলে কি ছিয়াম নষ্ট হবে?
উত্তরঃ খাদ্যের ¯^v` গ্রহণ করে যদি তা গিলে না ফেলে, তবে ছিয়াম নষ্ট হবে না। কিন্তু একান্ত দরকার না পড়লে এরূপ করা উচিত নয়। এ অবস্থায়
অনিচ্ছাকৃত যদি পেটে কিছু ঢুকে পড়ে তবে ছিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না।
প্রশ্নঃ (৪৩৩) রোযা রেখে হারাম বা অশ্লীল
কথাবার্তা উচ্চারণ করলে কি ছিয়াম নষ্ট হবে?
উত্তরঃ আমরা আল্লাহ্ তা’আলার নিম্ন লিখিত আয়াত পাঠ করলেই জানতে পারি ছিয়াম ফরয হওয়ার
হিকমত কি? আর তা হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহ্
ভীতি অর্জন করা ও আল্লাহ্র ইবাদত করা। আল্লাহ্ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ
الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম
ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।(সূরা
বাক্বারাঃ ১৮৩) তাক্বওয়া হচ্ছে হারাম কাজ পরিত্যাগ করা। ব্যাপক অর্থে তাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহ্র নির্দেশিত বিষয় বাস্তাবায়ন করা, তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকা। নবী (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ
بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
যে ব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা
কথা, মিথ্যা অভ্যাস ও মূর্খতা পরিত্যাগ
করল না, তার পানাহার পরিহার করার মাঝে
আল্লাহর কোন দরকার নেই।[43] অতএব এ কথা নিশ্চিত হয়ে গেল যে, রোযাদার যাবতীয় ওয়াজিব বিষয় বাস্তবায়ন করবে এবং সবধরণের হারাম থেকে দূরে থাকবে।
মানুষের গীবত করবে না, মিথ্যা
বলবে না, চুগলখোরী করবে না, হারাম বেচা-কেনা করবে না, ধোঁকাবাজী করবে না। মোটকথা চরিত্র ধ্বংসকারী
অন্যায় ও অশ্লীলতা বলতে যা বুঝায় সকল প্রকার হারাম থেকে বিরত থাকবে। আর একমাস এভাবে
চলতে পারলে বছরের অবশিষ্ট সময় সঠিক পথে পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ্।
কিন্তু আফসোসের বিষয় অধিকাংশ
রোযাদার রামাযানের সাথে অন্য মাসের কোন পার্থক্য করে না। অভ্যাস অনুযায়ী ফরয কাজে উদাসীনতা
প্রদর্শন করে, হালাল-হারামে কোন পার্থক্য নেই।
গর্হিত ও অশ্লীল কথা কাজে লিপ্ত থাকে। মিথ্যা, ধোঁকাবাজী প্রভৃতি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
তাকে দেখলে বুঝা যাবে না তার মধ্যে ছিয়ামের মর্যাদার কোন মূল্য আছে। অবশ্য এ সমস্ত
বিষয় ছিয়ামকে ভঙ্গ করে দিবে না। কিন্তু নিঃসন্দেহে তার ছওয়াব বিনষ্ট করে দিবে।
প্রশ্নঃ (৪৩৪) মিথ্যা ¯^v¶x দেয়ার
বিধান কি? ইহা কি
ছিয়াম নষ্ট করে?
উত্তরঃ মিথ্যা ¯^v¶x দেয়া অন্যতম কাবীরা গুনাহ্। আর তা হচ্ছে না জেনে কোন বিষয়ে ¯^v¶¨ দেয়া অথবা জেনে শুনে বাস্তবতার
বিপরীত সাক্ষ্য প্রদান করা। এতে ছিয়াম বিনষ্ট হবে না। কিন্তু ছিয়ামের ছওয়াব কমিয়ে দিবে।
প্রশ্নঃ (৪৩৫) ছিয়ামের আদব কি
কি?
উত্তরঃ ছিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ আদব হচ্ছে, আল্লাহ্ভীতি অর্জন করা তথা আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা।
কেননা আল্লাহ্ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ
الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম
ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।(সূরা
বাক্বারাঃ ১৮৩)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেন,
]مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ
بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ[
যে ব্যক্তি
(রোযা রেখে) মিথ্যা কথা, মিথ্যা
কাজ-কারবার ও মূর্খতা পরিত্যাগ করল না, তার পানাহার পরিহার করার মাঝে আল্লাহর কোন দরকার নেই।[44]
ছিয়ামের আরো আদব হচ্ছে, বেশী বেশী দান-খায়রাত করা, নেককাজ ও জনকল্যাণ মূলক কাজ বাস্তবায়ন
করা। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন সর্বাধিক দানশীল ব্যক্তি।
রামাযান মাসে যখন জিবরীল (আঃ) তাঁকে কুরআন শিক্ষা দিতেন তখন তিনি আরো বেশী দান করতেন।[45]
আরো আদব হচ্ছে, আল্লাহ্ যা হারাম করেছেন তা থেকে দূরে
থাকা। যাবতীয় মিথ্যাচার, গালিগালাজ, ধোকা, খিয়ানত, হারাম অশ্লীল বস্তু দেখা বা শোনা প্রভৃতি
থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা প্রতিটি মানুষের উপর ওয়াজিব। বিশেষ করে রোযাদারের জন্য তো অবশ্যই।
রোযার আদব হচ্ছে, সাহুর খাওয়া। এবং তা দেরী করে খাওয়া। কেননা
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً তোমরা সাহুর খাও। কেননা সাহুরে
রয়েছে বরকত।[46]
ছিয়ামের আদব হচ্ছে, দ্রুত ইফতার করা। সূর্য অস্ত যাওয়া নিশ্চিত
হলে বা অস্ত যাওয়ার অনুমান প্রবল হলেই সাথে সাথে দেরী না করে ইফতার করা। কেননা নবী
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, لَا يَزَالُ النَّاسُ
بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ মানুষ
কল্যাণের মাঝে থাকবে, যতদিন
তারা দ্রুত ইফতার করবে।[47]
ইফতারের আদব হচ্ছে, কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করা, সম্ভব না হলে যে কোন খেজুর দ্বারা। খেজুর
না পেলে পানি দ্বারাই ইফতার করবে।
প্রশ্নঃ (৪৩৬) ইফতারের জন্য
কোন দু’আ কি প্রমাণিত আছে? রোযাদার কি মুআয্যিনের জবাব দিবে নাকি ইফতার চালিয়ে যাবে?
উত্তরঃ দু’আ কবূল হওয়ার অন্যতম সময় হচ্ছে ইফতারের সময়। কেননা সময়টি হচ্ছে ইবাদতের শেষ মূহুর্ত।
তাছাড়া মানুষ সাধারণতঃ ইফতারের সময় অধিক দুর্বল হয়ে পড়ে। আর মানুষ যত দুর্বল হয় তার
অন্তর তত নরম ও বিনয়ী হয়। তখন দু’আ করলে মনোযোগ আসে বেশী এবং আল্লাহ্র
দিকে অন্তর ধাবিত হয়।
ইফতারের সময় দু’আ হচ্ছেঃ
اللَّهُمَّ لَكَ
صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ হে আল্লাহ্ আপনার জন্য রোযা রেখেছি এবং আপনার রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।[48]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) ইফতারের সময় এই দু’আ পাঠ করতেনঃ ذَهَبَ الظَّمَأُ
وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ তৃষ্ণা বিদূরিত হয়েছে, শিরা-উপশিরা তরতাজা হয়েছে এবং আল্লাহ্ চাহে
তো প্রতিদান সুনিশ্চিত হয়েছে।[49] হাদীছ দু’টিতে যদিও দুর্বলতা রয়েছে কিন্তু কোন কোন বিদ্বান উহাকে হাসান
বলেছেন। মোটকথা এগুলো দু’আ বা অন্য
কোন দু’আ পাঠ করবে। ইফতারের
সময় হচ্ছে দু’আ কবূল হওয়ার একটি
গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত। কেননা হাদীছে এরশাদ হয়েছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, إِنَّ لِلصَّائِمِ
عِنْدَ فِطْرِهِ لَدَعْوَةً مَا تُرَدُّ ছিয়াম
পালনকারীর ইফতারের সময়কার দু’আ প্রত্যাখ্যান করা হয় না।[50]
আর ইফতারের সময় মুআয্যিনের
জবাব দেয়া শরীয়ত সম্মত। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا
يَقُولُ মুআয্যিনের আযান শুনলে তার
জবাবে সে যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বল।[51] এ হাদীছটি প্রত্যেক অবস্থাকে শামিল করে। তবে দলীলের ভিত্তিতে কোন অবস্থা ব্যতিক্রম
হলে ভিন্ন কথা।
প্রশ্নঃ (৪৩৭) ছিয়াম কাযা থাকলে শাওয়ালের
ছয়টি রোযা রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ بِسِتٍّ
مِنْ شَوَّالٍ فَكَأَنَّمَا صَامَ الدَّهْرَ
যে ব্যক্তি রামাযানের রোযা রাখার
পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখবে, সে সারা বছর রোযা রাখার প্রতিদান লাভ করবে।[52] কোন মানুষের যদি রোযা কাযা থাকে আর সে শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে, সে কি রামাযানের পূর্বে রোযা রাখল না রামাযানের
পর।
উদাহরণঃ জনৈক লোক রামাযানের ২৪টি রোযা রাখল। বাকী রইল ছয়টি। এখন সে যদি কাযা আদায় না করেই
শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে, তাকে
কি বলা যাবে সে রামাযানের রোযা পূর্ণ করার পর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখল? কেননা সে তো রামাযানের রোযা পূর্ণই করেনি।
অতএব রামাযানের রোযা কাযা থাকলে শাওয়ালের ছয় রোযার প্রতিদান তার জন্য প্রমাণিত হবে
না।
অবশ্য আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ
রয়েছে, কারো রোযা কাযা থাকলে তার জন্য
নফল রোযা জায়েয কি না? কিন্তু
আমাদের এই মাসআলাটি এই মতবিরোধের অন্তর্ভূক্ত নয়। কেননা শাওয়ালের ছয়টি রোযা রামাযানের
সাথে সম্পর্কিত। যে ব্যক্তি রামাযানের রোযা পূর্ণ করেনি তার জন্য উক্ত ছয় রোযার ছওয়াব
সাব্যস্ত হবেনা।
কাযা রোযা বাকী রেখে মৃত্যু বরণ করলে তার বিধান।
প্রশ্নঃ (৪৩৮) জনৈক অসুস্থ ব্যক্তি
রামাযানে রোযা কাযা করেছে। কিন্তু পরবর্তী মাস শুরু হওয়ার চারদিনের মাথায় তার মৃত্যু
হয়। তার পক্ষ থেকে কি কাযা রোযাগুলো আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ তার এই অসুখ যদি চলতেই থাকে সুস্থ না হয় এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করে তবে তার
পক্ষ থেকে কাযা আদায় করতে হবেনা। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
]وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ
فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির
অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে
নিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) অতএব অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হচ্ছে, সুস্থ হলেই কাযা রোযাগুলো দ্রুত আদায় করে
নেয়া।
কিন্তু রোযা রাখতে সমর্থ হওয়ার
পূর্বেই যদি মৃত্যু বরণ করে, তবে রোযার আবশ্যকতা রহিত হয়ে যাবে। কেননা সে তো এমন কোন সময় পায়নি যাতে সে রোযাগুলো
কাযা আদায় করতে পারে। যেমন একজন লোক রামাযান আসার পূর্বেই শাবানে মৃত্যু বরণ করল। অতএব
রামাযানের রোযা রাখা তার জন্য আবশ্যক নয়। কিন্তু অসুস্থতা যদি এমন হয় যা সুস্থ হওয়ার
কোন সম্ভাবনা নেই, তবে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের
বিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।
প্রশ্নঃ
(৪৩৯) রামাযানের রোযা বাকী থাকাবস্থায় পরবর্তী রামাযান এসে গেলে কি করবে?
উত্তরঃ একথা সবার জানা যে, আল্লাহ্
তা‘আলা বলেছেন,
]فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক
এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে
লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করে নিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) অতএব এ লোকটি যখন
শরীয়ত সম্মত দলীলের ভিত্তিতে রোযা ভঙ্গ করেছে, তখন আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নার্থে তা
কাযা আদায় করা উচিত। পরবর্তী রামাযান আসার পূবেই উহা কাযা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব।
কেননা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আমার
রামাযানের কিছু রোযা বাকী রয়ে যেত। কিন্তু শাবান মাস না আসলে আমি উহা কাযা আদায় করতে
পারতাম না।’[53] আর তার কারণ ছিল রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে তাঁর
ব্যস্ততা। সুতরাং আয়েশা (রাঃ)এর উক্ত বাণী থেকে প্রমাণিত হয় যে, পরবর্তী রামাযান আসার পূর্বে উহা অবশ্যই
কাযা আদায় করতে হবে।
কিন্তু সে যদি পরবর্তী রামাযান
পর্যন্ত দেরী করে এবং রোযাটি রয়েই যায়, তবে তার উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহ্র কাছে তওবা ইস্তেগফার করা, এই শীথিলতার জন্য লজ্জিত অনুতপ্ত হওয়া এবং যত দ্রুত সম্ভব তা কাযা আদায় করে নেয়া।
কেননা দেরী করলে কাযা আদায় করার আবশ্যকতা রহিত হয়ে যায় না।
প্রশ্নঃ (৪৪০) শাওয়ালের ছয়টি
রোযা পালন করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ শাওয়ালের ছয়টি রোযা পালন করার ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, ঈদের পর পরই উহা আদায় করা এবং পরস্পর আদায়
করা। বিদ্বানগণ এভাবেই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। কেননা এতে রামাযানের অনুসরণ বাস্তবায়ন
হয়। হাদীছে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি রামাযানের পরে পরে শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে..।তাছাড়া
এতে নেক কাজ সম্পাদনে তাড়াহুড়া করা হল, যে ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া এতে বান্দার দৃঢ়তার
প্রমাণ রয়েছে। দৃঢ়তা মানুষের পরিপূর্ণতার লক্ষণ। সচেতন বান্দা সুযোগ হাতছাড়া করে না।
কেননা মানুষ জানে না পরবর্তীতে কি তার জন্য অপেক্ষা করছে। অতএব বান্দা কাঙ্খিত লক্ষ্যে
পৌঁছতে চাইলে তাকে প্রতিটি নেক কর্মের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে হবে সুযোগের সৎ ব্যবহার
করতে হবে।
প্রশ্নঃ (৪৪১) শাওয়ালের ছয়টি
রোযা রাখার জন্য কি ইচ্ছামত দিন নির্ধারণ করা জায়েয? নাকি তার জন্য কোন সময় নির্দিষ্ট
করা আছে? এ দিনগুলো
রোযা রাখলে কি উহা ফরযের মত হয়ে যাবে এবং প্রতি বছর আবশ্যিকভাবে রোযা পালন করতে হবে?
উত্তরঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্ সূত্রে
প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেন,
]مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ بِسِتٍّ
مِنْ شَوَّالٍ فَكَأَنَّمَا صَامَ الدَّهْرَ[
যে ব্যক্তি রামাযানের রোযা রাখার
পর শওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখবে, সে সারা বছর রোযা রাখার প্রতিদান লাভ করবে।[54] এ ছয়টি রোযার জন্য কোন দিন নির্দিষ্ট করা নেই। মাসের যে কোন সময় রোযাগুলো রাখা
যায়। চাই মাসের প্রথম দিকে হোক বা মধ্যখানে বা শেষের দিকে। লাগাতার হোক বা ভেঙ্গে ভেঙ্গে
হোক- সবই জায়েয। বিষয়টি প্রশস্ত- সুযোগ সম্পন্ন (আল্ হামদুল্লিাহ্)। তবে রামাযান
শেষ হওয়ার পর পরই মাসের প্রথম দিকে দ্রুত করে নেয়া বেশী উত্তম। কেননা এতে নেক কাজে
প্রতিযোগিতা করা হল, যা কাম্য।
কোন বছর এ ছিয়াম পালন করবে কোন
বছর করবে না তাতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এ ছিয়াম নফল ফরয নয়।
প্রশ্নঃ (৪৪২) আশুরা ছিয়ামের
বিধান কি?
উত্তরঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরত করে মদীনা আগমণ করে দেখেন ইহুদীরা
মুহার্রামের দশ তারিখে রোযা পালন করছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ
وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ
আমরা
মূসার অনুসরণ করার ব্যাপারে তোমাদের চাইতে অধিক হকদার। তিনি নিজে সে দিনের রোযা রাখলেন
এবং ছাহাবীদেরকেও নির্দেশ দিলেন।[55] বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত ইবনু আব্বাসের হাদীছে বলা হয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আশুরা দিবসে রোযা রেখেছেন এবং ছাহাবীদেরকে রোযা রাখার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এ
রোযার ফযীলত সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ
السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ আল্লাহ্র
কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।[56] কিন্তু ইহুদীদের বিরোধীতা করার জন্য তিনি এর একদিন পূর্বে ৯ তারিখ অথবা এক দিন
পরে ১১ তারিখ রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুতরাং
আশুরার রোযার ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে, মুহার্রমের দশ তারিখের সাথে ৯ তারিখ অথবা ১১ তারিখের রোযা রাখা।
অবশ্য ১১ তারিখের চেয়ে ৯ তারিখ রোযা রাখা অধিক উত্তম।
প্রশ্নঃ (৪৪৩) শাবান মাসে রোযা
রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ শাবান মাসে রোযা রাখা এবং অধিক হারে রাখা সুন্নাত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, مَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন সময় আমি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে এত বেশী
রোযা রাখতে দেখিনি।[57] এ হাদীছ অনুযায়ী শাবান মাসে অধিকহারে রোযা রাখা উচিত।
বিদ্বানগণ বলেন, শাবান মাসে রোযা রাখা সুন্নাতে মুআক্কাদা
নামাযের অনুরূপ। এই রোযা যেন রামাযান মাসের ভুমিকা। অর্থাৎ রামাযানের পূর্বের সুন্নাত
রোযা। অনুরূপভাবে শাওয়ালের রোযা রামাযানের পরের সুন্নাত ¯^iƒc| যেমন ফরয নামাযের আগে ও পরে
সুন্নাত রয়েছে।
তাছাড়া শাবান মাসে রোযার উপকারিতা
হচ্ছে, নিজেকে রামাযানের রোযা রাখার
ব্যাপারে প্রস্তুত করা, রোযায়
অভ্যস্ত করে তোলা। যাতে করে ফরয রোযা রাখা তার জন্য সহজসাধ্য হয়।[58]
প্রশ্নঃ (৪৪৪) যার অভ্যাস আছে একদিন রোযা রাখা ও একদিন ছাড়া। সে কি শুক্রবারেও
রোযা রাখতে পারে?
উত্তরঃ হ্যাঁ। কোন মানুষ যদি এক দিন পর পর রোযা রাখার অভ্যাস করে
থাকে এবং তার রোযার দিন শুক্রবার হয় বা শনিবার বা রোববার হয়, তবে কোন অসুবিধা নেই। তবে সে দিন যেন এমন না হয় যখন রোযা রাখা
হারাম। যেমন দু’ঈদের দিন, আইয়্যামে তাশরীকের দিন (কুরবানী ঈদের পরের তিন দিনকে আইয়্যামে
তাশরীক বলা হয়)। তখন রোযা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। নারীদের ক্ষেত্রে ঋতু বা নেফাসের দিনগুলো
রোযা রাখা হারাম।
প্রশ্নঃ (৪৪৫) ছওমে বিছাল কাকে বলে? এটা কি শরীয়ত সম্মত?
উত্তরঃ ছওমে বিসাল বা অবিচ্ছিন্ন ছিয়াম হচ্ছে, ইফতার না করে দু’দিন একাধারে রোযা রাখা। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এরকম রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, কেউ যদি অবিচ্ছিন্ন করতে চায়, তবে শেষ রাতে সাহুরের সময় পর্যন্ত মিলিত করতে পারে।[59] সাহুর পর্যন্ত রোযাকে অবিচ্ছিন্ন করণ জায়েয, সুন্নাত নয়; কোন ফযীলতপূর্ণ কাজও নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ্
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করাকে কল্যাণের কাজ
বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
]لا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا
الْفِطْرَ[
মানুষ ততদিন কল্যাণের মাঝে থাকবে, যতদিন তারা দ্রুত ইফতার করবে।[60] কিন্তু সাহুরের সময় পর্যন্ত রোযাকে চালিয়ে যাওয়া বৈধ করেছেন। লোকেরা যখন বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি তো ইফতার না
করেই রোযা চালিয়ে যান? তিনি
বললেন, আমার অবস্থা তোমাদের মত নয়, আমাকে আমার পালনকর্তা খাওয়ান ও পান করান।[61]
প্রশ্নঃ (৪৪৬) বিশেষভাবে জুমআর
দিবস রোযা নিষেধ। এর কারণ কি? কাযা ছিয়ামও কি এদিন রাখা নিষেধ?
উত্তরঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি
বলেন, لا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ ولا
ليلتها بقيام এককভাবে
শুধুমাত্র শুক্রবারের দিনে রোযা রাখবে না এবং রাতে ক্বিয়াম করবে না।[62] রোযা রাখার জন্য এককভাবে এ দিনকে বেছে নেয়া নিষেধের হিকমত হচ্ছে, জুমআর দিন সপ্তাহিক ঈদের দিন। জুমআ ইসলামের
তৃতীয় ঈদ হিসেবে গণ্য। প্রথম ঈদ হচ্ছে রামাযান শেষে ঈদুল ফিতর। দ্বিতীয়টি কুরবানীর
ঈদ। আর তৃতীয়টি হচ্ছে, সাপ্তাহিক
ঈদ জুমআর দিন।[63]
একারণেই আলাদাভাবে এদিনে রোযা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।
তাছাড়া এদিনে পুরুষদের জন্য
উচিত হচ্ছে আগেভাগে জুমআর নামাযে যাওয়া, দু’আ যিকির ও কুরআন তেলাওয়াতে মাশগুল হওয়া। এদিনটি আরাফার দিবসের অনুরূপ। আরাফার দিবসে
হাজীগণ রোযা রাখবেন না। কেননা এদিন তিনি দু’আ ও যিকিরে মাশগুল থাকবেন। একটি
মূলনীতি হচ্ছে: কয়েকটি ইবাদত যদি একত্রিত হয়, তখন যেটা পিছানো সম্ভব হবে না সেটা তাৎক্ষণিক
আদায় করবে এবং যেটি পিছানো সম্ভব হবে তা পিছিয়ে দিয়ে পরে আদায় করবে।
যদি প্রশ্ন
করা হয় যে, জুমআর দিন সাপ্তাহিক ঈদের দিন হওয়ার
কারণে যদি রোযা রাখা নিষেধ হয়ে থাকে, তবে তো অপর দু’টি ঈদের মত এদিনে অন্যান্য রোযা রাখাও হারাম হয়ে যায়?
উত্তরে আমরা বলবঃ এদিনটির বিধান
অন্য দু’ঈদের চেয়ে ভিন্ন। কেননা ইহা প্রতি মাসে চারবার আগমণ করে। একারণে এদিনে রোযা রাখার
নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণরূপে হারাম নয়। তাছাড়া দু’ঈদের
মাঝে আরো বিশেষ যে বৈশিষ্ট রয়েছে তা জুমআর দিনে নেই।
কিন্তু যদি জুমআর পূর্বে একদিন
ও পরে একদিন রোযা পালন করে, তখন বুঝা যাবে যে, এককভাবে
জুমআর দিবস রোযা পালন করার উদ্দেশ্য ছিল না। আর এটা জায়েয।[64]
এককভাবে জুমআর দিনে রোযা রাখার
নিষেধাজ্ঞা নফল এবং কাযা উভয়ের ক্ষেত্রে প্রজোয্য। কেননা হাদীছের নিষেধাজ্ঞা থেকে সাধারণভাবে
একথাই বুঝা যায়। তবে যদি কোন মানুষ এরকম ব্যস্ত থাকে যে, তার কাযা ছিয়াম জুমআর দিবস ছাড়া অন্য সময়
আদায় করা সম্ভব নয়, তখন তার জন্য এককভাবে সে দিন
রোযা পালন করা মাকরূহ নয়। কেননা তার ওযর রয়েছে।
ইচ্ছাকৃতভাবে নফল ছিয়াম ভঙ্গ করে ফেলার
বিধান।
প্রশ্নঃ (৪৪৭) কোন মানুষ যদি
নফল ছিয়াম ইচ্ছাকৃত ভঙ্গ করে ফেলে, তবে কি গুনাহগার হবে? যদি সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ করে, তবে কি কাফ্ফারা দিতে হবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ নফল রোযা রেখে যদি পানাহার বা স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ করে ফেলে, তবে কোন গুনাহ্ নেই। নফল রোযা শুরু করলেই
তা পূর্ণ করা আবশ্যক নয়। তবে হজ্জ-ওমরার কাফ্ফারার রোযা পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু নফল
ছিয়াম শুরু করার পর পূর্ণ করাই উত্তম। তাই নফল ছিয়াম রেখে স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ
করলে কাফ্ফারা দিতে হবে না। কেননা তা পূর্ণ করা আবশ্যক নয়।
কিন্তু ছিয়াম যদি ফরয হয় এবং
স্ত্রী সহবাস করে তবে তা নাজায়েয। কেননা বিশেষ প্রয়োজন না দেখা দিলে ফরয ছিয়াম ভঙ্গ
করা জায়েয নয়। তবে রামাযানের রোযা যদি তার উপর ফরয থাকে এবং দিনের বেলা স্ত্রী সহবাসে
লিপ্ত হয়, তবে কাফ্ফারা দিতে হবে। রামাযানের
রোযা যদি তার উপর ফরয থাকেএকথার অর্থ হচ্ছে: যদি ¯^vgx-¯¿x দু’জনই সফরে
থাকে, দু’জনেই
রোযা রাখে, তারপর সহবাসের মাধ্যমে রোযা
ভঙ্গ করে, তবে তারা গুনাহগার হবে না। তাদেরকে
কাফ্ফারা দিতে হবেনা। অবশ্য তাদেরকে উক্ত দিনের ছিয়াম কাযা আদায় করতে হবে।
প্রশ্নঃ (৪৪৮) এতেকাফ এবং এতেকাফকারীর বিধান কি?
উত্তরঃ এতেকাফ হচ্ছে নিঃসঙ্গ অবস্থায় আল্লাহ্র আনুগত্য করার জন্য মসজিদে অবস্থান করা।
লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করার জন্য এতেকাফ করা সুন্নাত। আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র
কুরআনে এদিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ করেন,
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي
الْمَسَاجِدِ
মসজিদে এতেকাফ করা অবস্থায় তোমরা
স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৭) ছহীহ্ বুখারীতে প্রমাণিত
আছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) এতেকাফ করেছেন, তাঁর
সাথে ছাহাবায়ে কেরামও এতেকাফ করেছেন।[65]
এতেকাফের এই বিধান শরীয়ত সম্মত। তা রহিত হয়ে যায়নি। ছহীহ্ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি
বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) রামাযানের শেষ দশকে এতেকাফ করেছেন, এমনকি আল্লাহ্ তাকে মৃত্যু দান করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীরা এতেকাফ করেছেন।[66]
ছহীহ্ মুসলিমে আবু সাঈদ খুদরী
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানের প্রথম দশকে এতেকাফ করেছেন। তারপর
দ্বিতীয় দশকে এতেকাফ করেছেন। অতঃপর বলেন,
إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوَّلَ
أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الأَوْسَطَ ثُمَّ
أُتِيتُ فَقِيلَ لِي إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ
أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ
নিশ্চয় আমি রামাযানের প্রথম দশকে এতেকাফ করে এই রাত্রি (লায়লাতুল কদর)
অনুসন্ধান করেছি। তারপর দ্বিতীয় দশকে এতেকাফ করেছি। অতঃপর ঐশী আগন্তুক কর্তৃক আমাকে
বলা হয়েছে, নিশ্চয় উহা শেষ দশকে। তোমাদের
মধ্যে কেউ যদি এতেকাফ করতে চায়, সে যেন এতেকাফ করে।[67] অতঃপর লোকেরা তাঁর সাথে এতেকাফ করেছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘এতেকাফ করা যে সুন্নাত সে সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে কোন মতবিরোধ
আমার জানা নেই।’
তাই কুরআন-সুন্নাহ্ ও ইজমার
দলীলের ভিত্তিতে এতেকাফ করা সুন্নাত।
এতেকাফ করার স্থান হচ্ছে, যে কোন শহরে অবস্থিত মসজিদ। যেখানে জামাতে
নামায অনুষ্ঠিত হয়। কেননা আল্লাহ্ বলেছেনঃ মসজিদ সমূহে ইতেকাফ করা অবস্থায়..।উত্তম
হচ্ছে জুমআর মসজিদে এতেকাফ করা। যাতে করে জুমআ আদায় করার জন্য বের হতে না হয়। অন্য
মসজিদে এতেকাফ করলেও কোন অসুবিধা নেই, তবে জুমআর জন্য আগে ভাগে মসজিদে চলে যাবে।
এতেকাফ
কারীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে, আল্লাহ্র আনুগত্যপূর্ণ কাজ তথা কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, নফল নামায প্রভৃতিতে মাশগুল থাকা। কেননা এতেকাফের উদ্দেশ্যই
হচ্ছে এটা। মানুষের সামান্য কথাবার্তায় কোন অসুবিধা নেই বিশেষ করে কথা যদি উপকারী হয়।
এতেকাফকারীর জন্য স্ত্রী সহবাস
ও স্ত্রী সোহাগ বা শৃঙ্গার প্রভৃতি হারাম।
মসজিদ থেকে বের হওয়া তিন ভাগে
বিভক্তঃ
1)
জায়েয। শরীয়ত অনুমদিত ও অভ্যাসগত
যরূরী কাজে বের হওয়া। যেমন জুমআর নামাযের জন্য বের হওয়া, পানাহার নিয়ে আসার কেউ না থাকলে সে উদ্দেশ্যে
বের হওয়া। ওযু, ফরয গোসল, পেশাব-পায়খানার জন্য বের হওয়া।
2)
ওয়াজিব নয় এমন নেকীর কাজে বের
হওয়া। যেমন, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযায় শরীক হওয়া। তবে এতেকাফ শুরু করার
সময় এসমস্ত কাজের জন্য বের হওয়ার যদি শর্ত করে নেয়, তবে জায়েয হবে। অন্যথায় নয়।
3)
এতেকাফের বিরোধী কাজে বের হওয়া।
যেমন বাড়ী যাওয়া বা কেনা-বেচার জন্য বের হওয়া। স্ত্রী সহবাস করা। এ সমস্ত কাজ কোনভাবেই
এতেকাফকারীর জন্য জায়েয নয়।
@@@
ছিয়াম অধ্যায় সমাপ্ত
[১] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ছিয়াম রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যা এবং তার কারবার পরিত্যাগ করে না। হাদীছটির বাক্য ইবনু মাজাহ্ থেকে নেয়া হয়েছে।
[২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম অনুচ্ছেদ: নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী যখন তোমরা চাঁদ দেখবে...। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম অনুচ্ছেদ: চাঁদ দেখে রামাযানের রোযা রাখা ওয়াজিব।
[৩] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম অনুচ্ছেদ: নবী ব এর বাণী যখন তোমরা চাঁদ দেখবে...। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম অনুচ্ছেদ: চাঁদ দেখে রামাযানের রোখা ওয়াজিব।
[৪] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ বিচার ফয়সালা অনুচ্ছেদঃ বাতিল ফয়সালা ভঙ্গ করা এবং নতুন বিষয় প্রত্যাখ্যান।
[৫] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও নামাযের স্থান, অনুচ্ছেদঃ ছুটে যাওয়া নামায কাযা আদায় করা।
[৬] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ সফরে কাজের দায়িত্বে থাকলে রোযা ভঙ্গ করার প্রতিদান।
[৭] . বুখারী, অধ্যায়ঃ নামায কছর করা, অনুচ্ছেদঃ নিজ এলাকা থেকে বের হলে নামায কছর করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায এবং কছর করা, অনুচ্ছেদঃ মুসাফিরের নামায এবং কছর করা।
[৮] . বুখারী, অধ্যায়ঃ আযান, অনুচ্ছেদঃ নামাযে দ্রুত যাবে না। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও নামাযের স্থান, অনুচ্ছেদঃ ধীরস্থীরভাবে মসজিদে আগমণ করা।
[৯] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ কঠিন গরমে যাকে ছাঁয়া দেয়া হচ্ছিল তার সম্পর্কে নবী ব এর বাণী: “সফর অবস্থায় ছিয়াম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।” মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: পাপের সফর না হলে রামাযান মুসাফিরের রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা উভয়টিই বৈধ।
[১০] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: পাপের সফর না হলে রামাযান মুসাফিরের রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা উভয়টিই বৈধ।
[১১] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ নং ৩৫। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সফরে রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা ইচ্ছাধীন।
[১২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ নং ৩৫। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সফরে রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা ইচ্ছাধীন।
[১৩] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ কঠিন গরমে যাকে ছাঁয়া দেয়া হচ্ছিল তার সম্পর্কে নবী ব এর বাণী: “সফর অবস্থায় ছিয়াম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।” মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: পাপের সফর না হলে রামাযান মাসে মুসাফিরের রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা উভয়টিই বৈধ।
[১৪] . বুখারী, অধ্যায়ঃ মাগাযী, অনুচ্ছেদ: রামাযান মাসে মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ।
[১৫] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: পাপের সফর না হলে রামাযান মাসে মুসাফিরের রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা উভয়টিই বৈধ।
[১৬] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ কঠিন গরমে যাকে ছাঁয়া দেয়া হচ্ছিল তার সম্পর্কে নবী ব এর বাণী: “সফর অবস্থায় ছিয়াম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।” মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: পাপের সফর না হলে রামাযান মাসে মুসাফিরের রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা উভয়টিই বাধা।
[১৭] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ওমরাহ্, অনুচ্ছেদঃ ক্লান্তি অনুযায়ী ওমরার ছওয়াব। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হজ্জ, অনুচ্ছেদঃ নেফাস বিশিষ্ট নারীদের ইহরাম করা।
[১৮] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ভুলক্রমে পানাহার করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ভুলক্রমে পানাহার করলে রোযা ভঙ্গ হবে না।
[১৯] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুচ্ছেদঃ গর্হিত কাজে বাধা দেয়া ঈমানের অন্তর্ভূক্ত।
[২০] . আবু দাঊদ, অধ্যায়: নাক ঝাড়া, ১৪২। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: নাকে পানি নেয়ায় বাড়াবাড়ি করা। ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা।
[২১] . বুখারী মুআল্লাক সনদে, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: রোযাদারের কাঁচা ও শুকনা মেসওয়াক ব্যবহার করা।
[২২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: রোযাদারের কাঁচা ও শুকনা মেসওয়াক ব্যবহার করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: মেসওয়াক করা।
[২৩] . ধুমপানের ক্ষেত্রে যেহেতু ধুঁয়াটাই নাকের মধ্যে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে এজন্য তা দ্বারা রোযা ভঙ্গ হবে। অবশ্য ধুমপান মূলতঃ হারাম কাজ। যা থেকে বেঁচে থাকা মুসলমান তো অবশ্যই প্রত্যেক মানুষের জন্য অপরিহার্য।
[২৪] . আবু দাঊদ, অধ্যায়: নাক ঝাড়া, ১৪২। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা।
[২৫] . ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ছিয়ামের ফযীলত।
[২৬] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক সৎকাজকে সাদকা বলা হয় তার বর্ণনা।
[২৭] . মযীঃ, স্ত্রী শৃঙ্গার করার কারণে বা যে কোন ভাবে উত্তেজিত হলে লিঙ্গের আগায় যে আঠালো পানি বের হয় তাকে আরবীতে মযী বলা হয়। এতে ওযু আবশ্যক হয় গোসল নয়।
[২৮] . আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃত বমি করা। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করার বর্ণনা।
[২৯] . বুখারী সনদ বিহীন মুআল্লাক বর্ণনা করেন। অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের শিঙ্গা লাগানো ও বমি করা। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের শিঙ্গা লাগানো ঠিক না।
[৩০] . বুখারী, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতীর ছিয়াম পালন না করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুচ্ছেদঃ নেক কাজ কম হলে ঈমানও কমে যায়।
[৩১] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্র বাণী, ‘প্রত্যুষে (রাতের) কালো রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর।’ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ফজর উদিত হলেই ছিয়াম শুরু হয়ে যাবে।
[৩২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ভুলক্রমে পানাহার করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ভুলক্রমে পানাহার করলে রোযা ভঙ্গ হবে না।
[৩৩] . ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়ঃ তালাক, অনুচ্ছেদঃ ভুল ক্রমে এবং বাধ্য করে তালাক।
[৩৪] . অর্থাৎ- রোযা ভঙ্গের বৈধ কোন কারণ তার সামনে নেই। যেমন সে সফরেও নয়, অসুস্থও নয়।
[৩৫]. বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রামাযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করলে..। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের রামাযানের দিনে স্ত্রী সহবাস কঠোরভাবে হারাম।
[৩৬] . আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করার বর্ণনা।
[৩৭] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের গোসল করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ নাপাক অবস্থায় ফজর হয়ে গেলেও ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে।
[৩৮] . আবু দাঊদ, অধ্যায়: নাক ঝাড়া, ১৪২। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ নাকে পানি নেয়ায় বাড়াবাড়ি করা। ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা।
[৩৯] . আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ তৃষ্ণায় রোযাদারের মাথায় পানি ঢালা।
[৪০] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: নবী ব এর বাণী তোমাদেরকে যেন বাধা না দেয়...। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ফজর হলেই ছিয়াম শুরু হয়ে যায়।
[৪১] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ইলম, অনুচ্ছেদঃ “অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক।”
[৪২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ সফরে রোযা রাখা ও রোযা ভঙ্গ করা।
[৪৩] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ছিয়াম রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যা এবং তার কারবার পরিত্যাগ করে না। হাদীছটির বাক্য ইবনু মাজাহ্ থেকে নেয়া হয়েছে।
[৪৪] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ছিয়াম রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যা এবং তার কারবার পরিত্যাগ করে না। হাদীছটির বাক্য ইবনু মাজাহ্ থেকে নেয়া হয়েছে।
[৪৫] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: নবী ব রামাযানে সর্বাধিক দানশীল হতেন।
[৪৬] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুরের বরকত। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুরের ফযীলত।
[৪৭] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: দ্রুত ইফতার করা। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুরের ফযীলত।
[৪৮] . আবু দাউদ, অনুচ্ছেদঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইফতারের দু’আ। তবে এই দু’আটির সনদ (সূত্র) দুর্বল তাই উহা গ্রহণযোগ্য নয়। (দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল, ৪/৩৬-৩৯ পৃঃ যঈফ আবু দাঊদ, আলবানী)
[৪৯] . আবু দাউদ, অনুচ্ছেদঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইফতারের দু’আ। (এ হাদীছটি ছহীহ, দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৯২০)
[৫০] . [হাদীছ ছহীহ] ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়ঃ ছিয়াম হা/ ১৭৪৩, ১৭৫৩।
[৫১] . বুখারী, অধ্যায়ঃ আযান, অনুচ্ছেদঃ আযান শুনলে কি বলতে হয়। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছালাত, অনুচ্ছেদঃ মুআয্যিনের অনুরূপ জবাব দেয়া মুস্তাহাব।
[৫২] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখা মুস্তাহাব।
[৫৩] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: কাযা ছিয়াম কখন আদায় করবে।
[৫৪] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখা মুস্তাহাব।
[৫৫] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ আশুরার রোযা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ আশুরার রোযা।
[৫৬] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক মাসে তিনটি এবং আরাফার দিবসে রোযা রাখা মুস্তাহাব।
[৫৭] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ শাবানের রোযা।
[৫৮] . কিন্তু নির্দিষ্ট আকারে শুধুমাত্র মধ্য শাবানে অর্থাৎ ১৫ তারিখে রোযা রাখা বিদআত। আমাদের দেশে এটাকে শবে বরাতের রোযা বলা হয়। কেননা এর ভিত্তি ছহীহ্ সুন্নাহ্ থেকে প্রমাণিত নয়। ইবনু মাজার বর্ণনায় বলা হয়ঃ “মধ্য শাবান এলে তোমরা রাত্রিতে ইবাদত করবে ও দিনে রোযা পালন করবে..।” এ হাদীছটি জাল। কেননা এর সনদে ইবনু আবী সাবরাহ্ নামক জনৈক বর্ণনাকারী রয়েছে। সে হাদীছ জাল করত। (আহকামু রজব ওয়া শাবান।)- অনুবাদক।
[৫৯] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ সাহুরের সময় পর্যন্ত ছিয়াম মিলিত করা।
[৬০] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: দ্রুত ইফতার করা। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুর খাওয়ার ফযীলত।
[৬১] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুর খাওয়ার বরকত; কিন্তু সাহুর খাওয়া ওয়াজিব নয়। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: মিলিতভাবে রোযা রাখা নিষেধ।
[৬২] . মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: এককভাবে জুমআর দিন রোযা রাখা মাকরূহ।
[৬৩] . রসূলুল্লাহ্ ব বলেন, “নিশ্চয় জুমআর দিন ঈদের দিন।” (আহমাদ হা/৭৬৮২)
[৬৪] . রাসূলুল্লাহ্ ব বলেন, “তোমাদের কেহ যেন শুধুমাত্র জুমআর দিবসে রোযা না রাখে। তবে এর পূর্বে একদিন বা পরে একদিন মিলিয়ে রোযা রাখতে পারে।” (বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম হা/১৮৪৯)
[৬৫] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ই‘তেকাফ, অনুচ্ছেদঃ এ‘তেকাফ করা।
[৬৬] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ই‘তেকাফ, অনুচ্ছেদঃ শেষ দশকে এ‘তেকাফ করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ই‘তেকাফ, অনুচ্ছেদঃ রামাযানের শেষ দশকে এ‘তেকাফ করা।
[৬৭] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ই‘তেকাফ, অনুচ্ছেদঃ শেষ দশকে এ‘তেকাফ করা।
ছিয়াম অধ্যায় সমাপ্ত
[১] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ছিয়াম রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যা এবং তার কারবার পরিত্যাগ করে না। হাদীছটির বাক্য ইবনু মাজাহ্ থেকে নেয়া হয়েছে।
[২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম অনুচ্ছেদ: নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী যখন তোমরা চাঁদ দেখবে...। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম অনুচ্ছেদ: চাঁদ দেখে রামাযানের রোযা রাখা ওয়াজিব।
[৩] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম অনুচ্ছেদ: নবী ব এর বাণী যখন তোমরা চাঁদ দেখবে...। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম অনুচ্ছেদ: চাঁদ দেখে রামাযানের রোখা ওয়াজিব।
[৪] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ বিচার ফয়সালা অনুচ্ছেদঃ বাতিল ফয়সালা ভঙ্গ করা এবং নতুন বিষয় প্রত্যাখ্যান।
[৫] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও নামাযের স্থান, অনুচ্ছেদঃ ছুটে যাওয়া নামায কাযা আদায় করা।
[৬] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ সফরে কাজের দায়িত্বে থাকলে রোযা ভঙ্গ করার প্রতিদান।
[৭] . বুখারী, অধ্যায়ঃ নামায কছর করা, অনুচ্ছেদঃ নিজ এলাকা থেকে বের হলে নামায কছর করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায এবং কছর করা, অনুচ্ছেদঃ মুসাফিরের নামায এবং কছর করা।
[৮] . বুখারী, অধ্যায়ঃ আযান, অনুচ্ছেদঃ নামাযে দ্রুত যাবে না। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও নামাযের স্থান, অনুচ্ছেদঃ ধীরস্থীরভাবে মসজিদে আগমণ করা।
[৯] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ কঠিন গরমে যাকে ছাঁয়া দেয়া হচ্ছিল তার সম্পর্কে নবী ব এর বাণী: “সফর অবস্থায় ছিয়াম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।” মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: পাপের সফর না হলে রামাযান মুসাফিরের রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা উভয়টিই বৈধ।
[১০] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: পাপের সফর না হলে রামাযান মুসাফিরের রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা উভয়টিই বৈধ।
[১১] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ নং ৩৫। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সফরে রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা ইচ্ছাধীন।
[১২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ নং ৩৫। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সফরে রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা ইচ্ছাধীন।
[১৩] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ কঠিন গরমে যাকে ছাঁয়া দেয়া হচ্ছিল তার সম্পর্কে নবী ব এর বাণী: “সফর অবস্থায় ছিয়াম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।” মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: পাপের সফর না হলে রামাযান মাসে মুসাফিরের রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা উভয়টিই বৈধ।
[১৪] . বুখারী, অধ্যায়ঃ মাগাযী, অনুচ্ছেদ: রামাযান মাসে মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ।
[১৫] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: পাপের সফর না হলে রামাযান মাসে মুসাফিরের রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা উভয়টিই বৈধ।
[১৬] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ কঠিন গরমে যাকে ছাঁয়া দেয়া হচ্ছিল তার সম্পর্কে নবী ব এর বাণী: “সফর অবস্থায় ছিয়াম পালন করা কোন পূণ্যের কাজ নয়।” মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: পাপের সফর না হলে রামাযান মাসে মুসাফিরের রোযা রাখা ও ভঙ্গ করা উভয়টিই বাধা।
[১৭] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ওমরাহ্, অনুচ্ছেদঃ ক্লান্তি অনুযায়ী ওমরার ছওয়াব। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হজ্জ, অনুচ্ছেদঃ নেফাস বিশিষ্ট নারীদের ইহরাম করা।
[১৮] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ভুলক্রমে পানাহার করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ভুলক্রমে পানাহার করলে রোযা ভঙ্গ হবে না।
[১৯] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুচ্ছেদঃ গর্হিত কাজে বাধা দেয়া ঈমানের অন্তর্ভূক্ত।
[২০] . আবু দাঊদ, অধ্যায়: নাক ঝাড়া, ১৪২। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: নাকে পানি নেয়ায় বাড়াবাড়ি করা। ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা।
[২১] . বুখারী মুআল্লাক সনদে, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: রোযাদারের কাঁচা ও শুকনা মেসওয়াক ব্যবহার করা।
[২২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: রোযাদারের কাঁচা ও শুকনা মেসওয়াক ব্যবহার করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: মেসওয়াক করা।
[২৩] . ধুমপানের ক্ষেত্রে যেহেতু ধুঁয়াটাই নাকের মধ্যে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে এজন্য তা দ্বারা রোযা ভঙ্গ হবে। অবশ্য ধুমপান মূলতঃ হারাম কাজ। যা থেকে বেঁচে থাকা মুসলমান তো অবশ্যই প্রত্যেক মানুষের জন্য অপরিহার্য।
[২৪] . আবু দাঊদ, অধ্যায়: নাক ঝাড়া, ১৪২। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা।
[২৫] . ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ছিয়ামের ফযীলত।
[২৬] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক সৎকাজকে সাদকা বলা হয় তার বর্ণনা।
[২৭] . মযীঃ, স্ত্রী শৃঙ্গার করার কারণে বা যে কোন ভাবে উত্তেজিত হলে লিঙ্গের আগায় যে আঠালো পানি বের হয় তাকে আরবীতে মযী বলা হয়। এতে ওযু আবশ্যক হয় গোসল নয়।
[২৮] . আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃত বমি করা। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করার বর্ণনা।
[২৯] . বুখারী সনদ বিহীন মুআল্লাক বর্ণনা করেন। অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের শিঙ্গা লাগানো ও বমি করা। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের শিঙ্গা লাগানো ঠিক না।
[৩০] . বুখারী, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতীর ছিয়াম পালন না করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুচ্ছেদঃ নেক কাজ কম হলে ঈমানও কমে যায়।
[৩১] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্র বাণী, ‘প্রত্যুষে (রাতের) কালো রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর।’ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ফজর উদিত হলেই ছিয়াম শুরু হয়ে যাবে।
[৩২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ভুলক্রমে পানাহার করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ভুলক্রমে পানাহার করলে রোযা ভঙ্গ হবে না।
[৩৩] . ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়ঃ তালাক, অনুচ্ছেদঃ ভুল ক্রমে এবং বাধ্য করে তালাক।
[৩৪] . অর্থাৎ- রোযা ভঙ্গের বৈধ কোন কারণ তার সামনে নেই। যেমন সে সফরেও নয়, অসুস্থও নয়।
[৩৫]. বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রামাযানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করলে..। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের রামাযানের দিনে স্ত্রী সহবাস কঠোরভাবে হারাম।
[৩৬] . আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করার বর্ণনা।
[৩৭] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ রোযাদারের গোসল করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ নাপাক অবস্থায় ফজর হয়ে গেলেও ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে।
[৩৮] . আবু দাঊদ, অধ্যায়: নাক ঝাড়া, ১৪২। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ নাকে পানি নেয়ায় বাড়াবাড়ি করা। ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা।
[৩৯] . আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ তৃষ্ণায় রোযাদারের মাথায় পানি ঢালা।
[৪০] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: নবী ব এর বাণী তোমাদেরকে যেন বাধা না দেয়...। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ফজর হলেই ছিয়াম শুরু হয়ে যায়।
[৪১] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ইলম, অনুচ্ছেদঃ “অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক।”
[৪২] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ সফরে রোযা রাখা ও রোযা ভঙ্গ করা।
[৪৩] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ছিয়াম রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যা এবং তার কারবার পরিত্যাগ করে না। হাদীছটির বাক্য ইবনু মাজাহ্ থেকে নেয়া হয়েছে।
[৪৪] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: ছিয়াম রেখে যে ব্যক্তি মিথ্যা এবং তার কারবার পরিত্যাগ করে না। হাদীছটির বাক্য ইবনু মাজাহ্ থেকে নেয়া হয়েছে।
[৪৫] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: নবী ব রামাযানে সর্বাধিক দানশীল হতেন।
[৪৬] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুরের বরকত। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুরের ফযীলত।
[৪৭] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: দ্রুত ইফতার করা। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুরের ফযীলত।
[৪৮] . আবু দাউদ, অনুচ্ছেদঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইফতারের দু’আ। তবে এই দু’আটির সনদ (সূত্র) দুর্বল তাই উহা গ্রহণযোগ্য নয়। (দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল, ৪/৩৬-৩৯ পৃঃ যঈফ আবু দাঊদ, আলবানী)
[৪৯] . আবু দাউদ, অনুচ্ছেদঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ইফতারের দু’আ। (এ হাদীছটি ছহীহ, দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৯২০)
[৫০] . [হাদীছ ছহীহ] ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়ঃ ছিয়াম হা/ ১৭৪৩, ১৭৫৩।
[৫১] . বুখারী, অধ্যায়ঃ আযান, অনুচ্ছেদঃ আযান শুনলে কি বলতে হয়। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছালাত, অনুচ্ছেদঃ মুআয্যিনের অনুরূপ জবাব দেয়া মুস্তাহাব।
[৫২] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখা মুস্তাহাব।
[৫৩] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: কাযা ছিয়াম কখন আদায় করবে।
[৫৪] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখা মুস্তাহাব।
[৫৫] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ আশুরার রোযা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ আশুরার রোযা।
[৫৬] . মুসলিম, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক মাসে তিনটি এবং আরাফার দিবসে রোযা রাখা মুস্তাহাব।
[৫৭] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ শাবানের রোযা।
[৫৮] . কিন্তু নির্দিষ্ট আকারে শুধুমাত্র মধ্য শাবানে অর্থাৎ ১৫ তারিখে রোযা রাখা বিদআত। আমাদের দেশে এটাকে শবে বরাতের রোযা বলা হয়। কেননা এর ভিত্তি ছহীহ্ সুন্নাহ্ থেকে প্রমাণিত নয়। ইবনু মাজার বর্ণনায় বলা হয়ঃ “মধ্য শাবান এলে তোমরা রাত্রিতে ইবাদত করবে ও দিনে রোযা পালন করবে..।” এ হাদীছটি জাল। কেননা এর সনদে ইবনু আবী সাবরাহ্ নামক জনৈক বর্ণনাকারী রয়েছে। সে হাদীছ জাল করত। (আহকামু রজব ওয়া শাবান।)- অনুবাদক।
[৫৯] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম, অনুচ্ছেদঃ সাহুরের সময় পর্যন্ত ছিয়াম মিলিত করা।
[৬০] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: দ্রুত ইফতার করা। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুর খাওয়ার ফযীলত।
[৬১] . বুখারী, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: সাহুর খাওয়ার বরকত; কিন্তু সাহুর খাওয়া ওয়াজিব নয়। মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: মিলিতভাবে রোযা রাখা নিষেধ।
[৬২] . মুসলিম, অধ্যায়: ছিয়াম, অনুচ্ছেদ: এককভাবে জুমআর দিন রোযা রাখা মাকরূহ।
[৬৩] . রসূলুল্লাহ্ ব বলেন, “নিশ্চয় জুমআর দিন ঈদের দিন।” (আহমাদ হা/৭৬৮২)
[৬৪] . রাসূলুল্লাহ্ ব বলেন, “তোমাদের কেহ যেন শুধুমাত্র জুমআর দিবসে রোযা না রাখে। তবে এর পূর্বে একদিন বা পরে একদিন মিলিয়ে রোযা রাখতে পারে।” (বুখারী, অধ্যায়ঃ ছিয়াম হা/১৮৪৯)
[৬৫] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ই‘তেকাফ, অনুচ্ছেদঃ এ‘তেকাফ করা।
[৬৬] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ই‘তেকাফ, অনুচ্ছেদঃ শেষ দশকে এ‘তেকাফ করা। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ই‘তেকাফ, অনুচ্ছেদঃ রামাযানের শেষ দশকে এ‘তেকাফ করা।
[৬৭] . বুখারী, অধ্যায়ঃ ই‘তেকাফ, অনুচ্ছেদঃ শেষ দশকে এ‘তেকাফ করা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন